নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি, ২৬ মার্চ: লকডাউনের শুরু থেকেই মানুষ একদিকে যেমন আতঙ্কে প্রায় প্রতিদিনই যত বেশি সম্ভব খাদ্য সংগ্রহের জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছে, তেমনই প্রয়োজনের থেকে বেশি খাদ্যসামগ্রী মজুত করার প্রবণতাও প্রবল। একটাই কারণ, আগামীদিনে যদি সঙ্কটের সৃষ্টি হয়, তখন মোকাবিলা করা যাবে। এই প্রবণতা লক্ষ্য করে কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকার বারবার বলেছে, দেশে খাদ্যের কোনও অভাব নেই। বরং এভাবে আতঙ্কিত হয়ে অতিরিক্ত ক্রয় করা হলে অযথা অস্থিরতা তৈরি হবে। এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় সরকার ঘোষণা করেছে, নতুন করে দেশের ৮০ কোটি গরিব মানুষের জন্য অতিরিক্ত খাদ্যশস্য বণ্টনের। গণবণ্টন ব্যবস্থার মাধ্যমে তা দেওয়া হবে। এবং আজ অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন জানিয়েছেন, আজ থেকেই এই নিয়ম চালু হয়ে যাচ্ছে। এতদিন একজন গরিব মানুষ ৫ কেজি করে চাল ও গম পেয়ে এসেছেন যথাক্রমে ২ টাকা ও ৩ টাকা কেজি দরে। আজ আরও অতিরিক্ত ৫ কেজি বিনামূল্যে দেওয়ার ঘোষণা করা হয়েছে। এই নিয়ম চালু থাকবে আগামী তিন মাসের জন্য। অর্থাৎ এক ধাক্কায় চাল গমের চাহিদা বিপুল বাড়তে চলেছে গণবণ্টনে। তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, ভারতের খাদ্যভাণ্ডারের চিত্রটি এখন কেমন? জানা যাচ্ছে, ১ মার্চের হিসেবে ভারতীয় খাদ্য নিগমের গোডাউনে থাকা চাল এবং গমের পরিমাণ ৭৭০ লক্ষ টন। যা প্রয়োজনের তুলনায় আড়াই গুণ বেশি। একমাস ধরে গোটা ভারতকে প্রদান করতে হলে চাল ও গমের প্রয়োজন ২১০ লক্ষ টন। পাশাপাশি আগামী মাসেই আসতে চলেছে নতুন ফসল। নতুন সাপ্লাই।
১৯ মার্চের হিসেব বলছে, ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল মার্কেটিং ফেডারেশনের (নাফেড) কাছে ২১ লক্ষ টন ডালের স্টক আছে। পাশাপাশি চানা, মসুর এবং মটর ডালের নতুন জোগান আসা শুরু হয়েছে। সুতরাং খাদ্যশস্যের প্রোডাকশন তথা ভাণ্ডার নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। সমস্যা হল সাপ্লাই তথা সরবরাহ ব্যবস্থা। কারণ প্রধানত যারা এই সাপ্লাই চেনের সঙ্গে যুক্ত, সেই শ্রমিকের দল ক্রমেই নিজেদের গ্রামে বা বাসস্থালে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে লকডাউনের জেরে। পাশাপাশি পরিবহণও বন্ধ। সুতরাং প্যাকেজিং এবং বহনের মতো কর্মী ও পরিবহণ পাওয়া সমস্যা হতে পারে। একইসঙ্গে আগামী মাসে যে কৃষিকার্য শুরু হবে নতুন ফসল, সব্জির ক্ষেত্রে, সেই কাজেও বড়সড় সঙ্কট আসছে। প্রথমত লকডাউনের জেরে কৃষিকাজও বন্ধ। দ্বিতীয়ত কৃষিতে প্রয়োজনীয় সার, বীজ এবং কীটনাশক সরবরাহ হয় শহর বা গঞ্জ থেকে। সেই সাপ্লাই লাইন বন্ধ। এই অবস্থায় লকডাউনের সময়সীমা যদি ২১ দিন পেরিয়ে দীর্ঘায়িত হতে থাকে, তা হলে সঙ্কটের সম্ভাবনা হতেই পারে।