সমৃদ্ধ দত্ত, নয়াদিল্লি, ২২ ফেব্রুয়ারি: স্টেজ হবে রিভলভিং। থাকবে দুটি পোডিয়াম। দুই রাষ্ট্রপ্রধানের জন্য। ঠিক যেখানে ক্লাবহাউস প্যাভিলিয়ন তার নীচেই হবে মঞ্চ। আর মোট চারটি জায়ান্ট স্ক্রিন থাকবে। যাতে প্রত্যেক দর্শক একেবারে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নরেন্দ্র মোদির মুখের রেখার অভিব্যক্তিও স্পষ্ট দেখতে পায়। আমেদাবাদ শহর থেকে বেশ কিছুটা বাইরে মোতেরা স্টেডিয়াম। সেখানেই আয়োজন হয়েছে ‘নমস্তে ট্রাম্প’ ইভেন্ট। বলা যেতে পারে আমেরিকার হিউস্টন স্টেডিয়ামে গত বছর হওয়া ‘হাউডি মোদি’ ইভেন্টের অ্যাওয়ে ম্যাচ। মোতেরা স্টেডিয়ামে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রবেশ ব্যবস্থাটা অভিনব। যাতে বেশি হাঁটতে না হয়, তাই ক্লাব হাউসের প্রায় মধ্যেই ঢুকে যাবে ‘দ্য বিস্ট’। এটাই আমেরিকার প্রেসিডেন্টদের গাড়ির নাম। ঠিক পিছনের গাড়িও ঢুকবে বিস্টের সঙ্গেই। কারণ সেটায় থাকে চারজন স্পেশাল সার্ভিস এজেন্ট। যাঁরা কখনওই প্রেসিডেন্টের পিছু ছাড়েন না। তাঁদের হাতে একটা স্যুটকেস। স্যুটকেসের নাম ‘ফুটবল’। ওটা কোডনেম। ওটাই হল আমেরিকার নিউক্লিয়ার কমান্ড। মোতেরা স্টেডিয়ামে প্রায় ১ কোটি মানুষ তাঁকে স্বাগত জানাতে আসবে বলে ডোনাল্ড ট্রাম্প নিউইয়র্কে ঘোষণা করলেও সেটা কেউ সিরিয়াসলি নেয়নি। কারণ, ট্রাম্প অতিশয়োক্তি করেই থাকেন। আমেদাবাদ শহরের জনসংখ্যাই ৮০ লক্ষের কম। তবে মোতেরা স্টেডিয়াম যে বিপুল জনস্রোতে পূর্ণ হবে সন্দেহ নেই। ট্রাম্পের সফর ব্যাপারটা এতই অভিনব যে, আমেদাবাদে একটি সরকারি কমিটি পর্যন্ত তৈরি হয়ে গিয়েছে, যার নাম ট্রাম্প ভিজিট কমিটি। মোতেরা স্টেডিয়ামে আসার আগে একটা রোড শো হবে। এখানেই থাকছে একটি সংশয়। যে সংশয় এই শেষ মুহূর্তেও কাটেনি। সেটা হল ডোনাল্ড ট্রাম্প কি সবরমতী আশ্রমে যাবেন? কর্মসূচি অনুযায়ী সেরকমই কথা রয়েছে। কিন্তু রোড শো এবং মোতেরা স্টেডিয়ামে দুই রাষ্ট্রপ্রধানের বক্তব্য কতক্ষণ ধরে চলবে সেটাই চিন্তা। চিন্তার কারণ হল, ট্রাম্পের স্ত্রী মেলানিয়া ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন, তিনি আগ্রায় পৌঁছতে চান সূর্যাস্তের আগে। সূর্যাস্তের মুহূর্তে তিনি থাকতে চান তাজমহলের সামনে। আর এখানেই সমস্যা। কারণ নমস্তে ট্রাম্প ইভেন্ট সমাপ্ত করে সবরমতী আশ্রমে গেলে সেখানে হৃদয়কুঞ্জে মহাত্মা গান্ধীর ঘরে কিছুটা সময় কাটিয়ে আগ্রা যেতে দেরি হবে। সুতরাং মহাত্মা গান্ধী নাকি শাহজাহান, কার আকর্ষণকে বেশি অগ্রাধিকার দেবেন ট্রাম্প দম্পতি, সেটা এখনও বহস্যই। যদিও তাঁরা চান দুটিই দেখতে। সবরমতী আশ্রমের সামনে গতকালই বিরাট বড় হোর্ডিং লাগানো হয়েছে, যেটায় লেখা-‘ওয়েলকাম প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প টু দ্য ল্যান্ড অফ মহাত্মা’। দুপুর থেকে বিকেল, কয়েক ঘণ্টায় এভাবেই সমাপ্ত হবে আমেদাবাদ সফর। এবার আগ্রা।
ততক্ষণে ট্রাম্পকে স্বাগত জানাতে আগ্রার চিত্রটি কেমন? শাহজাহান আর মমতাজমহলের আসল সমাধি দুটি তাজমহলের গর্ভগৃহে রাখা। বাইরে রাখা হয়েছে দুটি কৃত্রিম স্মারক। দর্শনার্থীরা সাধারণত সেটাই দেখেন। উরস উপলক্ষে মাত্র তিনদিন খোলা থাকে ওই আসল সমাধির দ্বার। সরু একটি সিঁড়ি দিয়ে নামতে হয় প্রায়ান্ধকার সেই ঘরে। তবে সোমবার সন্ধ্যায় ট্রাম্প দম্পতি তাজমহল এবং ওই কৃত্রিম স্মারক সমাধিই দেখবেন। আর তাই এই প্রথম ওই কৃত্রিম সমাধিকে মাটি দিয়ে বিশেষ প্যাক লাগিয়ে পরিচ্ছন্ন করা হল গতকাল। বিশেষ ইলেকট্রিক গাড়িতে তাজমহলে ঢুকতে হবে তাঁদের। আগ্রায় কিছুক্ষণ সময় কাটাবেন তাঁরা। ভারত দর্শন পর্যটনের অংশটি এখানেই শেষ। পরদিন মঙ্গলবার দিল্লি। এবং সেটাই প্রকৃতপক্ষে আসল ইভেন্ট। কূটনৈতিক এবং স্ট্র্যাটেজিক তো বটেই, বাণিজ্যিকও। এভাবে মেয়ে জামাই স্ত্রী সহকারে কোনও রাষ্ট্রে খুব কমই যান ট্রাম্প। সঙ্গে আবার একঝাঁক সচিব, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি আধিকারিক এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও ব্রায়ান। সুতরাং অবশ্যই হাই প্রোফাইল সফর হতে চলেছে এবার।