দিব্যেন্দু বিশ্বাস, নয়াদিল্লি, ৫ ডিসেম্বর: তিন বছরে দেশে দিনমজুরদের আত্মহত্যার ঘটনা ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সংসদে লিখিতভাবে এই উদ্বেগজনক তথ্য দিল কেন্দ্রীয় সরকার। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর রিপোর্ট তুলে ধরে লোকসভায় লিখিতভাবে দিনমজুরদের আত্মহত্যা বৃদ্ধির কথা জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রী সন্তোষকুমার গঙ্গওয়ার। ২০১৪, ২০১৫ এবং ২০১৬ সালের প্রাপ্ত তথ্যের উপর ভিত্তি করে সংসদে এ কথা জানিয়েছেন মন্ত্রী। পাশাপাশিই কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রী লিখিতভাবে এও বলেছেন, এই মুহূর্তে দেশের অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের জাতীয় ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের পরিকল্পনা কেন্দ্রীয় সরকারের নেই। কেন্দ্রের পাশাপাশি দিনমজুরদের ন্যূনতম মজুরির বিষয়টি পর্যালোচনার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারগুলির উপরও বর্তায়। রাজ্য সরকারগুলিও ন্যূনতম মজুরির পরিমাণ নির্ধারণ অথবা সংশোধনের ক্ষেত্রে সম-ভূমিকা পালন করে থাকে।
সারা দেশে ঠিক কী পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে দিনমজুরদের আত্মহত্যার ঘটনা? ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর (এনসিআরবি) রিপোর্ট উল্লেখ করে কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রী সন্তোষকুমার গঙ্গওয়ার লোকসভায় লিখিতভাবে জানিয়েছেন, ‘২০১৪ সালে সারা দেশে ১৫ হাজার ৭৩৫ জন দিনমজুর আত্মহত্যা করেছিলেন। ২০১৫ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে হয় ২৩ হাজার ৭৯৯। এবং ২০১৬ সালে সারা দেশে ২৫ হাজার ১৬৪ জন দিনমজুরের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে।’ অর্থাৎ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর লিখিত জবাব থেকে স্পষ্ট, উল্লিখিত তিন বছরে সারা দেশে দিনমজুরদের আত্মহত্যা ঘটনা ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও এর কারণ কী সেই ব্যাপারে নির্দিষ্ট করে প্রশ্ন করা হলেও কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রী লিখিতভাবে জানিয়েছেন, ‘কেন দিনমজুরদের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে, তা নিয়ে ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর কাছে কোনও তথ্য নেই।’
এবং এই প্রসঙ্গেই দিনমজুরদের মজুরি সংক্রান্ত বিষয়টি সামনে এসেছে। এ ব্যাপারে লিখিতভাবে কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রী সন্তোষকুমার গঙ্গওয়ার বলেছেন, ‘১৯৪৮ সালের ন্যূনতম মজুরি আইন অনুসারে কেন্দ্রের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারগুলিও ন্যূনতম মজুরির নির্ধারণ, পর্যালোচনা এবং সংশোধনের ব্যাপারে দায়িত্ব পালন করে। তবে লেবার ব্যুরোর কাছে যে তথ্য রয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে সারা দেশে গড় মজুরির ক্ষেত্রে নিয়মিতভাবে ইতিবাচক বৃদ্ধিই হয়েছে।’ তবে জাতীয় ন্যূনতম মজুরির পরিমাণ নির্ধারণের পরিকল্পনা না থাকলেও চলতি বছরের ৮ আগস্ট সংসদে যে কোড অন ওয়েজেস, ২০১৯ বিল পাস হয়েছে, সেখানে ফ্লোর ওয়েজ নির্দিষ্ট করার নিদান রয়েছে। জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।
প্রশ্নের জবাবে লিখিতভাবে সন্তোষকুমার গঙ্গওয়ার জানিয়েছেন, ‘কৃষি সহ দেশের অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা দেওয়ার লক্ষ্যে ২০০৮ সালে আনঅর্গানাইজড ওয়ার্কার্স সোশ্যাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট কার্যকর করেছে কেন্দ্র। যে আইনে অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত হয়। প্রধানত অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের কথা মাথায় রেখেই প্রধানমন্ত্রী জীবনজ্যোতি বিমা যোজনা (পিএমজেজেবিওয়াই) এবং প্রধানমন্ত্রী সুরক্ষা বিমা যোজনা (পিএমএসবিওয়াই) চালু করা হয়েছে। রয়েছে আয়ুষ্মান ভারত যোজনার মতো স্বাস্থ্যবিমার পরিষেবাও। এছাড়াও ৬০ বছর বয়সের পর থেকে অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকেরা যাতে নির্দিষ্ট ন্যূনতম মাসিক পেনশন পান, সেই কারণে প্রধানমন্ত্রী শ্রম যোগী মান-ধন যোজনাও (পিএমএসওয়াইএম) চালু করা হয়েছে।’ এই প্রকল্পের আওতায় থাকা অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকেরা ৬০ বছর বয়সের পর থেকে মাসে তিন হাজার টাকার নিশ্চিত পেনশন পাবেন।