আত্মবিশ্বাস এত বৃদ্ধি পাবে যে, কোনও কাজই কঠিন মনে হবে না। সঞ্চয় বেশ ভালো হবে। ... বিশদ
আজ থেকে ১৭ বছর আগে, ২০০২ সালে ভয়াবহ দাঙ্গায় বিধ্বস্ত হয় গুজরাত। মৃত্যু হয় কমপক্ষে একহাজার মানুষের। যাঁদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিলেন একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের মানুষ। ওই বছরেই ফেব্রুয়ারি মাসে এক সদস্য বিশিষ্ট কমিশন গঠন করে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের কথা ঘোষণা করেন গুজরাতের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কমিশনের চেয়ারম্যান হন সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি জি টি নানাবতী। সদস্য নিযুক্ত হয়েছিলেন গুজরাত হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি কে জি শাহ। পরে শাহ মারা যান। তাঁর জায়গায় স্থলাভিষিক্ত হন গুজরাত হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অক্ষয় মেহতা।
নানাবতী কমিশনের রিপোর্ট জনসমক্ষে নিয়ে আসা নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয় সেই ২০০৫ সাল থেকে। ওই বছরই ২৫ সেপ্টেম্বর প্রথম পর্যায়ের রিপোর্ট সরকারের কাছে জমা দেয় কমিশন। চূড়ান্ত রিপোর্ট পেশ করা হয় ২০১৪ সালের ১৮ নভেম্বর। তখন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে ছিলেন আনন্দীবেন প্যাটেল। কিন্তু সেই থেকে নানাবতী কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশ করা নিয়ে গুজরাত সরকার গড়িমসি করছে বলে বিভিন্ন মহল অভিযোগ তোলে। শুধু তাই নয়, গুজরাত সরকারের ‘নিষ্ক্রিয়তা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলে জনস্বার্থে মামলাও দায়ের করেছিলেন গুজরাত পুলিসের প্রাক্তন ডিজি আর বি শ্রীকুমার। মূলত তাঁরই আবেদনের ভিত্তিতে পাঁচ বছর বাদে কমিশনের তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ্যে আনল গুজরাতের বিজয় রূপানির সরকার।
গুজরাতের গোধরা রেলস্টেশনে সবরমতী এক্সপ্রেসের দু’টি কামরায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে ২০০২ সালে। তার পরই দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে গুজরাতের বিভিন্ন এলাকায়। ওই অগ্নিকাণ্ডে ৫৯ জন করসেবকের মৃত্যু হয়েছিল বলে খবরে প্রকাশ। গুজরাতে ‘সাম্প্রদায়িক হিংসা’ ছড়িয়ে পড়ার পিছনে মূল কারণ হিসেবে গোধরা কাণ্ডকেই চিহ্নিত করেছে নানাবতী কমিশন। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘গোধরার অগ্নিকাণ্ডের পর গুজরাতের একটি সম্প্রদায়ের মানুষ ‘প্রচণ্ড ক্রুদ্ধ’ হয়ে উঠেছিল। সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশই ছিল অন্য সম্প্রদায়ের উপর হামলা ও তাদের সম্পত্তিকে বিনষ্ট করা।’ আর এই হিংসা ছড়িয়ে পড়ার পিছনে গুজরাতের মন্ত্রীদের মদত থাকার যে অভিযোগ উঠেছিল, তাও খারিজ করে দিয়েছে কমিশন। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘এমন কোনও তথ্যপ্রমাণ মেলেনি, যা দিয়ে গুজরাতের মন্ত্রীদের মদত দেওয়ার অভিযোগের সত্যতাকে মান্যতা দেওয়া যায়।’ তবে তৎকালীন গুজরাত পুলিস যে দাঙ্গা প্রতিরোধে ‘অসহায় আত্মসমর্পণে’র রাস্তায় হেঁটেছিল, তা রিপোর্টে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। এর জন্য অবশ্য ‘বাহিনীর অভাব’কেই কাঠগড়ায় তুলেছে কমিশন। উদাহরণ স্বরূপ আমেদাবাদ শহরে কয়েকটি হিংসার ঘটনা তুলে ধরে রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘হিংসা রোধে এবং গোষ্ঠী সংঘর্ষ থামাতে ‘পারদর্শীর ভূমিকা’ পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে পুলিস।’ সেই সঙ্গে দাঙ্গা সংক্রান্ত খবরা-খবর প্রকাশ নিয়ে সংবাদ মাধ্যমের সমালোচনাও করা হয়েছে রিপোর্টে। কঠিন সময়ে সংবাদ প্রকাশের ‘সীমা লঙ্ঘন’ করা হয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছে কমিশন।
সব মিলিয়ে গুজরাত দাঙ্গায় নানাবতী কমিশনের রিপোর্টে দৃশ্যতই খুশি গেরুয়া শিবির। জাদেজা বলেছেন, ‘একটা গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছিলেন মোদি। ‘জনসঙ্ঘর্ষ মঞ্চ’, সিটিজেন ফর জাস্টিস’ সহ একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে মোদির বিরুদ্ধে অপপ্রচারে উঠেপড়ে লেগেছিল কংগ্রেস। গোটা বিশ্বে মোদি এবং গুজরাতের ভাবমূর্তিকে কালিমালিপ্ত করতে এই ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। অনেক দেরি হলেও নানাবতী কমিশনের রিপোর্টে আজ স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, গুজরাতের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী কিংবা অন্য কোনও মন্ত্রী দাঙ্গার সঙ্গে কোনওভাবেই জড়িত ছিলেন না।’