বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
এই দুই যুগপুরুষের ছবি আলাদা করে রাখলে বাঙালি পরিবারের যে কোনও শিশুও তাঁদের চিনতে ভুল করে না। তবে শিশুরা চিনতে পারলেও কিছু বয়স্ক মানুষ অনেক সময় অমার্জনীয় ভুল করে বসেন। রামমোহন ভেবে মালা দিয়ে দেন বঙ্কিমের গলায়। তারপর ত্রুটি চাপা দিতে বলেন, ‘ফিনিশিং (মূর্তির) ভালো হয়নি বলে ঠিক বোঝা যাচ্ছে না।’ কারও বক্তব্য, ‘তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে বুঝতে অসুবিধে হয়েছে।’
বিস্মিত করে দেওয়া এই ঘটনা ঘটেছে কল্যাণীতে। সোমবার রাজা রামমোহন রায়ের ২৫১ তম জন্মদিবস। সেই উপলক্ষ্যে কল্যাণী শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলার শ্যামল দাস রামমোহনের মূর্তিতে মাল্যদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন। সেই অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ওয়ার্ড সেক্রেটারি তথা স্কুল শিক্ষক লক্ষ্মীকান্ত রায়। তাঁরা সদলবলে গিয়ে রামমোহনের বদলে বঙ্কিমের গলায় মালা দেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় ওয়ার্ডের নিজস্ব পেজে অনুষ্ঠানের ছবি পোস্ট করেন। সেখানে ঘটা করে লেখেন, ‘৬ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির পক্ষ থেকে আধুনিক সমাজ তথা নবজাগরণের প্রাণপুরুষ রাজা রামমোহন রায়ের জন্মদিন পালিত হল।’
প্রসঙ্গত পুরসভা নিজে এই দুটি মূর্তি স্থাপন করেছিল। রাজা রামমোহন রায়ের মূর্তি রয়েছে ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পিকনিক গার্ডেন বাস স্ট্যান্ডের কাছে। আর বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মূর্তিটি রয়েছে ওই ওয়ার্ডেরই মাঝেরচর থেকে বেরনোর রাস্তার মোড়ে। এদিন মাঝেরচরে সদলবলে গিয়ে বঙ্কিমের মূর্তির গলায় মালা দেন কাউন্সিলার। অনুষ্ঠানে পুরসভার চেয়ারম্যানকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তিনি ব্যস্ত থাকার কারণে যোগ দিতে পারেননি।
কাউন্সিলার বেশি কথা বাড়াননি। বলেন, ‘আগামিদিনে যাতে এরকম ভুল না হয় সে দিকে খেয়াল রাখব।’ ওয়ার্ড সেক্রেটারি আবার মচকাবেন না। বলেন ‘আমাকে কাউন্সিলার ডেকেছিল। এরপর আমি সেখানে গিয়ে মালা দিয়েছি।’ কৃষ্ণা মাহাতো নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, ‘ওয়ার্ড সেক্রেটারি স্কুলের শিক্ষক। তিনি কিভাবে এই ভুল করলেন? আমি রাজা রামমোহন রায়ের মূর্তিতেই মালা দিয়ে এসেছি।’
ভুল প্রকাশ্যে আসার পর অবশ্য চটজলদি সোশ্যাল মিডিয়ার পেজ থেকে ওই পোস্ট ডিলিট করে দেওয়া হয়। তবে ততক্ষণে পোষ্টটির স্ক্রিনশট ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। এরপর রাজ্যজুড়ে শুরু হয়ে যায় সমালোচনা। ঠাট্টা ইয়ার্কিও চলতে থাকে সমানতালে। একজন বলেন, ‘দোষটা তৃণমূল কাউন্সিলারের নয়। দুই মনীষীর মাথাতেই পাগড়ি। তাই চিনতে অসুবিধা হয়েছে।’ আর একজনের বক্তব্য, ‘২৬ জুন বঙ্কিমচন্দ্রের জন্মদিবস। সেদিন কি রামমোহনের মূর্তিতে মালা দিয়ে দোষস্খালন করে নিতে পারেন ওঁরা?’