বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
অভিজিৎ বিনায়ককে আমরা চিনি অনেককাল আগে থেকে। তাঁর ভিতরে এই সম্ভাবনার বীজ আমরা দেখেছি তিনি যখন আমাদের প্রিয় ছাত্র ছিলেন। কলকাতায় প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে স্নাতক হয়ে দিল্লিতে জওহরলাল নেহরু ইউনিভার্সিটিতে (জেএনইউ) পড়তে আসেন। ১৯৮২-৮৪ সালের ব্যাচে এমএ পড়েছেন। প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হিসেবে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। তার পর হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি করতে চলে যান। এখন তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান এমআইটিতে অর্থনীতির ফোর্ড ফাউন্ডেশন ইন্টারন্যাশনাল প্রফেসর। সেখানে আরও দু’জনের সঙ্গে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন আব্দুল লতিফ জামিল পভার্টি অ্যাকশন ল্যাব (জে-পাল)।
তার আগে আরও একাধিক বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানে উচ্চপদ সামলেছেন অভিজিৎ বিনায়ক। ইতিমধ্যে অন্য আন্তর্জাতিক পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি। অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের দিগ্নির্দেশকারী অনেক নিবন্ধ লেখার পাশাপাশি চারটি উল্লেখযোগ্য বইও লিখেছেন। কয়েকটি বই সম্পাদনা করেছেন। তবে, তাঁর সবচেয়ে সাড়া জাগানো বইটির নাম ‘পুওর ইকনমিক্স’। সমাজটাকে কীভাবে দারিদ্র্যের করাল গ্রাস থেকে মুক্ত করা যায় তার নানা সম্ভাবনার কথা তিনি প্রয়োগের নিরিখে যুক্তি দিয়ে বুঝিয়েছেন। দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তিনি নতুন পথের সন্ধান দিয়েছেন। তা নিয়ে বিতর্কও হচ্ছিল। বিতর্কটা অবশেষে থেমেছে। নোবেল কমিটি স্বীকৃতি দিয়েছে আমাদের ঘরের ছেলের মেধাকে।
‘পুওর ইকনমিক্স’ বইটি সাত-আট বছর আগেই বেরিয়েছে। আমাদের দেশ অর্থনৈতিক পলিসি নির্ধারণে এটাকে কাজে লাগাতে পারে। আমি আশা করি, অনেক দেশই তাঁর উদ্ভাবিত পথটি নিয়ে অবশ্যই ভাববে। আমাদের দেশের সরকার কী করবেন? এই প্রশ্ন যদি করা হয়, তবে বলব—সরকার যেটা ভালো বুঝবেন করবেন। এটুকু বলতে পারি, ঘরের ছেলের কথা মানলে লাভই হবে।
অভিজিৎ যে মেধাবী ছাত্র ছিলেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। জেএনইউতে ওঁদের ব্যাচে চার-পাঁচজনের উচ্চ মেধার পরিচয় আমরা পেয়েছি। তাঁদের মধ্যেও অভিজিৎ ছিলেন ব্যতিক্রমী। জেএনইউতে পড়াকালেই তিনি আমাদের প্রত্যাশা জাগিয়েছিলেন। আমাদের আশা ছিল যে তিনি একদিন আন্তর্জাতিক খ্যাতি লাভ করবেন। আমার ৩৭ বছরের অধ্যাপনার জীবনে এমন ছাত্র আর পাইনি। আমরা তাঁকে বহু বছর আগেই চিনেছি। এবার নোবেল কমিটি আমাদের সঙ্গে সহমত হল।
নোবেল কমিটি এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘‘ওঁদের গবেষণা সারা পৃথিবীকে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই করার নতুন হাতিয়ারের সন্ধান দিয়েছে। মাত্র দু’দশকের গবেষণা পদ্ধতি ডেভেলপমেন্ট ইকনমিক্সের রূপরেখা পাল্টে দিয়েছে। অর্থনীতির গবেষণায় এটি একটি অনুসরণীয় মডেল হয়ে উঠল।’’
অভিজিৎ বিনায়কদের এই বিরাট সম্মানে আমরা ভীষণ খুশি, তৃপ্তি পেয়েছি। আজ আমাদের খুব আনন্দের দিন। জেএনইউয়ের ইকনমিক্স ডিপার্টমেন্ট খুব পুরনো নয়। ১৯৭৩ সালে জেএনইউয়ের অর্থনীতি বিভাগের যাত্রা শুরু। তার মধ্যেই একজন প্রাক্তনীর হাতে নোবেল পুরস্কার উঠল! আমরা তাঁকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। আশা করব, আগামী দিনের ছাত্র ও গবেষকরা এর দ্বারা অনুপ্রাণিত হবেন। নতুন নতুন পথের সন্ধানে অগ্রসর হওয়ার সাহস পাবেন তাঁরা।
এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি, অভিজিৎ বিনায়কের পিতা ইকনমিক্সের বিখ্যাত প্রফেসর দীপক বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন আমাদের স্যার। আমরা তখন প্রেসিডেন্সির ছাত্র।