কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
পুলিস জানিয়েছে, কোয়েম্বাটোর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে তামিলনাড়ুর তিরুপুর জেলার অবিনাশী শহরে দুর্ঘটনাটি ঘটে। কেএসআরটিসি ওই লাক্সারি নাইট সার্ভিস বাসটি বেঙ্গালুরু থেকে তিরুবনন্তপুরমের এর্নাকুলামে যাচ্ছিল। যাত্রী ছিলেন ৪০ জন। ভোর তখন ৩টে ১৫ মিনিট। কোয়েম্বাটুর-সালেম হাইওয়েতে উল্টোদিক থেকে আসা একটি ট্রাকের চাকা ফেটে যাওয়ায় সেটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। ডিভাইডার ভেঙে বাসটিকে ধাক্কা মারে। বাসের ডানদিকের অংশটি পুরোপুরি দুমড়েমুচড়ে যায়। বাইরে বেরনোর কোনও সুযোগই পাননি ডানদিকে বসে থাকা যাত্রীরা। জখম বাসযাত্রী করিশ্মার কথায়, ‘আমি বাসের বাঁদিকের একটি সিটে বসে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। বিকট আওয়াজে ঘুম ভাঙে। তখন দেখতে পাই আমার পাশের যাত্রীরা প্রায় পিষে গিয়েছেন। চেষ্টা করেও কেউ বেরতে পারছেন না।’ পায়ের গুরুতর চোট নিয়ে অ্যালেন নামে আর এক যাত্রী বলছিলেন, ‘বরাতজোরেই বেঁচে গিয়েছি। দ্রুতগামী ট্রাকটির ধাক্কায় প্রায় চিড়েচ্যাপ্টা অবস্থা হয়ে যায় যাত্রীদের।’ পুলিস ও স্থানীয় সূত্রেও জানা গিয়েছে, বাসের ডানদিকের যাত্রীরা প্রায় সকলেই পিষ্ট হয়ে মারা গিয়েছেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০। ঘটনায় মৃতদের পরিবারকে সমবেদনা জানিয়েছেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। সেই সঙ্গে রাজ্যের পরিববহণমন্ত্রী এ কে সাসেন্দ্রন এবং কৃষিমন্ত্রী ভি এস সুনীলকুমারকে ঘটনাস্থলে যাওয়ার নির্দেশ দেন তিনি।
মৃত বাসযাত্রীরা কেরলের পালাক্কাড জেলার বাসিন্দা। বেঙ্গালুরু থেকে তাঁরা বাড়ি ফিরছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর অফিস সূত্রে বলা হয়েছে, মৃতদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে জেলাশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জখম যাত্রীদের চিকিৎসার জন্য প্রশাসনকে সবরকম ব্যবস্থা নিতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সঙ্গে তামিলনাড়ু সরকারের সঙ্গেও সমন্বয় রেখে পরিস্থিতির মোকাবিলা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে কেরল সরকার। জানা গিয়েছে, জখম যাত্রীদের প্রথমে তিরুপুরের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে কয়েকজন যাত্রীকে কোয়েম্বাটোরের হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়।
দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে এদিন রাত পর্যন্ত স্পষ্ট কোনও ব্যাখ্যা দিতে পারেনি তামিলনাড়ু কিংবা কেরলের পুলিস-প্রশাসন। পালাক্কাড জেলা পুলিস সুপার শিব বিক্রম বলেছেন, ‘দুর্ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, ট্রাক কন্টেনারটি অত্যন্ত দ্রুত বেগে চলছিল। খুব সম্ভবত ট্রাকের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিলেন চালক। এর পিছনে হয় তিনি ঘুমিয়ে পড়েছিলেন, অথবা ট্রাকের টায়ার ফেটে গিয়েছিল। তদন্তে সবদিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মৃতদের সকলেরই পরিচয় জানা গিয়েছে। তাঁরা পালাক্কাডের বাসিন্দা।’
কেএসআরটিসতে দীর্ঘদিন ধরেই কর্মরত ছিলেন চালক ভি ডি গিরিশ এবং কন্ডাক্টর ভি আর বাইজুও। বেশিরভাগ সময়ই তাঁদের ডিউটি পড়ত রাত্রিকালীন বাস পরিষেবায়। ২০১৮ সালের ৩ জুন কর্তব্যরত অবস্থায় ডাঃ কবিতা নামে এক বাসযাত্রীকে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে এনেছিলেন দু’জনে। দুর্ঘটনায় দু’জনের মৃত্যুর খবর পেয়ে অত্যন্ত মর্মাহত তিনি। সে দিনের সেই ভয়ঙ্কর রাতের অভিজ্ঞতার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কবিতা বলছিলেন, ‘সেদিন রাতেও আমি বেঙ্গালুরু থেকে এর্নাকুলামগামী কেএসআরটিসি’র বাসে উঠেছিলাম। কিছুদূর যাওয়ার পর অসুস্থবোধ করতে থাকি। সম্ভবত হৃদযন্ত্রের কোনও সমস্যা হচ্ছে বুঝতে পারছি। তখন রাত প্রায় সাড়ে বারোটা। আমার অসুস্থতার কথা প্রথম বাইজুকে জানাই। তিনি বিষয়টি চালক গিরিশকে বলেন। তারপর আমার আর কিছু মনে নেই। যখন চোখ খুললাম, তখন দেখি হাসপাতালের বেডে শুয়ে। আমার পাশে বাইজু। সারারাত না ঘুমিয়ে আমার পাশেই বসেছিলেন উনি। বাড়ির লোক আসার পর বাইজু ও গিরিশ হাসপাতাল ছাড়েন। আজ তাঁদের এই পরিণতি হবে, তা ভাবতেই পারছি না।’ কেএসআরটিসি’র ম্যানেজিং ডিরেক্টর টোমিন জে থাচাঙ্কারিও বলছিলেন, ‘সেদিন গিরিশদের কর্তব্যের মাঝেও কর্তব্যপালন আমাদের সংস্থাকে গর্বিত করেছিল। ওঁদের মানবিক হৃদয়ের মৃত্যুকে মেনে নিতে বড্ড কষ্ট হচ্ছে।’