নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি, ১০ ডিসেম্বর: মুর্শিদাবাদের পাঁচ গরিব বাঙালি শ্রমিককে সন্ত্রাসবাদীদের হাতে খুন হতে হলেও মোদি সরকারের তাতে তেমন কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই বলেই অভিযোগ। এছাড়াও বিক্ষিপ্ত ঘটনায় সম্প্রতি কয়েকজন প্রাণ হারিয়েছেন। যদিও এসবের পরেও সংসদে বিল এনে রাজ্যের বিশেষ মর্যাদা খতম হওয়ার পর থেকে কাশ্মীরে কোনও অশান্তি হয়নি বলেই আজ লোকসভায় জানিয়ে দিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। যা নিয়ে কংগ্রেসের দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরীর সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর তুমুল বিরোধ বাঁধল। উত্তাল হল লোকসভা। পরিস্থিতি সামাল দিলেন স্পিকার ওম বিড়লা।
বার বার তাঁকে বলতে বাধা দেওয়ায় অধীরবাবুকে চুপ করাতে স্পিকারকে অনুরোধ করলেন অমিত শাহ। অধীরবাবুর উদ্দেশে বললেন, আপনার নাম অ-ধীর হলেও বলছি, এত ছটফট করবেন না। কী বলছি ধৈর্য্য ধরে শুনুন। তা সত্ত্বেও অধীরবাবুর সওয়াল, আমাকে কেন বলতে দেবেন না? প্রশ্নের সোজাসুজি জবাব না দিয়ে কেন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একই কথা বলে যাচ্ছেন? এমন বলছেন যেন কাশ্মীর রাম রাজ্যে পরিণত হয়েছে! পরিস্থিতি যদি এতই স্বাভাবিক তাহলে রাহুল গান্ধীর পাশাপাশি ভারতীয় এমপিদের কেন কাশ্মীরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না? পরিস্থিতি পরিদর্শনে লোকসভার স্পিকারের নেতৃত্বে সর্বদলীয় একটি প্রতিনিধিদলকে কাশ্মীর পাঠানোরও প্রস্তাব দেন তিনি।
ফারুক আবদুল্লাকে কেন বন্দি করে রাখা হয়েছে? এই প্রশ্ন করায় অধীরবাবুকে চেপে ধরতে অমিত শাহর পাল্টা মন্তব্য, ফারুক আবদুল্লার বাবা শেখ আবদুল্লাকে শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী ১১ বছর জেলে আটকে রেখেছিলেন। কেন, তার কোনও জবাব আপনার কাছে আছে? তাছাড়া ওখানকার প্রশাসন পরিস্থিতি বিচার করে যেদিন মনে করবে ফারুক আবদুল্লাকে ছাড়তে হবে, সেদিনই ছাড়া পাবেন। আপনাদের কংগ্রেস আমলের মতো দিল্লি থেকে ফোন করে কারও ওপর চাপ দেওয়ার কালচার আমাদের নেই। মন্তব্য করেন অমিত শাহ। টেবিল চাপড়ে উল্লাসে ফেটে পড়ে বিজেপি।
লোকসভার প্রশ্নোত্তর পর্বে কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের বক্তব্য জানতে চান ওয়াইএসআরসিপির এমপি শ্রীধর কোটাগিরি। জবাব দিতে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী জি কিষাণ রেড্ডি বলেন, ৫ আগস্ট সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিল হওয়ার পর থেকে জম্মু-কাশ্মীরে কোনও দুর্ঘটনা ঘটেনি। পুলিসের গুলিতে একজনও মারা যায়নি। ১৯৫ টি থানা থেকে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। গত বছরও যেখানে কাশ্মীরে ৮০২ টি পাথর ছোঁড়ার ঘটনা ঘটেছিল, গত পাঁচ আগস্টের পর থেকে তা হয়েছে মাত্র ১৯০ টি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, স্কুল খুলেছে। ফোন চালু হয়েছে। হাসপাতাল খুলেছে। সাত লক্ষ মানুষ ওপিডি’তে চিকিৎসা করিয়েছেন। ৯৯.৪৮ শতাংশ ছাত্রছাত্রী পরীক্ষা দিয়েছে।
যদিও জবাবে সন্তুষ্ট না হয়ে প্রশ্ন করার সুযোগ পেয়ে অধীরবাবু সরাসরি সভায় উপস্থিত অমিত শাহর কাছে জানতে চান, কাশ্মীরে পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে সোজাসুজি বলুন? কেন ওখানে রাজনৈতিক দলের কোনও কর্মসূচির অনুমতি নেই? কেনই বা ফারুক আবদুল্লাকে আটকে রাখা হয়েছে? কেনই বা পর্যটকরা যেতে ভয় পাচ্ছে? অধীরবাবু বলেন, সরকার নানা সংখ্যাতথ্য দিচ্ছে, তাহলে ব্যবসায়ীরা কেন বলছেন, প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়ে গিয়েছে? পাল্টা চেপে ধরেন অমিত শাহ। বলেন, কোন ব্যবসায়ী সংগঠন কোথায় একথা বলেছে জানান। আর সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিলের পর ওখানে পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়েছে। ব্লকস্তরে ভোট হয়েছে। কোনও অশান্তি হয়নি। আর আপনি বলছেন, কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচি হয়নি? এগুলো কি রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়? অধীরবাবুকে চুপ করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন অমিত শাহ।