নয়াদিল্লি, ৯ নভেম্বর (পিটিআই): দীর্ঘ প্রায় ৫০০ বছরের বিতর্কের অবসান। অযোধ্যার বিতর্কিত ২.৭৭ একর জমিতে রাম মন্দির তৈরি করা যাবে বলে রায় দিল সুপ্রিম কোর্ট। বাবরি মসজিদের জন্য অযোধ্যাতেই বিকল্প জমি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালতের সাংবিধানিক বেঞ্চ। তার জন্য সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডকে উপযুক্ত পাঁচ একর জমি কেন্দ্রীয় সরকারকে দিতে হবে বলে রায়ে জানিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। অন্যদিকে, মন্দির নির্মাণ করতে ট্রাস্ট গড়ে তিন মাসের মধ্যে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
দেশজুড়ে চাপা উত্তেজনার মাঝে শনিবার সকাল ১০:২৯ মিনিটে শীর্ষ আদালতের নির্দিষ্ট কক্ষে নিজেদের আসন গ্রহণ করেন পাঁচ বিচারপতি। ঘড়ির কাঁটা দেখে ঠিক সকাল সাড়ে ১০টার সময় রায়দান শুরু করেন তাঁরা। অযোধ্যা মামলার এই রায়ে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ (এসএসআই)-এর রিপোর্ট বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। পুরাতত্ত্ববিদদের পর্যবেক্ষণকে ধরে ধরে তিন পক্ষের দাবির সঙ্গে বাস্তব ভিত্তি উল্লেখ করা হয় শীর্ষ আদালতের তরফে। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ যে ফাঁকা জমিতে তৈরি হয়নি তা এএসআইয়ের রিপোর্টেই পরিষ্কার। তবে মন্দির ভেঙে মসজিদ তৈরি হয়েছিল কিনা সে বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্তে আসেনি শীর্ষ আদালত। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন সাংবিধানিক বেঞ্জ জানায়, ব্রিটিশরা ভারতে আসার আগে রাম চবুতরা ও সিতা রসোই হিন্দুদের দ্বারা পূজিত হতেন তার প্রমাণ রয়েছে। জমির মালিকানা দাবি করা নির্মোহী আখড়ার আবেদন খারিজ করে দেয় শীর্ষ আদালত। তবে মন্দির নির্মাণের জন্য গঠিত ট্রাস্টে সম্ভব হলে নির্মোহী আখাড়ার প্রতিনিধিকে রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
ভারতীয় বিচারব্যবস্থার ইতিহাসে অন্যতম প্রতিক্ষিত রায় শুনে স্বাভাবিকভাবেই উচ্ছ্বসিত আরএসএস, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মতো দক্ষিণপন্থী সংগনগুলি। রায়ে খুশি বিজেপিও। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ট্যুইট, ‘সুপ্রিম কোর্টের রায়কে কারও জয় বা কারও পরাজয় হিসেবে দেখা উচিত নয়। রাম ভক্তি হোক বা রহিম ভক্তি, আমাদের রাষ্ট্র ভক্তিকে শক্ত করা উচিত। শান্তি ও সম্প্রীতি বিরাজ করুক’। রায়ে খুশি নয় সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড। তাদের পক্ষ থেকে রিভিউ পিটিশন দাখিল করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
এদিকে বহু প্রতিক্ষিত রায়ের আগে থেকে দেশের একাধিক অংশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আঁটসাট করা হয়েছে। রাজস্থান, মহারাষ্ট্র, জম্মু-কাশ্মীরের মতো বেশ কয়েকটি রাজ্যের একাধিক এলাকায় জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা। বন্ধ রয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবাও। শুধু উত্তরপ্রদেশেই রাজ্য পুলিসের ১৮ হাজার কর্মী মোতায়েন রয়েছেন, এছাড়া চার হাজার কেন্দ্রীয় বাহিনী, র্যা ফও থাকছে। আকাশপথে চপারের মাধ্যমে নজরদারি চালানো হচ্ছে। এছাড়া প্রশাসনের পক্ষ থেকে নজর রাখা হয়েছে সোশ্যাল নেটওয়ার্কেও। রায়ের পর দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ইতিমধ্যেই প্রতিটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। আইবি প্রধান, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকও করেছেন তিনি।