নয়াদিল্লি, ২০ আগস্ট (পিটিআই): আর বাকি ১০ দিন। আগামী ৩১ আগস্ট অসমে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি)’র চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হবে। সেই তালিকায় দেশের নাগরিক হিসেবে কে থাকবেন, কে থাকবেন না, তা নিয়ে অসমবাসীর উৎকণ্ঠা ক্রমেই বাড়ছে। তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত না হলেই কি ‘বিদেশি’ বলে চিহ্নিত করা হবে? এমন প্রশ্নকে ঘিরেও ভয়ভীতির প্রহর গুনতে শুরু করেছে গোটা অসম। এই পরিস্থিতিতে অসমবাসীকে খানিক আশ্বস্ত করল মোদির সরকার। মঙ্গলবার কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়ে দিয়েছে, চূড়ান্ত তালিকায় নাম না থাকা মানেই তিনি ‘বিদেশি’ হয়ে যাবেন, এমনটা নয়। পরবর্তী সময়ে পুনর্বিবেচনার সব রাস্তাই খোলা থাকছে। বাড়ানো হবে আবেদনের মেয়াদও। তবে এই আশ্বাসের মধ্যেও চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের দিন অশান্তির মেঘও দেখতে পাচ্ছে সরকার। সেই কারণে অসমজুড়ে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থাও রাখা হচ্ছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর। পাশাপাশি, চূড়ান্ত তালিকা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো ঠেকাতে সতর্ক ‘দ্য এনআরসি স্টেট কোঅর্ডিনেটর অফিস। এদিন এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে বলা হয়েছে, এনআরসি বিরোধীরা সোশ্যাল মিডিয়ায় চূড়ান্ত তালিকা সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য প্রকাশ করছেন। ওইসব তথ্যের সঙ্গে এনআরসি অফিসের কোনও সম্পর্ক নেই। বিভ্রান্তি ছড়াতেই এসব করা হচ্ছে বলে কোঅর্ডিনেটর প্রতীক হ্যাজেলার অফিসিয়াল ট্যুইটারে বার্তা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, দু’দিনের সফরে বাংলাদেশে রয়েছেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। দু’দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠক করেন তিনি। সেখানে এনআরসি থেকে শুরু করে তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি সহ একাধিক বিষয়ে উভয়ের বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলে খবর। পরে যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে এনআরসি ইস্যুতে বাংলাদেশের কাছে ভারতের অবস্থান স্পষ্ট করে জয়শঙ্কর জানিয়ে দিয়েছেন, অসমের এনআরসির বিষয়টি পুরোপুরি ভারতের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। তবে তিস্তার জলবণ্টন চুক্তি সংক্রান্ত আলোচনা ইতিবাচক হয়েছে বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমগুলির দাবি। মোমেনও বলেছেন, ‘অত্যন্ত ভালো পরিবেশে ভারতের বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। বিভিন্ন বিষয়ে ফলপ্রসু আলোচনা হয়েছে।’
গতকাল এনআরসি’র চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ নিয়ে অসমের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনওয়ালের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে বসেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্র ও রাজ্যের অন্যান্য আধিকারিকরাও। ওই বৈঠকেই চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পরও পুনর্বিবেচনার রাস্তা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানা গিয়েছে। বৈঠকের পরে অমিত শাহ নিজেই বলেছেন, ‘চূড়ান্ত তালিকায় নাম না উঠলে সংশ্লিষ্ট আবেদনকারী ‘বিদেশি’ বলে ঘোষিত হয়ে যাবেন, এমনটা ভেবে নেওয়ার কোনও কারণ নেই। তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য তিনি আবারও আবেদন করার সুযোগ পাবেন।’ পূর্ব নির্ধারিত নিয়মেই এই আবেদন করা যাবে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে। বাড়ানো হচ্ছে আবেদনের সময়সীমাও। এক বিবৃতিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, আবেদনের সময়সীমা ছিল ৬০দিন। সেটা বাড়িয়ে করা হবে ১২০দিন। পাশাপাশি, অভাবী আবেদনকারীদের আর্থিক সহযোগিতা করার বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ওই বৈঠকে।
এর আগে এনআরসি নিয়ে দু’বার খসড়া তালিকা প্রকাশ করেছিল অসম সকার। গত বছর ৩০ জুলাই একটি খসড়া তালিকা প্রকাশিত হয়। সেই তালিকায় প্রায় ৪০ লক্ষ ৭০ হাজার আবেদনকারীর নাম বাদ পড়েছিল। তা নিয়ে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়। পরে খসড়া তালিকা তৈরির প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করে সর্বোচ্চ আদালত। গত জুন মাসে সংশোধিত খসড়া তালিকা প্রকাশ করে অসম সরকার। তাতেও দেখা যাচ্ছে, এক লক্ষেরও বেশি আবেদনকারীর নাম অন্তর্ভুক্ত হয়নি। এবার চূড়ান্ত তালিকায় কতজন আবেদনকারীর নাম অন্তর্ভুক্ত হয় কিংবা বাদ পড়ে সেটাই এখন দেখার।