বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
মঙ্গলবার ভিড়ে ঠাসা সাংবাদিক বৈঠকে জেডি(ইউ) প্রধান তথা বিহারের মুখ্যমন্ত্রীকে পিতৃস্থানীয় হিসেবে উল্লেখ করলেও, বিজেপির সঙ্গে তাঁর নৈকট্যকে বিঁধতে ছাড়েননি প্রশান্ত। নীতীশের বিরুদ্ধে কখনও তিনি হাতিয়ার করলেন গান্ধী ও গডসেকে,আবার কখনও বিহারের অনুন্নয়নকে। শুরুটা করেন বিজেপি-জেডি(ইউ) জোটের ইস্যু দিয়ে। ক্ষমতার লোভে নীতীশ কুমার বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন দাবি করে প্রশান্ত জানান, গান্ধী ও গডসের আদর্শ কখনও হাত ধরাধরি করে চলতে পারে না। নীতীশকে তাঁর প্রশ্ন, ‘আপনি সবসময় বলেন যে গান্ধী, জেপি এবং লোহিয়ার মতাদর্শকে আপনি ছাড়তে পারবেন না। তাহলে কী করে আপনি গডসের আদর্শের সমর্থনকারীদের সঙ্গে হাত মেলাতে পারেন? দু’টো একসঙ্গে চলতে পারে না।’ এ নিয়ে বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর একাধিকবার কথা হয়েছে জানিয়ে প্রশান্ত আরও বলেন, ‘ওঁর নিজস্ব চিন্তাধারা ছিল, আমারও ছিল। আমাদের মধ্যে প্রচুর মতপার্থক্য হয়েছে। কিন্তু, একটি দলের নেতা হিসেবে আপনাকে আপনার অবস্থান স্পষ্ট করা উচিৎ।’ সম্প্রতি, নীতীশ কুমার মন্তব্য করেছিলেন, অমিত শাহের সুপারিশেই প্রশান্তর জেডি(ইউ)-তে অন্তর্ভুক্তি ঘটেছিল। এদিন সেই মন্তব্যেরও জবাব দেন প্রশান্ত। বলেন, ‘একজন ভোট-কৌশলী হিসেবে একাধিক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আমার পরিচয়ের কথা সবাই জানেন। আমি কখনও এটাকে গোপন করি না। কিন্তু অন্য কোনও দলের এজেন্ট হিসেবে আমি জেডি(ইউ)-তে যোগদান করিনি। যদি মিথ্যে কথা বলে নীতীশ কুমারের কোনও সুবিধা হয়, তাহলে আমার পিতৃস্থানীয় ব্যক্তি হিসেবে ওঁকে আমি সেটার অনুমতি দিচ্ছি।’
বিহারের উন্নয়ন নিয়ে নীতীশকে বিঁধতে গিয়ে প্রশান্ত কিশোর প্রশ্ন তোলেন, ‘কী উন্নতি হয়েছে বিহারের? বিশেষ মর্যাদা কি মিলেছে?’ তাঁর অভিযোগ, লালুপ্রসাদ যাদবের সরকার যাওয়ার পর নীতীশ কুমার রাজ্যের উন্নয়ন করেছেন ঠিকই। কিন্তু, এখনও তা অন্য অনেক রাজ্যের তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে। উন্নয়নের সূচকে বিহারের পরিস্থিতি এখনও ২০০৫ সালের মতোই রয়েছে। প্রশান্তের কথায়, ‘কী কী উন্নতি হয়েছে, তা মানুষকে জানাতে হবে।’ নীতীশের ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার প্রসঙ্গ তুলে তাঁর কটাক্ষ, ‘উনি ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার দাবি করেন। ওই সময়কালে তিনি পড়ুয়াদের বিনামূল্যে স্কুলের পোশাক ও সাইকেল দিয়েছেন বটে, কিন্তু তাদের জন্য সঠিক মানের শিক্ষা নিশ্চিত করতে পারেননি। রাস্তা তৈরি করেছেন ঠিকই, কিন্তু সাধারণ মানুষকে গাড়ি কেনার মতো সমৃদ্ধি দিতে পারেননি। বিদ্যুদয়ন করেছেন, কিন্তু অনেক মানুষেরই একটি বাল্ব ও পাখা চালানোর থেকে বেশি সামর্থ্য নেই।’ রাজ্য বাজেটের বরাদ্দ নিয়েও এদিন নীতীশের মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেছেন প্রশান্ত। তিনি জানান, রাজ্য বাজেট ৩০ হাজার কোটি থেকে বেড়ে বর্তমানে ২ লক্ষ কোটি হয়েছে বলে গর্ব করে থাকেন নীতীশ কুমার। এ নিয়ে তাঁর অবদানকে অস্বীকার না করলেও, মূল্যবৃদ্ধির কথা আমাদের ভুললে চলবে না।’ প্রশান্ত কিশোরের সাংবাদিক বৈঠকের তীব্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছে জেডি(ইউ)। দলীয় সাংসদ আরসিপি সিং জানান, নীতীশ কুমারের কারও সার্টিফিকেটের প্রয়োজন নেই। দলের আর এক নেতা অজয় আলোক বলেন, মানসিক অস্থিরতা থেকেই মানুষ এমন কথা বলে থাকে।
বিহারের মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণের পর্ব শেষ করে এদিন নিজের আগামী কর্মসূচিগুলি নিয়েও কথা বলেন প্রশান্ত কিশোর। তিনি জানান, আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে রাজ্যে ‘বাত বিহার কি’ কর্মসূচিতে নামবেন তিনি। এর জন্য স্বেচ্ছাসেবক নথিভুক্তকরণের প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। সেখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সক্রিয় কর্মী প্রায় ২ লক্ষ মানুষ নামও লিখিয়েছে ফেলেছেন বলে জানান প্রশান্ত।