বিদ্যার্থীদের বেশি শ্রম দিয়ে পঠন-পাঠন করা দরকার। কোনও সংস্থায় যুক্ত হলে বিদ্যায় বিস্তৃতি ঘটবে। কর্মপ্রার্থীরা ... বিশদ
কেবল এবার যমুনায় বিসর্জনে নিষেধাজ্ঞা নয়। এর আগেও কখনও পার্কে দুর্গাপুজোয় বাধা, কখনও প্যান্ডেল, কখনও প্রতিমার মাপ নিয়েও বিধিনিষেধ। বার বার দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে রাজধানী দিল্লিতে নিয়ম নির্ঘণ্টের প্রতিবাদে সরব প্রবাসী বাঙালি পুজো উদ্যোক্তাদের একাংশ। এভাবে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবের আচার এবং ঐতিহ্যের ওপর আঘাতের অভিযোগে দিল্লির উপ-রাজ্যপাল অনিল বাইজলকে চিঠি লিখে হস্তক্ষেপের দাবি করতে চলেছেন তাঁরা।
যমুনার ক্ষেত্রে ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইবুনালের নির্দেশ পালন করতে কড়া অবস্থান নিয়েছিল দিল্লি দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। যমুনার ঘাটে ছিল কড়া প্রহরারত পুলিস। বেড়া দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছিল এলাকা। এই প্রথমবার যমুনায় সম্পূর্ণ প্রতিমা নিরঞ্জনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল দিল্লি সরকার। তবে কৃত্রিম পুকুরের নামে যা হয়েছিল তা আদতে বিরাট চৌবাচ্চা। তাতে প্লাস্টিক পেতে পাড়ের চারদিকে সিমেন্টের বস্তা দিয়ে চাপা দেওয়া হয়েছিল। দিল্লি জল বোর্ড সরবরাহ করেছিল ট্যাঙ্কের পর ট্যাঙ্ক জল। দিল্লিরই কয়েকটি অংশে যেখানে পানীয় জলের অভাব মেটাতে জল বোর্ডকে ট্যাঙ্কের জল সরবরাহ করতে হয়, সেখানে এভাবে জল ব্যবহার নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
ক্রেনে করে ঠাকুর তুলে নিয়ে গিয়ে ফেলা হল চৌবাচ্চায়। কিন্তু প্রতিমার কাঠের কাঠামোয় থাকা লোহার পেরেক অনেক ক্ষেত্রেই ফুটো করে দিয়েছে পুকুরে পাতা প্ল্যাস্টিক। মুহূর্তে জল গলে গিয়ে শুষে নিয়েছে মাটি। শুকনো চৌবাচ্চায় অবহেলায় পড়ে আছে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবের আরাধ্য দুর্গা। যমুনায় নিরঞ্জন এড়াতে গোটা দিল্লিতে ১১৬ টি বিরাট মাপের পুকুর খোঁড়া হয়েছিল। এই ব্যবস্থায় পুজো কমিটির একাংশ ব্যাপক ক্ষুব্ধ।
পূর্বাঞ্চল বঙ্গীয় সমিতির আহ্বায়ক মৃণাল বিশ্বাস বললেন, পরিবেশ দূষণ এড়াতে যমুনায় বিসর্জনে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি ভালো। কিন্তু বিকল্প ব্যবস্থা ঠিক মতো হয়নি। দিল্লি জল বোর্ড ঠিক মতো জলের সরবরাহ করতে পারেনি। জেলাশাসকের পক্ষ থেকে সমন্বয়ের উদ্যোগ নেওয়া হলেও আদতে শেষমেশ ব্যবস্থা নিখুঁত হয়নি। পূর্বাঞ্চল বঙ্গীয় সমিতির অধীনে পূর্ব দিল্লির ৪২টি পুজো রয়েছে। অন্যদিকে, দিল্লির বাঙালি টোলা চিত্তরঞ্জন পার্কের মেলা গ্রাউন্ড, বি ব্লকের মতো বেশ কয়েকটি পুজো কমিটি নিজেদের পুজোর মাঠেই খোঁড়া পুকুরে বিসর্জন দিয়েছে। সিআর পার্কের মিলন সমিতির অন্যতম উদ্যোক্তা রতন মুখোপাধ্যায় বললেন, নতুন ব্যবস্থায় অধিকাংশ অখুশি হলেও আদালতের নির্দেশ অমান্য করা তো যায় না।
অবশ্য এভাবে বিসর্জন কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না দিল্লির অন্যতম পরিচিত পুজো নিউ দিল্লি কালীবাড়ি, পাণ্ডারা পার্কের নয়াদিল্লি পুজো কমিটির মতো বেশ কিছু পুজোর আয়োজক প্রবাসী বাঙালিরা। পাণ্ডারা পার্কের পুজোর এবার উদ্বোধন করেছেন লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা। এই পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা বাংলার এমপি অধীররঞ্জন চৌধুরী। নিউ দিল্লি কালীবাড়ির পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা স্বপন গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, নদীতে বিসর্জনের বদলে বিকল্প ব্যবস্থার প্রতিবাদে কৃষিকুঞ্জে কৃত্রিম পুকুরের পাড়ে ঠাকুর রেখে চলে এসেছি। ওভাবে ডাস্টবিনে দুর্গা প্রতিমা বিসর্জন দিতে পারব না। অধীরবাবু বললেন, এভাবে বাঙালি সংস্কৃতির অপমান মেনে নেওয়া যায় না। দিল্লির সরকার অসুরের মতো আচরণ করেছে। তাই প্রতিবাদে দিল্লির সব বাঙালিকে একজোট হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। একইভাবে লেফটেন্যান্ট গভর্নরকেও চিঠিও লিখছি। বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবকে কোনও মতেই অপমানিত হতে দেব না।