গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
গোকুলপুরী পেরিয়ে করওয়াল নগর, শিববিহারে যাওয়ার পথে জহুরি এনক্লেভেই রাস্তা আটকে দিয়েছে পুলিস। সীমান্ত এলাকা। একটি গলির পরেই উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদ। তাই যেতে গিয়ে বাধা পেতে হল সামান্য। গাড়ি নিয়ে এগনো মানা। তবে হেঁটে যতই এগিয়েছি, ততই বাকরুদ্ধ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা চাক্ষুস হল। ধ্বংসস্তূপে পরিণত উত্তর-পূর্ব দিল্লির করওয়াল নগর, শিববিহার এলাকা। আতঙ্ক আর আশঙ্কার আবহে দরজা, জানলা বন্ধ করে দমবন্ধ করা ঘরেই দিন কাটাচ্ছে এলাকার মানুষ। জানলা দিয়ে মুখ বাড়ালেই আধা সামরিক বাহিনীর জওয়ানদের নির্দেশ, ‘মু অন্দর কর লো।’
এলাকা পর এলাকা তাণ্ডবে তছনছ! হিংসার হিংস্র ছায়ামূর্তিগুলি সোমবার রাত থেকেই দাপিয়ে বেড়িয়েছে গোটা এলাকা। বলছে, চোখে মুখে আতঙ্ক লেগে থাকা বাসিন্দারা। মেন রোডের একদিকে নালা। অন্যদিকে, দোকান। বাড়ি। মন্দির। মসজিদ। কয়েকটি দোকানে এখনও নেভেনি আগুন। কোথাও জ্বলছে দাউদাউ করে। কোথাও ধিকিধিকি। পোড়া গন্ধ আর শুনাশান পরিবেশে শ্মশানের চিত্র। রাজধানী শহরের যে ঝাঁ চকচকে এলাকায় দিল্লির হিংসা নিয়ে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের বয়ান আর বাকযুদ্ধ চলছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক বলেই দাবি করছে সরকার, তার থেকে মাত্র ১৭ কী ১৮ কিলোমিটার দূরে এই শিববিহার, করওয়াল নগর। অথচ পুরো অঞ্চল যেমন থমকে গিয়েছে। প্রাণহীন। স্তব্ধ।
জাফরাবাদে সিএএ বিরোধীদের বিক্ষোভ শেষ। গতকাল রাতেই বিক্ষোভকারীদের তুলে দিয়েছে আধা সামরিক বাহিনী আর পুলিস। মৌজপুর মোড়েও বসতে দেওয়া হয়নি সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন, এনআরসি, এনপিআরের সমর্থনকারীদের। যদিও মৌজপুর চকে মন্দিরের গায়ে নাথুরাম গোডসে, ইয়েস সিএএ, এনআরসি লেখা এখনও রয়েছে একইরকম। পরিস্থিতি সামাল দিতে নেমেছে র্যা ফ, এসএসবি। তবে তারই মধ্যে মৌজপুরে মার খেয়েছে কয়েকজন। রক্তাক্ত চেহারায় কোনওরকমে পালিয়ে এসেছে। পুলিস উদ্ধার করে দ্রুত পাঠাল সামনের হাসপাতাল গুরু তেগ বাহাদুরে।
আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন হওয়ায় মৌজপুর-বাবরপুর এলাকার বাসিন্দারা আজ খানিক সাহস করে ঘর থেকে বেরিয়েছেন। তবে বেশিরভাগই ঘর ছাড়া। আতঙ্কে দরজায় তালা ঝুলিয়ে চলে গিয়েছে অন্যত্র। রবিবার রাত থেকে হিংসা বাড়লেও আধা সামরিক বাহিনী নামানো হয়েছে মঙ্গলবার। আজ সকাল থেকে দফায় দফায় চোখে পড়ল ফ্ল্যাগ মার্চ। জাফরাবাদ, মৌজুপর-বাবরপুর এলাকার মধ্য দিয়ে লোনি যাওয়ার রাস্তার দু’পাশে কিছুটা ছাড়া ছাড়াই বন্দুকধারী আধা সামরিক বাহিনী। দোকানপাট বন্ধ। খুলছে না স্কুল। শুনশান রাস্তা।
সশস্ত্র আধা সামরিক বাহিনীর পাশাপাশি মজুত দিল্লি পুলিসও। থেকে থেকেই এলাকার যেখানেই জটলা বাঁধছে, সেদিকেই হাতে ধরা কাঁদানে গ্যাসের শেল বন্দুকটি উঁচিয়ে ধরে গলির মধ্যে ঢুকে যেতে বলছে পুলিস। তারই মধ্যে কথার অমান্য করতে গিয়ে লাঠি পেটা খেল দুই কিশোর। ‘তব সে বল রাহা হুঁ, শুনাই নেহি দে রহা হ্যায়?’ বলেই ঘা দিল পুলিস। তারাও দৌড়ল পড়ি কী মরি করে। আজ অনেকটাই ছন্দে ফিরছে দিল্লি। চাপা আতঙ্ক আছে ঠিকই, তবে কাটছে হিংসার আশঙ্কা। ভরসা আধা সামরিক বাহিনী।