কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
বর্তমানে সমাজের সবরকম পেশাতেই নারীরা হাত লাগিয়েছেন। তেমনই ফুচকা বিক্রিতে নেমেছে বোলপুর বিবেকানন্দ বিদ্যাপীঠের নবম শ্রেণির ছাত্রী কবিতা। তার বাবা কপিলদেব শাহ বোলপুরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাঁধগোড়া সবুজপল্লির বাসিন্দা হলেও ২০বছর ধরে বিশ্বভারতীর ক্যাম্পাসের ফার্স্ট গেটে ফুচকা বিক্রি করছেন। এই ফুচকা বিক্রি করেই দীর্ঘদিন ধরে সংসার চালিয়ে আসছেন তিনি। পাঁচজনের সংসারে বিপর্যয় নামে গতবছর লকডাউন পর্বে। করোনা মহামারীর কারণে অন্যান্য ছোট ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি হাল খারাপ ছিল কপিলদেবেরও। এরপর গত বছর নভেম্বর মাস থেকে করোনা সংক্রমণ নিম্নমুখী হতেই ফের ফুচকা বিক্রি শুরু করেন কপিলদেব। কিন্তু কিছুদিন ব্যবসা করার পরেই বোলপুর-শান্তিনিকেতন রাস্তায় পথদুর্ঘটনায় তাঁর হাত ভেঙে যায়। হাত জোড়া লাগাতে প্লেট পর্যন্ত বসাতে হয়। এসবে ৫০ হাজার টাকারও বেশি খরচ হয়। ধার করে সেই টাকা জোগাড় করেন কপিল। কিন্তু এরপর তার হাত থেকে প্লাস্টার খোলা হলেও আগের মতো সচল না হওয়ায় ফুচকা বিক্রি করতে হিমশিম খেতে হয় তাঁকে। ফলে একপ্রকার কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে গোটা পরিবার। এসব দেখে বাবাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে ওই ছাত্রী। ছোট থেকেই কবিতা বাবাকে ফুচকা তৈরি ও বিক্রি করতে দেখছে। তাই ছোটবেলা থেকে ফুচকা তৈরিতে হাত লাগালেও মেয়ে যে ফুচকা বিক্রি করবে তা একেবারেই পছন্দ ছিল না কপিলের। কিন্তু পরিস্থিতির ফেরে একপ্রকার বাধ্য হয়েই মেয়ের ফুচকা বিক্রির বিষয়টি মেনে নেন তিনি। প্রথম প্রথম অসুবিধা হলেও দেড় মাস ধরে ফুচকা বিক্রি করার ফলে এখন রীতিমতো হাত পাকিয়েছে কবিতা। কবিতার ‘পাকা হাত’ দেখে অবাক হচ্ছেন ফুচকা খেতে আসা অনেকে। তবে এতকিছুর মাঝে পড়াশোনা বন্ধ হয়নি কবিতার। সে বলে, করোনা সংক্রমণের জেরে স্কুলের স্বাভাবিক পঠনপাঠন বন্ধ হওয়ায় অনলাইনে নিয়ম করে চলছে পড়াশোনা। ফাঁকি নেই টিউশনিতেও। সামনের বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা। তাই এখন থেকেই ফুচকা তৈরি ও বিক্রির ফাঁকেই পরীক্ষার প্রস্তুতি চলছে। বোলপুর বিবেকানন্দ বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষিকা শুভ্রা ঘোষ বলেন, আমাদের স্কুলে মূলত পিছিয়ে পড়া পরিবারের পড়ুয়ারা পড়াশোনা করে। কবিতা যেভাবে বাবাকে সাহায্য করছে তা একটা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ওর পড়াশোনার জন্য আমরা সর্বতোভাবে সাহায্য করতে তৈরি। কবিতার মতো মেয়েরা সমাজকে পথ দেখাক।