আবেগের বশে কোনও কাজ না করাই ভালো। দাম্পত্য জীবনে বনিবনার অভাবে সংসারে অশান্তি বাড়বে। কর্মে ... বিশদ
দুই শিবিরের এই তৎপরতার মাঝে তাল ঠুকছে বিজেপি। স্পিকারের সিদ্ধান্তকে তাঁরা ‘পাখির চোখ’ করে বসে রয়েছে। দলের রাজ্য সভাপতি বি এস ইয়েদুরাপ্পা এদিন বলেছেন, ‘কংগ্রেস-জেডিএসের দলত্যাগী বিধায়কদের পদত্যাগ পত্র নিয়ে স্পিকার কী সিদ্ধান্ত নেন, সেটাই লক্ষ্য করছি। তারপরেই পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে দল। কর্ণাটকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের মুখে দাঁড়িয়ে বিজেপি। এবার দেখতে থাকুন, জল কোন দিকে গড়ায়।’
অন্যদিকে, যাঁদের ঘিরে সরকারের সঙ্কট চরমে উঠেছে, সেই দলত্যাগী বিধায়করা কোথায়, তা নিয়ে জল্পনা এখন তুঙ্গে। একটি সূত্রের খবর, গতকাল স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার পরই মুম্বইয়ে উড়ে গিয়েছেন তাঁরা। যে চাটার্ড বিমানে তাঁরা উঠেছিলেন সেটি ‘জুপিটার ক্যাপিটাল’ নামে একটি সংস্থার। ওই সংস্থার কর্ণধার আবার বিজেপির রাজ্যসভার এমপি রাজীব চন্দ্রশেখর। ফলত দলত্যাগী বিধায়কদের মুম্বই যাত্রা নিয়ে বিজেপিকে নিশানা করেছে কংগ্রেস। যদিও এই খবরের সত্যতা মানতে চাননি মহারাষ্ট্রের বিজেপি নেতৃত্ব। দলের মুখপাত্র কেশব উপাধ্যায় বলেছেন, ‘বিজেপি, জেডিএসের দলত্যাগী বিধায়করা মুম্বই এসেছেন কি না, তা আমার জানা নেই। আমরা এখন সদস্য সংগ্রহ অভিযানে ব্যস্ত। তবে ওই উড়ান সংস্থার এক কর্মকর্তার ব্যাখ্যা, ‘আমাদের চাটার্ড বিমান বহু লোকই ভাড়া নেন। কারা কী প্রয়োজনে নিচ্ছেন, তা জানা আমাদের কাজ নয়।’
সুতোর উপর ঝুলতে থাকা সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জোট সরকার চালাতে গিয়ে ল্যাজেগোবরে অবস্থা মুখ্যমন্ত্রী কুমারস্বামীর। দীর্ঘ প্রায় ১৩ মাস নানা টানাপোড়েনের মধ্যে চলতে হয়েছে তাঁকে। সর্বশেষ ধাক্কাটা এসেছে গতকাল। কংগ্রেস ও জেডিএস মিলিয়ে মোট ১১ জন বিধায়ক পদত্যাগ করেছেন। একযোগে তাঁরা পদত্যাগপত্রও জমা দিয়েছেন স্পিকার কে আর রমেশ কুমারের কাছে। শেষ খবর, স্পিকার তাঁদের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেননি। এর আগেও কংগ্রেসের দুই বিধায়ক পদত্যাগ করেছেন। এখন পরিস্থিতি যা, তাতে ১১ জন বিধায়কের পদত্যাগপত্র স্পিকার গ্রহণ করলেই কর্ণাটকের জোট সরকার ভেঙে পড়বে। সেক্ষেত্রে সরকার গঠনে একরকম মুখিয়ে রয়েছে মোদি-শাহ জুটি।
এদিন অবশ্য কংগ্রেসের সিনিয়র নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেছেন, ‘বিজেপির সেই আশা কোনওভাবেই পূরণ হবে না। দলের বিদ্রোহী বিধায়কদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ রয়েছে। তাঁরা সরকার ফেলে দেওয়ার মতো দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ করবেন না। ১২ জুলাই কর্ণাটক বিধানসভার অধিবেশন শুরু হচ্ছে। ওইদিনই স্পষ্ট হয়ে যাবে জোট সরকারই ক্ষমতায় থাকছে। এবং কোনওরকম জটিলতা ছাড়াই সরকার চলবে। সেই সঙ্গে তাঁর মুখ্যমন্ত্রী হওয়া নিয়ে যে জল্পনা শুরু হয়েছে, তাতেও জল ঢেলে দিয়েছেন খাড়গে। তিনি বলেছেন, ‘কংগ্রেসের ভিতর বিভাজন তৈরি করতে এমন অপপ্রচার ছড়ানো হচ্ছে। কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার কোনও বাসনা আমার নেই।’
কর্ণাটক সরকারের সঙ্কটের পিছনে ‘মুখ্যমন্ত্রীর পদ’ একটি বড় ফ্যাক্টর বলে মনে করছে রাজনীতির কারবারিরা। কারণ, দলত্যাগী বিধায়করা নাকি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে প্রদেশ কংগ্রেসের শীর্ষনেতা তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধারামাইয়াকে বেশি পছন্দ করছেন। এমনটাই রাজনৈতিক মহলের খবর। ফলে জোট সরকারের সঙ্কটের পিছনে তাঁকে দোষারোপ করা হচ্ছে ঘরে, বাইরে। রাখঢাক না করে সঙ্কটের পিছনে সিদ্ধারামাইয়াকে কাঠগড়ায় তুলেছেন রাজ্যের সংসদীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশি। গতকাল তিনি বলেছেন, ‘সরকার ঠিকঠাক চলুক, তা চান না সিদ্ধারামাইয়া। কারণ, তিনি আবারও মুখ্যমন্ত্রী কুর্সিতে বসার খোয়াব দেখছেন।’ এদিন যোশির দাবি খণ্ডন করে সিদ্ধারামাইয়া বলেছেন, ‘এসব নিয়ে জবাব দেওয়ার সময় এটা নয়। তবে এটা বলতে পারি, কোনও ব্যক্তি কিংবা আমাকে নয়। দলের প্রতি আনুগত্য বজায় রাখুক সকলেই। এটাই প্রত্যাশিত।’
আর এই আনুগত্যের প্রশ্নে দলত্যাগী বিধায়কদের ঘরে ফিরিয়ে আনাই এখন কংগ্রেস-জেডিএসের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। তাতে দ’দলের নেতারা কতখানি সফল হন, সেটাই এখন দেখার। রাজনৈতিক মহলের নজরও সে দিকেই।