মাঝে মধ্যে মানসিক উদ্বেগের জন্য শিক্ষায় অমনোযোগী হয়ে পড়বে। গবেষণায় আগ্রহ বাড়বে। কর্মপ্রার্থীদের নানা সুযো ... বিশদ
দেশের প্রথম সারির এক ইংরেজি ম্যাগাজিনে একটি প্রতিবেদন লিখেছেন রঘুরাম রাজন। সেখানে ভারত কীভাবে আর্থিক মন্দা থেকে বেরিয়ে আসতে পারে, সে ব্যাপারে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি। সরকারের কাছে উদার মূলধন, জমি ও শ্রম বাজারের জন্য সংস্কার এবং বিনিয়োগের আর্জি জানিয়েছেন রাজন। সেইসঙ্গে প্রতিযোগিতা ও অভ্যন্তরীণ দক্ষতা বাড়াতে ভারতের মুক্ত-বাণিজ্য চুক্তিতে সই করা উচিত বলেও জানিয়েছেন তিনি। রবিবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে রাজন লিখেছেন, ‘কোথায় সমস্যা হচ্ছে, তা বুঝতে আমাদের প্রথমেই শুরু করতে হবে বর্তমান সরকারের কেন্দ্রীকরণের প্রবণতা থেকে। শুধু সিদ্ধান্তগ্রহণই নয়, ধারণা ও পরিকল্পনা সবটাই আসে প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর দপ্তরের ঘনিষ্ঠ গুটিকয়েক লোকের কাছ থেকে।’
অর্থনীতিকে এই সংকীর্ণ গণ্ডির মধ্যে বেঁধে ফেলার তীব্র সমালোচনা করেছেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর। রাজন আরও লিখেছেন, ‘এতে দলের রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে ফায়দা আসবে। কারণ, ওই গুটিকয়েক ব্যক্তির জ্ঞান সীমিত। যেখানে নির্দিষ্ট কোনও এজেন্ডা প্রাধান্য পায় না। এবং গোটা দেশের পরিবর্তে রাজ্যস্তরের ভাবনাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়, সেটা আর্থিক সংস্কারের কোনও কাজে আসে না।’ এ ব্যাপারে আগের কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের উদার নীতির প্রশংসা করেছেন তিনি। রাজনের কথায়, ‘আগের সরকারের উপর জোটের দায়বদ্ধতা ছিল। কিন্তু, তারা সর্বদা উন্মুক্ত করার পথে এগিয়েছে। অতিরিক্ত কেন্দ্রীয়করণ, নির্দিষ্ট মন্ত্রিগোষ্ঠীর অনুপস্থিতি এবং নির্দিষ্ট দূরদৃষ্টির অভাবে সংস্কারের প্রচেষ্টা কেবল তখনই হচ্ছে, যখন প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর সেদিকে নজর দিচ্ছে। আর প্রধানমন্ত্রীর নজর অন্যদিকে ঘুরে গেলেই সংস্কারে ভাটা পড়ে যাচ্ছে।’
তবে শুধু মোদি সরকারের সমালোচনা নয়, তাঁর ‘মিনিমাম গভর্নমেন্ট, ম্যাক্সিমাম গভর্ন্যান্স’ স্লোগানের প্রশংসা করেছেন আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডারের এই প্রাক্তনী। রাজন লিখেছেন, ‘এই স্লোগানকে অনেকেই ভুল বুঝেছেন। অথচ এর অর্থ হল, আরও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করবে সরকার। এটা নয় যে সাধারণ মানুষ ও বেসরকারি সংস্থাকে উন্মুক্ত পরিবেশে কাজ করতে দেওয়া হবে না। সরকারের অটোমোশন এবং উপভোক্তাদের টাকা সরাসরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠানোর সিদ্ধান্ত উল্লেখযোগ্য সাফল্য। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা সঙ্কুচিত নয়, প্রসারিত হয়েছে।’
রাজনের মতে, ‘অর্থনৈতিক মন্দার সব থেকে বড় কারণ হল, আসল সমস্যাকে মোদি সরকার মান্যতাই দিচ্ছে না। ভিতর বা বাইরের সমস্ত সমালোচনাকেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হিসেবে না দেখে শুরুতেই সমস্যার ব্যাপকতা বোঝা প্রয়োজন। সরকার বিশ্বাস করে, এই সমস্যা ক্ষণস্থায়ী। যা আদপেও নয়। খারাপ খবর বা অস্বস্তিকর সমীক্ষা চেপে দিলে সরকার আসল সমস্যা থেকে দূরে সরে যাবে।’ রাজন আরও বলেছেন, ‘ভারতে এখন উৎপাদন ক্ষেত্র মার খাচ্ছে। গ্রামীণ এলাকায় হতাশা চোখে পড়ার মতো। দেশীয় শিল্পগুলি নতুন করে বিনিয়োগ করছে না। এবং এই বিনিয়োগ থেমে যাওয়া প্রমাণ করে যে কোনওকিছু খুব গভীরভাবে ভুল পথে যাচ্ছে।’
দুর্বল অর্থনীতি, জিডিপি ও কর্মসংস্থান নিয়ে বিরোধীরা প্রায়ই সরকারকে আক্রমণ করছে। শাসকপক্ষ তার দায় পূর্ববর্তী সরকারের উপর চাপাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে রাজন বলেন, ‘মন্ত্রীদের দাবি মতো সমস্যা যদি উত্তরাধিরার সূত্রে এসেও থাকে, তাহলে তা সাড়ে পাঁচ বছর ক্ষমতায় থেকে সেই সমস্যার সমাধান করাও সরকারের দায়িত্ব। অর্থনীতিতে সংস্কারে যেমন একটা ধাক্কা দেওয়া প্রয়োজন, তেমনই কীভাবে সরকার চলবে তার দৃষ্টিভঙ্গিও বদলানো দরকার।’ মোদি সরকারের ৫ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতির স্বপ্ন নিয়ে আরবিআইয়ের প্রাক্তন গভর্নরের মন্তব্য, সেজন্য এখন থেকেই ধারাবাহিক ৮-৯ শতাংশ হারে আর্থিক বৃদ্ধি প্রয়োজন।