মুম্বই, ৮ নভেম্বর (পিটিআই): হাতে আর মাত্র একদিন। এরমধ্যে সরকার গঠন না হলে মহারাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হয়ে যাবে। শনিবার রাতেই মহারাষ্ট্রে সরকারের শপথ নেওয়ার চূড়ান্ত সময়সীমা শেষ হচ্ছে। তার আগে শুক্রবার সরকার গঠন নিয়ে কোনও ইতিবাচক অগ্রগতি তো দূরস্থান, ঘোড়া কেনাবেচার অভিযোগ ঘিরে নজিরবিহীন বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়ল বিজেপি এবং কংগ্রেস। এদিন মহারাষ্ট্রের কংগ্রেস নেতা বিজয় ওয়ারেত্তিয়ার অভিযোগ করেন, কংগ্রেস বিধায়কদের দল বদলের জন্য এক একজনকে ২৫ থেকে ৫০ কোটি টাকার টোপ দেওয়া হচ্ছে। সমর্থনের জন্য টাকা দিয়ে বিধায়কদের কিনে নিতে পারে বিজেপি, এই ভয়ে বিধায়কদের হোটেলবন্দি করেছে শিবসেনা। দলের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, বিধায়কদের ৫০ কোটি করে টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। এবার সেই একই অভিযোগ করল কংগ্রেস।
শুক্রবার বিজয় বলেন, ‘আমাদের বিধায়কদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হচ্ছে। দল বদলের বিনিময়ে তাঁদের ২৫ থেকে ৫০ কোটি টাকার প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। আমরা বিধায়কদের বলেছি, কল রেকর্ড করে রাখতে। রাজ্যের মানুষ সবকিছু জানুক।’ রাজনীতিকে এত নিচুস্তরে নামিয়ে আনার জন্য বিজেপি নেতৃত্বের সমালোচনা করেন তিনি। এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মহারাষ্ট্র বিজেপির সভাপতি কেশব উপাধ্যায়। শুক্রবার তিনি বলেন, ‘ঘোড়া কেনাবেচার কোনও প্রশ্নই নেই। এটা বিজেপির সংস্কৃতি নয়।’ কংগ্রেসের অভিযোগকে ভিত্তিহীন জানিয়ে কেশব বলেন, এই অভিযোগের মাধ্যমে শতাব্দী প্রাচীন এই দল নিজেদের হতাশাই প্রকাশ করছে। তাঁর কথায়, ‘সেই কয়েক দশক আগে কংগ্রেস ২০০-র বেশি আসন পেয়েছিল। গত কয়েকটি নির্বাচনে তারা ভালো ফল করতে পারেনি। এবার তাদের ৫০টি আসনও জোটেনি। তাই হতাশা থেকেই ওরা ভিত্তিহীন অভিযোগ করে যাচ্ছে।’ বিজেপি এবং শিবসেনা সরকার গঠনের দাবি জানাবে বলে কেশব মন্তব্য করেন। অপরদিকে, রাজ্যের অর্থমন্ত্রী সুধীর মঙ্গান্তিওয়ার বলেন, ঘোড়া কেনাবেচার কথা বলে কংগ্রেস তাদের বিধায়কদেরই অপমান করছে।
ঘোড়া কেনাবেচার অভিযোগের মাঝেই রটে যায় শিবসেনার মতোই বিধায়কদের হোটেলবন্দি করতে চলেছে কংগ্রেস। দলের একটা সূত্র জানাচ্ছে, নির্বাচিত ৪৮ জন বিধায়কের মধ্যে বেশ কয়েকজন কংগ্রেস শাসিত রাজস্থানের উদ্দেশে রওনা হয়ে গিয়েছেন। জয়পুরের কোনও হোটেলে তাঁরা থাকবেন। বাকিদের প্রথমে মুম্বইতে আসতে বলা হয়েছে। সেখানে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের পরে তাঁদের নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে। মহারাষ্ট্রের কংগ্রেস নেতা বিজয় ওয়ারেত্তিয়ার অবশ্য বিধায়কদের হোটেলবন্দির পরিকল্পনার কথা অস্বীকার করেছেন। তাঁর কথায়, ‘আমরা বিধায়কদের জয়পুরে সরাচ্ছি না। এই নিয়ে আমার কিছু জানা নেই। তবে যদি কোনও বিধায়ক জয়পুর যান, তবে নিজের ইচ্ছায় গিয়েছেন। এত কঠিন নির্বাচনী ধকল কাটিয়ে কেউ কেউ অবসর বিনোদন তো চাইবেনই।’ এক সূত্রে জানা যাচ্ছে, বাকি বিধায়কদের শনিবার সকালে জয়পুর পাঠানো হতে পারে। তবে অন্য একটি সূত্র অবশ্য বলছে, এখন বিধায়কদের অন্যত্র নিয়ে যাওয়া অর্থহীন। চলতি রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কেউ শিবির বদল করবেন না।
এদিকে, মহারাষ্ট্রের জটিল সরকার গঠনের অঙ্কে কংগ্রেস এবং শিবসেনার কাছাকাছি আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বিজেপির সঙ্গে শিবসেনার মতপার্থক্য দূর হবে না বলেই এই অংশ মনে করছে। এই অবস্থায় অধিকাংশ কংগ্রেস বিধায়কই শিবসেনার সঙ্গে সরকার গঠন করতে চাইছেন বলে খবর। যদিও প্রকাশ্যে শিবসেনার সঙ্গে সরকার গঠনের সম্ভাবনা খারিজ করে দিয়েছে এনসিপি এবং কংগ্রেস। কিন্তু ওয়াকিবহাল মহলের মতে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যে কোনও সময় মত বদল করতে পারে এই দুই দল।