সঠিক বন্ধু নির্বাচন আবশ্যক। কর্মরতদের ক্ষেত্রে শুভ। বদলির কোনও সম্ভাবনা এই মুহূর্তে নেই। শেয়ার বা ... বিশদ
নাটকীয় ঘটনাপরম্পরা এবং রীতিমতো রাজনৈতিক সংঘাতে বুধবার রাতে হঠাৎই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল জাতীয় রাজনীতি। চিদম্বরমের বাসভবনের দেওয়াল টপকে ১৫ জন সিবিআই অফিসার ঢুকে পড়লেন এবং সোজা হাজির হলেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রীর অফিস চেম্বারে। ২০ মিনিট আগেই চিদম্বরম এআইসিসি দপ্তর থেকে ফিরেছেন নিজের বাসভবনে। গতকাল সারারাত চিদম্বরমকে বাসভবনে না পেয়ে আজ সকালেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা চিদম্বরমের বিরুদ্ধে লুক আউট নোটিস জারি করেছিল। যাতে চিদম্বরম দেশ ছেড়ে বিদেশে চলে যেতে না পারেন। চিদম্বরমের পক্ষে একঝাঁক আইনজীবী আজ সুপ্রিম কোর্টে তাঁর জামিনের আবেদন করেছেন দিনভর, কিন্তু দেখা পাওয়া যায়নি চিদম্বরমের। গ্রেপ্তারি এড়াতে গা ঢাকা দিয়েছেন বলে যখন জল্পনা তুঙ্গে ওঠে তখনই রাত ৮টায় চিদম্বরম নাটকীয়ভাবে হাজির হন কংগ্রেস দপ্তরে। সেখানে আগে থেকেই ছিলেন কংগ্রেসের আইনজীবী টিম। সলমন খুরশিদ, কপিল সিবাল, অভিষেক মনু সিংভি। এআইসিসি দপ্তরে হাজির হয়ে চিদম্বরম সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেন, আমি আইনকে সম্মান করা এক ভারতীয় নাগরিক। কিন্তু মিথ্যা প্রচার হচ্ছিল, আমি পালিয়ে বেড়াচ্ছি। আইএনএক্স মিডিয়া মামলায় আমি বা আমার পরিবারের কেউ অভিযুক্ত নয়। কোনও চার্জশিট পর্যন্ত জমা দেওয়া হয়নি। কিন্তু প্রচার করা হচ্ছে যেন আমি ও আমার পুত্র দুর্নীতি করেছি। আমার আইনজীবী বন্ধুরা আজ বারংবার সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছেন। তার আগে গতকাল গোটা রাত আমি ওই আবেদনের জন্যই আইনি কাগজ তৈরি করছিলাম। আমি আইনের দ্বারস্থ হতেই ব্যস্ত ছিলাম। পালাব কেন? আমি দেশের বিচারপ্রক্রিয়াকে সম্মান করি।
এরপরই কংগ্রেস অফিস ছেড়ে চিদম্বরম চলে যান বাসভবনে। কিন্তু নাটকের সমাপ্তি হয়নি তখনও। চিদম্বরম কংগ্রেস অফিসে বসে আছেন দেখেই তৎপর সিবিআই ও এনফোর্সমেন্ট অফিসাররা রওনা হয়ে যান। তাঁরা এআইসিসি দপ্তরে যাওয়ার আগেই অবশ্য চিদম্বরম পৌঁছে যান নিজের বাড়িতে। সিবিআই টিম ঠিক সাড়ে ৯টায় পৌঁছে যায় সেখানে। মনে করা হচ্ছিল সিবিআই টিম ভিতরে ঢোকার জন্য সিকিওরিটি গার্ডকে বলবে। কিন্তু ডোরবেল না বাজিয়েই হঠাৎ সিবিআই অফিসাররা দেওয়াল টপকাতে শুরু করেন। অন্য এক টিম চলে যায় পিছনের গেটে। দিল্লি পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে পিছনের গেট থেকেও ঢুকে পড়ে। গোটা বাড়ি ঘিরে ফেলা হয়।
গতকাল মধ্যরাতেই সিবিআই এবং এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট তাঁকে খুঁজতে গিয়ে না পেয়ে দিল্লির বাসভবনের বাইরে নোটিস লাগিয়ে দিয়ে এসেছিল। চিদম্বরমের পক্ষে চরম অসম্মান ও অস্বস্তিকরও বটে যে, সাধারণ অপরাধীর মতোই একজন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে লুক আউট নোটিস জারি করা হল। সকালেই সুপ্রিম কোর্ট চিদম্বরমের পক্ষে হওয়া জামিনের আবেদন জমা নিলেও দ্রুত শুনানি করে তাঁকে গ্রেপ্তারি থেকে রেহাই দেওয়ার আশাপূরণ করেনি। শুনানির দিন ধার্য হয়েছে শুক্রবার। সুতরাং চিদম্বরমের পক্ষে গ্রেপ্তারি এড়ানো সম্ভব নয় বলেই মনে করা হচ্ছিল দিনভর। ২০০৭ সালে তিনি অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন একটি মিডিয়া সংস্থাকে বিদেশি লগ্নি পাইয়ে দিতে সহায়তা করেছিলেন এবং সেই ডিলে তাঁর পুত্র কার্তি চিদম্বরম কমিশন পেয়েছে, এই অভিযোগে চিদম্বরমের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। সিবিআই এবং এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট তদন্ত করছে। এবং তারা আদালতে জানিয়েছে চিদম্বরমই এই মামলার প্রধান অভিযুক্ত। চিদম্বরমের মতো একজন প্রাক্তন মন্ত্রী ও ওজনদার কংগ্রেস নেতাকে এভাবে দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলি যথেষ্ট আতঙ্ক ছড়িয়েছে বিরোধীদের মধ্যেও। কারণ বিরোধী দলগুলির বিরুদ্ধেও বিভিন্ন মামলায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা তদন্ত করছে। নিয়মিত চলছে জেরা ও তল্লাশি। সুতরাং চিদম্বরমের পর কাকে গ্রেপ্তার করার পথে হাঁটবে কেন্দ্রীয় সংস্থা সেটা নিয়ে এখন থেকেই জল্পনা তুঙ্গে উঠেছে।