নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: গত পাঁচবছরে বাংলার সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্ত সংগ্রহ বাড়ল দেড় লক্ষ ইউনিটেরও বেশি। ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে বাংলার সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কগুলির মোট রক্তসংগ্রহ ছিল ৭ লক্ষ ৮৯ হাজার ৭০২ ইউনিট। এবছর, মার্চ পর্যন্ত যা হতে চলেছে (সম্ভাব্য) ৯ লক্ষ ৪৩ হাজার ৭০৬ ইউনিট। পাঁচবছরে রক্তসংগ্রহ বেড়েছে ১ লক্ষ ৫৪ হাজার ৪ ইউনিট। স্বাস্থ্যদপ্তরের রক্ত নিরাপত্তা শাখা সূত্রে এই খবর জানা গিয়েছে। দপ্তরের এক পদস্থ কর্তা বলেন, কোভিডের জন্য দু’তিনবছর বাংলার রক্তসংগ্রহ ভীষণ কমে গিয়েছিল। এমন কথা আমাদের প্রায়ই শুনতে হয়। বাস্তব পরিসংখ্যান বলছে অন্য কথা। রক্তসংগ্রহে কোভিডের সিরিয়াস প্রভাব আমরা শুধুমাত্র দেখেছি ২০২০-২১ অর্থবর্ষে। না-হলে ২০১৮-২৩, পাঁচবছরের বাকি বছরগুলি রক্ত সংগ্রহ বেড়েই গিয়েছে। যদিও এই পরিসংখ্যানকে সন্দেহের চোখে দেখছেন রক্তদান আন্দোলন কর্মীদের একাংশ। রাজ্য রক্ত সঞ্চালন পর্ষদের প্রাক্তন সদস্য অচিন্ত্য লাহা বলেন, ‘আমরা রাস্তায় নেমে হাতেকলমে যা দেখছি, তার সঙ্গে এই পরিসংখ্যান মেলা কঠিন। এখনও বহু ব্লাড ব্যাঙ্কে, রক্তদাতা নিয়ে গেলে তবেই রক্ত দেওয়া হচ্ছে। রাতবিরেতে রক্ত পেতে গিয়ে নাকালের একশেষ হতে হচ্ছে। স্বাস্থ্যকর্তাদের বলব, পরিসংখ্যানের উন্নতি না করে বরং মানুষের ভোগান্তি কমান।’
সূত্রের খবর, গত পাঁচবছরে রক্তদান শিবিরের সংখ্যাও বেড়েছে। ব্যতিক্রম শুধু করোনার দু’টি বছর। ২০১৯-২০ এবং ২০২০-২১। এই দু’বছর বাদ দিলে ব্লাড ডোনেশন ক্যাম্পের সংখ্যা বেড়েছে। সামগ্রিকভাবে রক্তদান শিবিরের সংখ্যা এই পাঁচবছরে বেড়েছে ২৫৩৮ (এবছর মার্চের ফল না আসায় সম্ভাব্য)। আরও একটি সুখবর হল, গত পাঁচবছরে রক্তের উপাদান পৃথকীকরণের হার ৬৯ শতাংশ থেকে বেড়ে এখন নব্বইয়ের ঘরে (৯৪) পৌঁছেছে।
যদিও রক্তদান শিবির বৃদ্ধি পরিসংখ্যান নিয়েও সন্দিহান স্বেচ্ছা রক্তদান আন্দোলনের কর্মীরা। তাঁদের বক্তব্য, রক্ত দিয়ে তবে রক্ত পাওয়া গেলে, সেই দানকে এক্সচেঞ্জ ডোনেশন বলা হয়। বিপাকে পড়ে এক্সচেঞ্জ ডোনেশন করতে বাধ্য হওয়া মানুষজনের হিসেবই পরিসংখ্যানে ধরছে স্বাস্থ্যভবন। রক্ত নিরাপত্তার শাখার পদস্থ কর্তা অবশ্য এই অভিযোগ মানতে নারাজ। তিনি বলেন, আমরা ইনহাউস বা ব্লাড ব্যাঙ্কের মধ্যে আয়োজিত রক্তদান শিবিরের হিসেব ধরেছি। এক্সচেঞ্জ ডোনেশনের হিসেব ধরার প্রশ্নই আসে না।