বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
তারই মধ্যে আজ ছিল হিংসা পরবর্তী প্রথম জুম্মাবার। তাই গত দু’দিনের তুলনায় ব্রিজপুরী, মুস্তাফাবাদ, চান্দবাগ এলাকায় চোখে পড়ল বাড়তি নিরাপত্তা। নিরাপদ নামাজ নিশ্চিত করাই ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনীর উদ্দেশ্য। কিন্তু উপদ্রুত ব্রিজপুরী এলাকার মাঝে থাকা ফারুকিয়া জামা মসজিদই তো তছনছ! জ্বলে গিয়েছে ধর্মীয় কিতাব। তারই মধ্যে রাস্তাতেই চলল আল্লার আরাধনা। নামাজে নাগরিকরা অংশ নিল ভয়ে ভয়ে।
চারদিন কেটে গেলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। আতঙ্কে ভালো নেই মুস্তাফাবাদ। স্বস্তিতে নেই ব্রিজপুরী। মাঝে একটা নালা। নোংরা, দুর্গন্ধময়। তারই একপাশে ব্রিজপুরী, অন্যদিকে মুস্তাফাবাদ। শাহিনবাগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এখানেও চলছিল সিএএ, এনআরসি আর এনপিআর বিরোধী বিক্ষোভ। মিডিয়ার তেমন প্রচারে আসেনি। তবে এলাকার বাসিন্দাদের যোগদান ছিল যথেষ্ট। সিএএ, এনআরসি, এনপিআর বিরোধী স্লোগানে যেমন ভরে রয়েছে এলাকার দেওয়াল, পাশাপাশি মসজিদের সামনেই জ্বলজ্বল করছে ‘হম এক হ্যায়।’
একইসঙ্গে লেখা, ‘শিক্ষা হ্যায় তো সওয়াল হ্যায়।’ কিন্তু সোমবার মৌজপুর-বাবরপুর মেট্রো স্টেশনের সামনে মৌজপুর চকে গুলি চলার খবর ছড়াতেই উঠে গিয়েছে বিক্ষোভ। ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছিল স্কুল। তবে কি অশনি সঙ্কেত পেয়েছিল ব্রিজপুরী? উত্তর খুঁজছে উত্তর-পূর্ব দিল্লি। সদ্ভাব আর সহজ মানবিক জীবনযাপনেই অভ্যস্ত ছিল এলাকাটা। কিন্তু কোন এক অমঙ্গলবার্তায় যেন আমচকাই অচেনা হয়ে গিয়েছে গত মঙ্গলবার থেকে।
দুপুর থেকে রাত তাণ্ডব চালিয়েছে মুখে কাপড় ঢাকা উগ্র উন্মত্ত জনতা। যদিও তাদের চেনে না ব্রিজপুরীর পিপলওয়ালি গলির কিষাণ স্বরূপ, দলীপ সিংরা। জানেন না, মুস্তাফাবাদের নাদিম, সেলিম মালিকরাও। বলছেন, যারা সেদিন রক্ত হিম করা তাণ্ডব চালাল, তারা বহিরাগত। এলাকায় আগে দেখিনি। গর্বের সঙ্গে এও জানালেন, মুস্তাফাবাদে মঙ্গলবার যে তাণ্ডব চলেছে, ভাগীরথী বিহারের গলিতে মন কামেশ্বর মন্দিরে তার কোনও আঁচ পড়তে দিইনি। গিয়ে দেখে আসুন, মিথ্যে বলছি কি না।
আধা সামরিক বাহিনীর প্রহরা বজায় থাকায় গলির মোড়ে, একটু ভিতরে গুটিকয় দোকান খুলেছে। তবে কোথাও আধ-খোলা, কোথাও প্রয়োজনীয় বিকিকিনি চলছে পিছনের দরজা দিয়ে। মুস্তাফাবাদের ভাগীরথী বিহারের তব্বায়া মসজিদে অন্য শুক্রবারে এত ভিড় থাকে না। আজ ছিল বেশি। অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির জেরে এলাকার বেশিরভাগই কাজে বেরতে পারছেন না। তাই জড়ো হয়েছে বেশি। মসজিদে মসজিদে চলেছে বিশেষ প্রার্থনা। দোয়া করা হয়েছে শান্তি আর স্বস্তির। যদিও নামাজের সময়টুকুই ছাড়। তারপরই গলির মুখে, মহল্লার মোড়ে জটলা দেখলেই সিআরপিএফের জওয়ানদের থেকে শুনতে হচ্ছে, ‘ইঁহা ভিড় মাত করো। নামাজ হো গয়া তো চলে যাও।’ আধা সামরিক বাহিনীর সেই সতর্কবার্তায় আপত্তি তোলেনি কেউই। কেবল যেতে যেতে ম্লান মুখে স্বগতোক্তির স্বরে বলে গেল, ‘আগেই যদি এই সরকার এই উদ্যোগ নিত, তাহলে আজকের এই দিন দেখতে হত না!’