নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি, ১১ ডিসেম্বর: নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনকে চ্যালেঞ্জ করে যে সুপ্রিম কোর্টে মামলা হবেই, সেই সম্ভাবনা নিশ্চিত করে আজ প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম রাজ্যসভায় বলেছেন, আদালতে এই আইন খারিজ হয়ে যাবে তা নিয়ে সামান্য সন্দেহ নেই। কেন তিনি এই ইঙ্গিত দিয়েছেন তার সপক্ষে ৬টি সওয়াল করে চিদম্বরম বলেছেন, সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হোক এই বিল কার বুদ্ধিতে নিয়ে আসা হল। কারণ, আজ নয় কাল এই বিল সুপ্রিম কোর্ট খারিজ করবেই। তার আগে জানা দরকার আইনমন্ত্রক, আ্যটর্নি জেনারেল, প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কে এই প্রশ্নগুলির উত্তর দিতে পারবে? কারণ রকম একটি ভুলে ভরা বিল নিয়ে এনে সংসদকে বিচারবিভাগের কাছে আগামীদিনে হেয় করার জন্য ঠিক কে দায়ী সেটা তো জানা দরকার। সব থেকে দুর্ভাগ্যজনক হল, সংসদে এমন বিল পাশ করানো হচ্ছে যা আমরা সকলেই বুঝতে পারছি অসাংবিধানিক, অথচ সরকার সেই ভুল সংশোধন না করেই বিলকে পাশ করিয়ে পাঠিয়ে দিচ্ছে বিচারবিভাগের কাছে। অর্থাৎ আমাদের আগামীদিনে সংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের তৈরি করা ত্রুটিপূর্ণ বিল শেষে কিনা খতিয়ে দেখবে অনির্বাচিত বিচারপতি এবং আইনজীবীরা/ এর থেকে দুর্ভাগ্যজনক সংসদের পক্ষে আর কিছু হতে পারে? প্রশ্ন করেছেন চিদম্বরম।.তিনি বলেছেন, ১) মাত্র তিনটি দেশকে বিলের মধ্যে এনে কী ভাবে বাকি সব দেশকে বাদ দেওয়া যায়? সংবিধানে এরকম আইন আনার কোনও সুযোগ আদৗ নেই ২) নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী ভারতে নাগরিকত্ব পাওয়া যায় জন্মগত ভাবে, রেজিস্ট্রেশন করে, ন্যাচারালাইজেশন, ডিসেন্ট প্রক্রিয়া এবং এদেশে বসবাস করার নির্দিষ্ট সময়সীমা অতিক্রম করে। এই সরকার নতুন নাগরিকত্ব পাওয়ার বিধান আনছে। সেটিকে বলা যায় গরিষ্ঠতার জোরে যথেচ্ছাচার। ধর্মের মাধ্যমে নাগরিকত্ব পাওয়ার কোনও পদ্ধতিই দেয়নি সংবিধান। ৩) বলা হয়েছে খ্রিস্টান এবং হিন্দুরা শরণার্থী হলে নাগরিকত্ব পাবে। অথচ তারা যদি শ্রীলঙ্কা অথবা ভুটান থেকে আসে তা হলে পাবে না। কারণ বিলে ওই রাষ্ট্রগুলির কথা নেই। অথচ শ্রীলঙ্কায় হিন্দু আছে প্রচুর, ভুটানে প্রচুর খ্রিস্টান আছে। ভুটান থেকে ভারতে আসা খ্রিস্টান অথবা শ্রীলঙ্কা থেকে ভারতে আসা হিন্দু যদি নাগরিকত্ব চায়, এই বিল অনুযায়ী তারা পাবে না নাগরিকত্ব। ৪) বিলে বলা হয়েছে ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিত হয়ে কেউ যদি বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান থেকে চলে আসে ভারতে, তারাই শরণার্থী। কিন্তু শুধু ধর্মীয় কারণে কেন? রাজনৈতিক কারণে হতে পারে, সামাজিক কারণে হতে পারে, সেই দেশে অপরাধ করে চলে আসতে পারে। সুতরাং ধর্মীয় কারণে এলেই নাগরিকত্ব দেওয়া হবে এই যুক্তি আইনেই টিকবে না। ৫) সংবিধানের ১৪ নং ধারা বলেছে আইনের চোখে সকলেই সমান। এই বিল সেই ধারাকেই তো লঙ্ঘন করছে। চিদম্বরম বলেছেন, আপনারা হিন্দুরাষ্ট্রের পথে এগোতে গিয়ে যে ভুল করছেন, তার জবাব দেবে বিচারবিভাগ। অপেক্ষা করুন।
কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ বলেছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পাকিস্তান আফগানিস্তান, বাংলাদেশে ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিতদের আপনি নাগরিকত্ব দেবেন বলেছেন। অথচ আপনারই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সংসদে একটি প্রশ্নের উত্তরে বলেছে, সরকারের কাছে কোনও তথ্যই নেই যে কতজন অত্যাচারিত হয়ে এদেশে এসেছে। তা হলে কিসের ভিত্তিতে এই বিল সংসদে আনলেন?