লখনউ, ২১ আগস্ট: ডাক্তারি পড়ুয়াদের উপর র‌্যাগিংয়ের অভিযোগ উঠল উত্তরপ্রদেশে। ঘটনাটি ঘটেছে সাফাই গ্রামের উত্তরপ্রদেশ ইউনিভার্সিটি অব মেডিক্যাল সায়েন্সে। এই সংক্রান্ত বেশকিছু ভিডিও ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, প্রায় ১৫০ জন প্রথম বর্ষের পড়ুয়ার মাথা কামিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের পরনে সাদা পাঞ্জাবি। সারিবদ্ধভাবে তারা রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। পাশাপাশি, জগিং করতে করতে অনেককে স্যালুটও করছে পড়ুয়ারা। এই ঘটনায় অভিযোগের আঙুল উঠেছে ওই বিশ্ববিদ্যালয়েরই সিনিয়র ছাত্রদের বিরুদ্ধে। এদিকে, ওই সময় ক্যাম্পাসে থাকা কোনও ব্যক্তি র‌্যাগিংয়ের ঘটনাটি ক্যামেরাবন্দি করেন। তা প্রকাশ্যে আসতেই বেশ চাপে কর্তৃপক্ষ। নিন্দার ঝড় উঠেছে বিভিন্ন মহলে। এই জঘন্য ঘটনার সঙ্গে যুক্তদের কড়া শাস্তির আশ্বাস দিয়েছেন উত্তরপ্রদেশ ইউনিভার্সিটি অব মেডিক্যাল সায়েন্সের উপাচার্য ডা. রাজ কুমার।
এদিন, যোগী আদিত্যনাথের রাজ্যের এই র‌্যাগিংয়ের ঘটনার মোট তিনটি ভিডিও সামনে এসেছে। প্রথমটিতে দেখা যাচ্ছে, রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলেছে সারি সারি পড়ুয়া। তাদের পরনে সাদা পাঞ্জাবি ও পাজামা এবং সকলেরই মাথা নেড়া। পরের ভিডিওতে, পড়ুয়ারা জগিং করতে করতে সিনিয়রদের স্যালুট করছে। ঘটনার সময় সামনেই এক নিরাপত্তারক্ষী দাঁড়িয়ে ছিলেন, কিন্তু তাঁকেও কোনওপ্রকার বাধা দিতে বা প্রতিবাদ করতে দেখা যায়নি। তৃতীয় ও শেষ ভিডিওতে এই বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে।
এই ঘটনায় স্বাভাবিকভাবে মুখ পুড়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। উপাচার্যের দাবি, ক্যাম্পাসে র‌্যাগিং রুখতে আলাদা ডিন রয়েছেন। পাশাপাশি, অ্যান্টি র‌্যাগিং কমিটিও অত্যন্ত সক্রিয়। কমিটির সদস্যরা প্রায়ই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রান্তে নজরদারি চালায়। ডা. রাজ কুমারের দাবি সত্ত্বেও কী করে এই ঘটনা ঘটল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এছাড়া, তিনি জানান, এর আগে একই অপরাধে যুক্ত থাকায় বেশ কয়েকজনকে সাসপেন্ড করেছে কর্তৃপক্ষ। এবারও দোষীরা কেউ ছাড়া পাবে না। জুনিয়র ছাত্রদের প্রতি তাঁর বার্তা, ভয় পাওয়ার কিছু নেই। র‌্যাগিংয়ের মতো ঘটনা ঘটলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যান্টি র‌্যাগিং কমিটি বা ওয়ার্ডেনকে অভিযোগ জানাও।
প্রসঙ্গত, উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মুলায়ম সিং যাদব এবং তাঁর ছেলে অখিলেশের পৈতৃক গ্রাম হল সাইফাই। এখানেই এই বিশ্ববিদ্যালয়টি অবস্থিত। এদিকে, র‌্যাগিং নিয়ে সচেতনতা প্রচার করা বা কমিটি গড়া হলেও বিভিন্ন সময় সেগুলির কার্যকারিতা নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠছে। গতমাসেই, সহপাঠিদের র‌্যাগিংয়ের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করে হায়দরাবাদের ১৪ বছরের এক স্কুল ছাত্র। পাশাপাশি, মার্চেও তামিলনাড়ুর দুই কলেজ পড়ুয়া আত্মহত্যার করে। এতেও অভিযোগের আঙুল ওঠে কলেজের সিনিয়র ছাত্রদের বিরুদ্ধেই। পরিসংখ্যানের দিক থেকের‌্যাগিংয়ের কারণে আত্মঘাতীর সংখ্যা চিন্তা বাড়িয়েছে সংশ্লিষ্ট মহলের। মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী প্রকাশ জাভরেকরের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালে ৪২৩টি র‌্যাগিংয়ের অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। ২০১৭-তে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৯০১-এ।