নয়াদিল্লি, ৯ ডিসেম্বর (পিটিআই): রবিবারের ওই ভয়াবহ ঘটনার পর সোমবার ফের আনাজ মান্ডির অভিশপ্ত বহুতলটিতে আগুন লাগল। ছড়াল আতঙ্ক। দিল্লি ফায়ার সার্ভিসের প্রধান অতুল গর্গ জানান, এদিনের আগুন তেমন বড় ছিল না। সময়ে খবর পাওয়ায় দ্রুত তা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়। পাঠানো হয়েছিল দমকলের চারটি ইঞ্জিন। এদিন হাসপাতালগুলির মর্গের বাইরের দৃশ্য ছিল অতি করুণ। ময়নাতদন্তের পর প্রিয়জনের দেহ নিতে ভিড় করেন পরিজনেরা। গতকালের অগ্নিকাণ্ডে মৃতরা প্রায় প্রত্যেকেই বিহার ও উত্তরপ্রদেশ থেকে আসা শ্রমিক। প্রিয়জন হারানোর বেদনার পাশাপাশি দেহ কীভাবে ফেরানো হবে, তা নিয়ে চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন তাঁরা। পরিজনদের চিন্তামুক্ত করার লক্ষ্যে প্রথমে স্থির হয়েছিল, অগ্নিকাণ্ডে মৃত বিহারের বাসিন্দাদের দেহ ফেরানো হবে ট্রেনে। সরকারি সূত্রে খবর, স্বতন্ত্রতা সেনানি এক্সপ্রেসের এসএলআর কোচে এই শ্রমিকদের দেহ বিহারে পাঠানো সিদ্ধান্ত হয়েছিল। দিল্লিতে বিহারের রেসিডেন্ট কমিশনার রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েলের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। বিহারের বাসিন্দাদের দেহ ফেরানোর জন্য সাহায্য চেয়ে। গোয়েলের মধ্যস্থতাতেই রেলের দিল্লি ডিভিশন দেহ ফেরানোর এই উদ্যোগ নিয়েছিল। যদিও মৃতদের পরিবারের তরফে এইভাবে দেহ ফেরানোর উদ্যোগে আপত্তি জানানো হয়। এই আপত্তির কথা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত হয়, অ্যাম্বুলেন্সে দেহ পাঠানো হবে। বিহার ভবনের যুগ্ম লেবার কমিশনার কুমার দিগ্বিজয় বলেন, ট্রেন দেহ নিয়ে যেতে চায়নি পরিবারগুলি। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি অ্যাম্বুলেন্সে দেহ পাঠানো হবে। প্রতিটি অ্যাম্বুলেন্সে দু’টি করে দেহ ফিরবে। এখনও পর্যন্ত ৩৬ জন বিহারের বাসিন্দার দেহ শনাক্ত হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর যত দ্রুত সম্ভব দেহ ফেরানোর ব্যবস্থা করব আমরা।
আনাজ মান্ডির অভিশপ্ত বহুতলটিতে তদন্তে নেমে সোমবার থ্রি ডি লেজার স্ক্যান প্রযুক্তির ব্যবহার করল দিল্লি পুলিসের অপরাধ দমন শাখা। ঘটনার পুনর্নির্মাণ ও প্রমাণ সংগ্রহের লক্ষ্যে। পাশাপাশি এদিন ঘটনাস্থলে আসে ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির (এফএসএল) একটি দল। সংগ্রহ করে নমুনা। গতকাল ভোরের অগ্নিকাণ্ডে ৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। জখম হয়েছেন আরও অনেকে। আনাজ মান্ডির এই বহুতলটিতে বহু বেআইনি কারখানা ছিল। মজুত ছিল কার্ডবোর্ড বক্স, প্লাস্টিক শিট ও রেক্সিনের মতো দাহ্য কাঁচামাল।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এই নিয়ে দ্বিতীয়বার থ্রি ডি লেজার স্ক্যান প্রযুক্তির ব্যবহার করল দিল্লি পুলিস। এর আগে ফেব্রুয়ারি মাসে করোল বাগের হোটেল অর্পিত প্যালেসে অগ্নিকাণ্ডের তদন্তে এই প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়েছিস। ওই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এদিন দিল্লির একটি আদালত ওই বহুতলের মালিক রেহান ও ম্যানেজার ফুরকানকে ১৪ দিনের পুলিস হেফাজতে পাঠিয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গতকালই এই দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এই দু’জনকে হেফাজতে নিয়ে জেরার আবেদন জানিয়েছিল দিল্লি পুলিস। মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মনোজ কুমার পুলিসের এই আবেদন মঞ্জুর করেন। আনাজ মান্ডি অগ্নিকাণ্ডে তদন্তের ভার দেওয়া হয়েছে অপরাধ দমন শাখার হাতে। এর পাশাপাশি দিল্লি সরকার এই ঘটনায় ম্যাজেস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। ১৯৯৭ সালে উপহার সিনেমার পর দিল্লিতে এটাই অগ্নিকাণ্ডের সবচেয়ে বড় ঘটনা। উপহার সিনেমায় অগ্নিকাণ্ডের জেরে ৫৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল। আনাজ মান্ডির ঘটনায় মৃতরা প্রায় প্রত্যেকেই বিহার ও উত্তরপ্রদেশ থেকে আসা শ্রমিক।
আনান মান্ডির অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি এদিন সংসদে ওঠে। জিরো আওয়ারে প্রায় সব দলের তরফেই বিষয়টি তোলা হয়। রাজধানীর বুকে এত বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এবিষয়ে আগামীকাল লোকসভায় বিবৃতি দেবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। পাশাপাশি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন সোমবার নোটিস ইস্যু করল দিল্লি সরকার, পুলিস প্রধান ও নর্থ সিএমডিকে। ছয় সপ্তাহের মধ্যে বিস্তারিত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।