গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বেঙ্গালুরুতে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বিরোধী প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে উপস্থিত ছিলেন অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (এআইএমআইএম) নেতা আসাদউদ্দিন ওয়াইসি। ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন অমূল্য লিওনা নামে বছর উনিশের ওই তরুণীও। মঞ্চে বক্তব্য রাখতে উঠেই মাইক নিয়ে তিনি ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ স্লোগান দিতে শুরু করেন। তিনি আরও কিছু বলতে চাইছিলেন, কিন্তু তার আগেই মঞ্চে উপস্থিত আসাদউদ্দিন সহ অন্যরা তাঁকে বাধা দেন। মাইক্রোফোনটি কেড়ে নেওয়ারও চেষ্টা করেন। ওই ঘটনার ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে আসাদউদ্দিনকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘এটা কী বলছেন আপনি?’ কিন্তু, পরক্ষণেই মাইক ছাড়িয়ে নিয়ে ওই তরুণী চিৎকার করে বলে ওঠেন, ‘হিন্দুস্থান জিন্দাবাদ। এই হিন্দুস্থান জিন্দাবাদ আর পাকিস্তান জিন্দাবাদের মধ্যে পার্থক্য হল...’, আরও কিছু বলতে চাইছিলেন, তবে তার আগেই তাঁকে মঞ্চ থেকে টেনে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
জানা গিয়েছে, গত সপ্তাহে ফেসবুকে এরকমই একটি পোস্ট করেছিলেন অমূল্য। সেখানে তিনি ভারত সহ তার সমস্ত প্রতিবেশী দেশের আগে ‘লং লিভ’ লিখে জানিয়েছিলেন, ‘যে দেশই হোক না কেন— সবাই দীর্ঘজীবী হোক।’ কন্নড় ভাষায় লেখা সেই পোস্টে তিনি আরও জানান, অন্য দেশকে জিন্দাবাদ বললেই কেউ সেই দেশের লোক হয়ে যায় না। আইন অনুযায়ী আমি ভারতের নাগরিক। তাই এই দেশের সম্মান করা এবং দেশবাসীর জন্য কাজ করাটা আমার কর্তব্য। আর আমি সেই কর্তব্য পালন করবই।
এদিকে, ঘটনার পরই এআইএমআইএম-প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়াইসিকে নিশানা করে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছে বিজেপি। কর্ণাটক বিজেপির ট্যুইটার হ্যান্ডেলে লেখা হয়েছে, সিএএ বিরোধী আন্দোলন হল পাকিস্তান এবং কংগ্রেস পরিচালিত দেশবিরোধী শক্তিগুলির যৌথ প্রয়াসের ফসল। বেঙ্গালুরুর ঘটনাই তার প্রমাণ। যারা পাকিস্তানকে সমর্থন করেন, তারা সেখানেই চলে যান।’ যদিও, ড্যামেজ কন্ট্রোলে নেমে এআইএমআইএম সাংসদ ওয়াইসি জানান, অমূল্যর সঙ্গে তাঁর দলের কোনও সম্পর্ক নেই। তিনি বলেন, ‘আমি বা আমার দলের সঙ্গে ওই তরুণীর কোনও সম্পর্ক নেই। ওঁকে আমন্ত্রণ জানানোটা আয়োজকদের উচিত হয়নি। আগে জানলে আমি সেখানে যেতামই না। আমরা ভারতের পক্ষে। কোনও ভাবেই শত্রুদেশ পাকিস্তানকে সমর্থন করব না। ভারতকে বাঁচানোর জন্যই আমাদের এই (সিএএ বিরোধী) আন্দোলন।’
এদিকে, অভিযুক্ত তরুণীর বাবাও মেয়ের আচরণের তীব্র নিন্দা করেছেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি জানান, ‘অমূল্য অন্যায় করেছে। সম্প্রতি কিছু মুসলিমের সঙ্গে মেলামেশা শুরু করেছিল। আমার কথা শুনতে চাইত না।’ এদিকে, বেঙ্গালুরুর ওই প্রতিবাদ সভা শেষের পরই কয়েকজন অজ্ঞাতপরিচয় লোকজন অমূল্যর বাবাকে হেনস্তা করেন বলে অভিযোগ। এমনকী, রাতের দিকে তাঁদের চিকমাগালুরের বাড়িতে পাথরও ছোঁড়া হয়। এই ঘটনায় একটি ডানপন্থী সংগঠনের সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে বলে পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে। পাশাপাশি ওই চত্বরে পুলিসি নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বি এস ইয়েদুরাপ্পা আবার অমূল্যর সঙ্গে মাওবাদী যোগের অভিযোগ তুলেছেন। শুক্রবার সকালে তিনি বলেন, ‘ওই তরুণীর বাবা নিজেই বলেছেন— ওর হাত-পা ভেঙে দিন। ওর জামিন পাওয়া উচিত নয়। আমি ওকে বাঁচানোর চেষ্টা করব না।’ এরপরই মুখ্যমন্ত্রীর সংযোজন, ‘দ্বিতীয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, অমূল্যর মতো তরুণীদের কারা তৈরি করছে, তা জানতে তদন্ত শুরু হয়েছে। আপাতত ওই তরুণীর সঙ্গে নকশালদের যোগাযোগ থাকার প্রমাণ মিলেছে। তরুণীর সঙ্গে তাঁর নেপথ্যে থাকা ওই সংগঠনগুলির বিরুদ্ধেও কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’