সমৃদ্ধ দত্ত, নয়াদিল্লি, ২০ জানুয়ারি: কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় রদবদল হবে। সম্ভবত বাজেটে পরই বেশ কিছু নতুন মুখ অন্তর্ভুক্ত হতে চলেছে। সেই দিক থেকে লোকসভা ভোটের পর এটাই হবে মোদি মন্ত্রিসভার প্রথম রদবদল। আসন্ন রদবদলে সুরেশ প্রভুকে আবার মন্ত্রিসভায় ফিরিয়ে আনা হতে পারে। তিনি প্রথম মোদি সরকারে ছিলেন রেলমন্ত্রী এবং তারপর শিল্প বাণিজ্য মন্ত্রী। রাজ্যসভার এমপি স্বপন দাশগুপ্তকে মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে আনার জল্পনা শোনা যাচ্ছে। বিগত বছর থেকেই একের পর এক শরিক বিজেপির সঙ্গ ত্যাগ করেছে। তাই বিজেপি আসন্ন রদবদলে জোটে থাকা শরিকদের সন্তুষ্ট করার পথেই হাঁটতে চলেছে। সেই লক্ষ্যেই তামিলনাড়ুর এআইএডিএমকে এবং বিহারের সংযুক্ত জনতা দলকে (নীতীশ কুমারের দল) যুক্ত করা হবে মন্ত্রিসভায়। তেলুগু দেশম, শিবসেনা চলে যাওয়ার পর এনডিএ জোটে থাকা শরিকদলের মধ্যে অকালি দল এবং নীতীশ কুমারের সঙ্গেও বিজেপির তিক্ততার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত দিল্লি বিধানসভায় আসন সমঝোতা হচ্ছে না আকালি দল ও বিজেপির। তাই জোট ছিন্ন করে দিল্লি বিধানসভার লড়াইয়ে পৃথকভাবেই প্রার্থী দিতে চলেছে আকালি দল। দিল্লিতে একই অবস্থান নিচ্ছে হরিয়ানার জোটসঙ্গী দুষ্যন্ত চৌতালার দল জননায়ক জনতা পার্টিও। ওই দলও পৃথকভাবে লড়বে। এই অবস্থায় আসন্ন রদবদলে তামিলনাড়ু এবং বিহারের দুই জোটসঙ্গীকে খুশি রাখতে মরিয়া নরেন্দ্র মোদি। তামিলনাড়ুতে আগামী বছর ভোট। বিহারে চলতি বছরই নির্বাচন। সুতরাং এই দুই ভোটকে সামনে রেখে দুই শরিককে তুষ্ট রাখা বিজেপির কাছে বিশেষ প্রয়োজন। দুই জোটসঙ্গী ছাড়াও বেশ কিছু মন্ত্রক রয়েছে যেখানে পূর্ণ সময়ের মন্ত্রী নেই। অন্য মন্ত্রীদের অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবেই কাজ চলছে এই মন্ত্রকগুলিতে। এমনকী কিছু মন্ত্রী আছেন, যাঁদের কাঁধে একটি নয়, দুটি নয়, তিনটি করে মন্ত্রক। যেমন রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েলের কাছেই রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রক। প্রকাশ জাভরেকর চালাচ্ছেন একাধারে তথ্য সম্প্রচার এবং পরিবেশ, দুটি মন্ত্রকই। রবিশংকর প্রসাদের দায়িত্বে রয়েছে তিনটি মন্ত্রক। একই সঙ্গে আইনমন্ত্রক, টেলি যোগাযোগ এবং তথ্য প্রযুক্তি। স্মৃতি ইরানির দায়িত্বে রয়েছে নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রক এং বস্ত্রমন্ত্রক। ড. হর্ষবর্ধন সামলাচ্ছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রক এবং তার সঙ্গেই তাঁর দায়িত্বে রয়েছে ভূ-বিজ্ঞান মন্ত্রক। ধর্মেন্দ্র প্রধান পেট্রলিয়াম মন্ত্রকের সঙ্গেই চালাচ্ছেন ইস্পাত মন্ত্রকও। নরেন্দ্র সিং টোমার কৃষিমন্ত্রী হলেও, তাঁকে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক এবং পঞ্চায়েতি রাজ মন্ত্রকের দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ তিনটি মন্ত্রকের দায়িত্বে একজন মন্ত্রী এক্ষেত্রেও। মোদি সরকারে এই প্রবণতা চলছে ২০১৪ সাল থেকেই। বারংবার প্রশ্ন উঠেছে, বিজেপির কাছে বিপুল সংখ্যক এমপি থাকলেও মন্ত্রী হওয়ার যোগ্য তথা প্রশাসনিকভাবে অভিজ্ঞ মানুষের সংখ্যা কি কম? কারণ, একজন মন্ত্রীকে একাধিক মন্ত্রক সামলাতে হয়, এটাই দস্তুর এই সরকারের।
আরও জানা যাচ্ছে, মহারাষ্ট্র থেকে তরুণ কোনও মুখ নিয়ে আসা হবে মন্ত্রিসভায়। তবে মন্ত্রিসভার সম্ভাব্য রদবদলে সবথেকে তাৎপর্যপূর্ণ জল্পনার কেন্দ্রে রয়েছে অর্থমন্ত্রক। বাজেটের প্রাক্কালে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, নির্মলা সম্পূর্ণ নীরব হয়ে গিয়েছেন। সম্প্রতি একের পর এক বৈঠকে তাঁর গরহাজিরা নিয়েও প্রবল চাঞ্চল্য তৈরি হয়। নীতি আয়োগে আয়োজিত বাজেট নিয়ে বৈঠকে তিনি হাজির না থেকে সেদিন পার্টি অফিসেই ছিলেন অন্য বৈঠকে। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে পৃথক পৃথক শিল্প মহলের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নিজে যে বৈঠক করেছেন, সেখানেও অর্থমন্ত্রী হাজির থাকেননি। এই কারণেই আসন্ন রদবদলে দুটি সম্ভাবনা নিয়ে চর্চা জোরদার। প্রথমত ব্রিকস ব্যাংকের প্রধান কে ভি কামাথকে অর্থমন্ত্রী করা হবে। আর দ্বিতীয় জল্পনা হল কামাথকে সরাসরি অর্থমন্ত্রী না করে, তাঁকে অর্থমন্ত্রকের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নিতে দেখা যেতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টার পাশাপাশি অর্থমন্ত্রকের জন্যও পৃথক পরামর্শদাতা যদি নিযুক্ত করা, তা হলে সেটি হবে অভিনব।
স্বপন দাশগুপ্ত। -ফাইল চিত্র