বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
সাত বছর আগে ২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বরের রাতে দিল্লিতে ২৩ বছরের এক প্যারামেডিক্যাল ছাত্রীকে গণধর্ষণ করে তাঁর উপর নারকীয় অত্যাচার চালায় ছয় দুষ্কৃতী। ঘটনার ১৩ দিন পর নির্যাতিতা হাসপাতালে মারা যান। সেই জঘন্য ও ভয়ানক অপরাধের পর গোটা দেশ দোষীদের শাস্তির দাবিতে রাস্তায় নেমে আসে। ভয়াবহ সেই অপরাধ এবং তার পরবর্তী সময়ে প্রতিবাদের স্মৃতি সকলের মনে এখনও তাজা। সেই থেকে ২৩ বছরের ওই নির্যাতিতাকে মানুষ ‘নির্ভয়া’ বলে চিনেছে। সেই নির্ভয়ার বাবা-মা এদিন হায়দরাবাদের এনকাউন্টারকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে তাঁদের যে সাত বছর ধরে সুবিচারের আশায় অপেক্ষা করে যেতে হচ্ছে, সেই হতাশাও প্রকাশ করেছেন। যদিও নির্ভয়া কাণ্ডে অভিযুক্ত বিনয় শর্মার ক্ষমাভিক্ষার আর্জি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক আগেই বাতিল করে দিয়েছে। এবার রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমাভিক্ষা প্রার্থনা করেছে বিনয়। সেই আবেদন বাতিল করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অপরাধীকে মুক্তি না দেওয়ার জন্য নির্ভয়ার মা-ও রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেছেন।
অন্যদিকে, জম্মুর কাঠুয়ায় নির্যাতিতা শিশুর পরিবারও এদিনের এনকাউন্টারকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে দীর্ঘমেয়াদি বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে নির্ভয়ার পরিবারের মতো তারাও হতাশ। কাঠুয়ায় নির্যাতিতার বাবা মহম্মদ আখতার বলেন, ‘আমি মনে করি নির্যাতিতার পরিবার সঠিক বিচার পেল। অন্তত তাঁদের দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ার দুঃস্বপ্নের সম্মুখীন হতে হল না।’ এনকাউন্টারের প্রতিক্রিয়া দেওয়ার পাশাপাশি কাঠুয়া মামলার শুনানি প্রসঙ্গেও এদিন ক্ষোভ উগড়ে দেন আখতার। তিনি জানান, ‘দীর্ঘ শুনানি প্রক্রিয়ার পর আমার মেয়ের মামলা এখন পাঞ্জাবের পাঠানকোটে স্থানান্তর করা হয়েছে। একজন মূল অভিযুক্ত ছাড়া পেয়ে গিয়েছে এবং আর একজন নাবালাক। সে এখনও বিচারাধীন বন্দি। আমি এখনও জানি না যে সে আদৌ সাজা পাবে কি না।’
২০০৯ সালে পুনের বাসিন্দা এক মহিলাকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ উঠেছিল। ওই নির্যাতিতার স্বামীও এদিন হায়দরাবাদ এনকাউন্টারকে স্বাগত জানিয়েছেন।
যদিও হায়দরাবাদ এনকাউন্টারের সত্যাসত্য নিয়ে ইতিমধ্যেই নানা মহল থেকে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন যে, এদিন ভুয়ো এনকাউন্টারে চার অভিযুক্তকে খুন করা হয়েছে। দিল্লির প্রাক্তন পুলিস কমিশনার নীরজ কুমার এদিনের এনকাউন্টারের প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। নির্ভয়াকাণ্ডের সময় তিনিই দিল্লির পুলিস কমিশনার ছিলেন। ২০১২ সালের সেই স্মৃতিচারণা করে তিনি বলেন, ‘সেই সময় আমাদের উপর প্রবল চাপ ছিল। কিন্তু অপরাধীদের মেরে ফেলার ভাবনা কখনও আমাদের মনে আসেনি। আমাদের কাছে অনেকেই দাবি করত যে অপরাধীদের জনগণের হাতে তুলে দেওয়া হোক। কিন্তু আইন লঙ্ঘিত হোক, এমন কিছু করার প্রশ্ন আমাদের মাথায় আসেনি।’ যদিও জাতীয় মহিলা কমিশনের প্রধান রেখা শর্মা বলেন, অপরাধীরা যে খতম হয়েছে তাতে তিনি খুশি। তবে সুষ্ঠু আইনি প্রক্রিয়ায় বিচার হওয়া প্রয়োজন।’
কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর ট্যুইট করেন, ‘নীতিগত দিক থেকে সমর্থন করি। তবে আমাদের আরও জানতে হবে। যেমন অপরাধীরা যদি অস্ত্র নিয়ে থাকে তাহলে, এনকাউন্টারের যথার্থতা প্রমাণ করতে পারবে পুলিস। যতক্ষণ না বিশদে কিছু জানা যাচ্ছে, ততক্ষণ আমাদের কারও নিন্দা করা উচিত নয়। তবে আইনি সমাজে বিচার বহির্ভূত হত্যা কখনওই গ্রহণযোগ্য নয়।’