পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
ঘটনার সূত্রপাত শনিবার মাঝরাতে। কুপওয়ারা জেলার তংধার সেক্টরে বিনা প্ররোচনায় সংঘর্ষ বিরতি লঙ্ঘন করে হঠাৎ গুলি চালাতে শুরু করে পাক বাহিনী। ক্রমশ বাড়ে হামলার পরিমাণ। গুলির পাশাপাশি মর্টার দিয়েও আক্রমণ চলে। জঙ্গি অনুপ্রবেশে মদত দিতে পাক সেনার এই হামলায় শহিদ হন দুই ভারতীয় জওয়ান। সেনা সূত্রে জানানো হয়েছে, তঁাদের নাম পদম বাহাদুর শ্রেষ্ঠ এবং রাইফেলম্যান জামিলকুমার শ্রেষ্ঠ। পাশাপাশি মৃত্যু হয় মহম্মদ সাদিক (৫৫) নামে এক সাধারণ নাগরিকও। পাক হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় দু’টি বাড়ি, একটি চালের গুদাম, গোরু ও ভেড়া ভর্তি দু’টি গোয়াল। চিত্রকূট গ্রামে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে ছ’টি বাড়ি।
এরপরই পাকিস্তানকে কড়া জবাব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সেনাবাহিনী। সেইমতো রবিবার ভোরে প্রত্যাঘাত করে ভারত। তবে এবার উরি বা বালাকোটের মতো নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরনোর প্রয়োজন পড়েনি। বরং সীমান্তের এপার থেকেই মর্টার, রকেট লঞ্চার, স্বল্পপাল্লার কামান দিয়ে জবাব দেয় ভারত। সঠিক অবস্থান জানতে ব্যবহার করা হয় ড্রোনও। তাতেই তংধার সেক্টরের উল্টোদিকে অবস্থিত নীলম উপত্যকায় জঙ্গিদের চারটি লঞ্চপ্যাড গুঁড়িয়ে যায়। চলে টানা গোলাবর্ষণ। নিকেশ হয় বহু জঙ্গি। এরপর ভারতীয় সেনা টার্গেট করে সেগুলির নিরাপত্তায় থাকা এবং বিনা প্ররোচনায় ভারতীয় গ্রামে গুলি চালানো পাক চৌকিগুলিকে। তাতে খতম হয় ১০ পাক সেনা। সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াত বলেন, ‘শনিবার সন্ধ্যায় তংধার সেক্টর দিয়ে অনুপ্রবেশের চেষ্টা হয়েছিল। আমরা তা ব্যর্থ করে দেওয়াতেই পাক সেনা সংঘর্ষ বিরতি চুক্তি ভেঙে গুলি চালায়। এতে আমাদের কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এরপরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় প্রত্যাঘাতের, যাতে ফের অনুপ্রবেশের চেষ্টা না হয়। যে লঞ্চপ্যাডগুলির সঠিক অবস্থান আমাদের কাছে ছিল, সেগুলিতেই আঘাত করা হয়। আর্টিলারি গান ব্যবহার করা হয়েছে এই অভিযানে। এখনও পর্যন্ত যেটুকু খবর, তিনটি জঙ্গি লঞ্চপ্যাড সম্পূর্ণ ধ্বংস করা গিয়েছে আর একটি লঞ্চপ্যাড ভালোরকম ক্ষতিগ্রস্ত। ৬ থেকে ১০ জন পাক সেনাও আমাদের প্রত্যাঘাতে প্রাণ হারিয়েছে।’
আগের দু’বারের মতো এই প্রত্যাঘাত সার্জিকাল স্ট্রাইকের শিরোপা না পেলেও, সেনা আধিকারিকরা কিন্তু একে খাটো করে দেখতে নারাজ। বরং তাঁদের দাবি, ভারতের এই প্রত্যাঘাত পাকিস্তানকে খুব স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দেবে, পাক অধিকৃত কাশ্মীরে জঙ্গি এবং পাক সেনার গতিবিধি ও অবস্থান সেনাবাহিনীর কড়া নজরদারিতে রয়েছে। এক সেনা আধিকারিকের দাবি, ‘পাক সেনা যদি অনুপ্রবেশে মদত দিয়ে ভারতে জঙ্গি ঢোকানোর চেষ্টা বন্ধ না করে, তবে ফের তাদের এইরকম দশা হবে।’ রবিবার পাক সেনা একপ্রকার মেনে নিয়েছে ভারতের প্রত্যাঘাতে তাদের এক সেনা এবং ৫ জন সাধারণ নাগরিক মারা গিয়েছে। একইসঙ্গে পাক ডিজি আইএসপিআর মেজর জেনারেল আসিফ গফুর দাবি করেছেন, তঁাদের হামলায় ৯ ভারতীয় জওয়ানের মৃত্যু হয়েছে। যদিও এই দাবি উড়িয়ে দিয়েছে ভারত।
২০১৮ সাল থেকে নজিরবিহীনভাবে সীমান্তে গুলিচালনার ঘটনা লাফিয়ে লাফিয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীর থেকে বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার হওয়ার পর সেই ঘটনা আরও বাড়ায় পাকিস্তান। আগস্ট মাসে ৩০৭ বার সংঘর্ষ বিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে পাক সেনা।
এ প্রসঙ্গে সেনাপ্রধান বলেন, ‘৩৭০ ধারা অবলুপ্তির পর থেকে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে উপত্যকা। কিন্তু অধিকৃত কাশ্মীর এবং পাকিস্তান থেকে চক্রান্ত করে সেই শান্তির পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা চলছে অবিরত। আমাদের কাছে খবর, জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা তুলে নেওয়ার পর থেকে অনুপ্রবেশের চেষ্টা একধাক্কায় অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। এইভাবেই কাশ্মীরকে উত্তপ্ত করার চক্রান্ত চলছে। কিন্তু রবিবার আমরা তার যথাযোগ্য জবাব দিয়েছি।’ যদিও কংগ্রেস প্রশ্ন তুলেছে, মোদি সরকারে প্রতিবার ঠিক ভোটের আগেই সার্জিকাল স্ট্রাইক হয় কেন!
ভারতের ছেঁাড়া মর্টার।- নিজস্ব চিত্র গ্রাফিক্সে গোলাবর্ষণের ফাইল চিত্র