নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: চোরাগোপ্তা আক্রমণ হেনে ‘শত্রু’ নিকেশ করতে দেশজুড়ে ‘হিট স্কোয়াড’ তৈরি করেছিল পপুলার ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়া (পিএফআই)। সেই স্কোয়াড তৈরির তোড়জোড় শুরু হয়েছিল এ রাজ্যেও। নিষিদ্ধ ঘোষিত হওয়ার প্রাক্কালে কলকাতা সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পিএফআই অফিসে হানা দিয়ে যে তথ্য পেয়েছেন এনআইএ এবং ইডি’র তদন্তকারীরা, তা থেকেই সামনে এসেছে হিট স্কোয়াডের বিষয়টি। তদন্তকারীরা বলছেন, পিএফআই’এর পূর্বসূরী ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ফ্রন্টও এর আগে তৈরি করেছিল ‘জিহাদি শাহাদাত’ নামে একটি হিট অ্যান্ড রান স্কোয়াড। পিএফআই’এর হিট স্কোয়াড, সেই জিহাদি শাহাদাতের নবতম সংস্করণ। এ রাজ্যের মুর্শিদাবাদ ও মালদহের কয়েকজন যুবকের মগজধোলাই করে হিট স্কোয়াড তৈরির কাজ শুরু করেছিল পিএফআই। গত ২২ সেপ্টেম্বর দেশজুড়ে এনআইএ-ইডি’র অভিযানের সময় কলকাতার তিলজলা রোডে পিএফআই দপ্তর থেকে হার্ডডিস্ক, কয়েকটি পাসপোর্ট, বাংলা ও উর্দু ভাষার লিফলেটের সঙ্গেই বেশ কয়েকটি ইউনিফর্ম উদ্ধার করা হয়েছিল। নীল জামা ও প্যান্টের ওই ইউনিফর্মের সঙ্গেই মিলেছিল ‘ট্রেনিং শু’ও। কী কারণে সেগুলি কলকাতা দপ্তরে জোগাড় করা হয়েছিল, তা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা। গোয়েন্দারা বলছেন, এনএসজি কমান্ডো শেখর রাঠোর, কেরলের তাঞ্জাভুরের আরএসএস কর্মী রামলিঙ্গম এবং বেঙ্গালুরুর রুদ্রেুশ হত্যাকাণ্ডে সরাসরি নাম জড়িয়েছিল পিএফআই হিট স্কোয়াডের।
গোয়েন্দারা বলছেন, ধৃত পিএফআই কর্মীদের জেরা করে জানা গিয়েছে, তুরস্ক সহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে সংগৃহীত অর্থ নানাভাবে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের কাছে পৌঁছেছে। এ কাজে ব্যবহার করা হয়েছে হাওয়ালা রুট। এই অর্থের একটা অংশ আবার কর্মীদের ট্রেনিংয়ে ব্যবহার করা হয়েছে। পিএফআই’এর ভাষায় হিট স্কোয়াডগুলিকে ‘অপারেশনাল স্কোয়াড’ও বলা হয়। চার-পাঁচজনের এই স্কোয়াড একটি নির্দিষ্ট কাজ সম্পন্ন করার জন্য তৈরি করা হয়। কাজ শেষ হলেই স্কোয়াড শেষ। বরাত অনুযায়ী ফের তৈরি হতো স্কোয়াড। গোয়েন্দারা বলছেন, অপারেশনের সময় হিট স্কোয়াডকে সাহায্য করার জন্য তৈরি রাখা হয় ‘সাপোর্ট টিম’। অপারেশনে অংশগ্রহণকারীদের নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য মোটর সাইকেল নিয়ে অপেক্ষা করে সাপোর্ট টিম। পুলিসের নজর এড়িয়ে অলিগলি দিয়ে পালিয়ে যাওয়াই তাদের কাজ। গোয়েন্দারা বলছেন, দেশজুড়ে বড়সড় নাশকতা ও হাঙ্গামার পরিকল্পনা করেছিল পিএফআই। ঠিক সময়ে হস্তক্ষেপ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করলে, দেশের অভ্যন্তরীন নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন খাড়া হতো।