সংবাদদাতা, পতিরাম: গত আগস্ট মাসের শেষদিনে  আলাদা রাষ্ট্রের দাবিতে সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছিলেন জঙ্গি সংগঠন কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (কেএলও) প্রচার সচিব পিন্টু বড়ুয়া কোচ। সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে তৈরি হবে সেই পৃথক রাষ্ট্র, এহেন হুমকিও ছিল সেই বিবৃতিতে। কেএলও’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুদীপ সরকার ওরফে পিন্টুর সেই ‘স্বপ্ন’, ভঙ্গ হল মাত্র দু’মাসের মধ্যেই।  আলাদা রাষ্ট্র আদায়ের মোহ ছেড়ে, দেশের আইনের দ্বারস্থ হলেন কেএলও’র ওই জঙ্গি। গোপন ঘাঁটি থেকে ফিরে সোমবার দক্ষিণ দিনাজপুরের পুলিস সুপারের কাছে আত্মসমর্পণ করলেন সুদীপ ওরফে পিন্টু। সোমবার কেএলও’র এই জঙ্গিকে নিয়েই বালুরঘাটে জেলা পুলিস সুপারের দপ্তরে সাংবাদিক সম্মেলন হয়। 
কিন্তু কেন এই স্বপ্নভঙ্গ? তা এখনও পরিষ্কার নয়। তবে পিন্টু এই বিষয়ে জানিয়েছেন, বর্তমানে রাজ্য সরকারের উন্নয়ন দেখেই সমাজের মূল স্রোতে ফিরে আসার জন্য তিনি আত্মসমর্পণ করেছেন। এদিকে সূত্রের খবর, কেএলও জঙ্গি সংগঠনে চরম আর্থিক সঙ্কট শুরু হয়েছে। টান পড়েছে অস্ত্র ভাঁড়ারেও। মোহভঙ্গ হওয়ায় অনেকেই আত্মসমর্পণ করতে চাইছে। পাশাপাশি মায়ানমার এবং বাংলাদেশে জঙ্গি ঘাঁটিতে যখন তখন হানা দিচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনী। সূত্রের খবর, আর্থিক অভাব মেটাতে মূলস্রোতে ফিরে সরকারি চাকরির ভরসাতেই আত্মসমর্পণ করেছেন পিন্টু।  
এবিষয়ে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার পুলিস সুপার রাহুল দে বলেন, কুমারগঞ্জের এক যুবক ২০০৫ সাল থেকে কেএলও জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিল। ওই যুবক বাড়িতে ফিরে আমাদের সাথে যোগাযোগ করে আত্মসমর্পণ করার কথা জানায়। সেই মতো সে এদিন আত্মসমর্পণ করেছে। ওদের সাথে যারা এই কাজে যুক্ত রয়েছে, তাদেরও আত্মসমর্পণ করিয়ে সমাজের মূল স্রোতে ফেরাতে সাহায্য করবে বলে যুবকটি জানিয়েছে। এই যুবককে হোমগার্ডের চাকরি দেওয়া হবে বলে জানান পুলিস সুপার।  
আত্মসমর্পণকারী পিন্টু বলেন, আমি ২০০৫ সালে জঙ্গি সংগঠনের ফাঁদে পা দিয়ে তাদের সাথে যুক্ত হয়ে যাই। ২০২১ সাল পর্যন্ত ওই সংগঠনের সাথে কাজ করে বুঝলাম, আমি আমার জীবনের অতি মুল্যবান সময় নষ্ট করেছি। এদিকে বর্তমানে রাজ্য সরকারের তরফে রাস্তাঘাট, স্কুল কলেজ সহ নানা উন্নয়ন দেখে বুঝলাম এই সংগঠনের কোনও প্রয়োজন নেই। তাই আমি আত্মসমর্পণ করেছি। আমার সহকর্মীদেরও আমি আত্মসমর্পণের পরামর্শ দিচ্ছি। 
পুলিস জানিয়েছে, সুদীপের বাড়ি দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার  কুমারগঞ্জ ব্লকের বড়াপাড়ায়।  ২০০৫ সালে সে কেএলও বা কামতাপুর লিবারেল অর্গানাইজেশনের সাথে যুক্ত হয়ে নাম বদলে ফেলে। সেসময় থেকে পিন্টু বড়ুয়া কোচ নামে সে পরিচিত হয়। সে মায়ানমারের জঙ্গি ঘাঁটিতে প্রশিক্ষণ নিয়েছিল। এরপর সে উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন জায়গায় সংগঠনের হয়ে কাজ করেছে। এমনকী নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশেও কাজ করেছে। জঙ্গি সংগঠনের প্রচার সংক্রান্ত বিষয়গুলি দেখভাল করত সে। ২০১২ সালে দার্জিলিং জেলা পুলিস পিন্টুকে গ্রেপ্তার করেছিল। এরপর জামিনে মুক্ত হলেও পুলিসের নজরদারিতে ছিল। সেই নজরদারি এড়িয়েই ফের জঙ্গি ডেরায় ফিরে যায়। পরবর্তীতে সুদীপকে কেএলও’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে নির্বাচিত করা হয়।  
প্রসঙ্গত, এর আগেও দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় চারজন কেএলও জঙ্গি আত্মসমর্পণ করেছে। তাদের চাকরিও হয়ে গিয়েছে। এখনও স্থানীয় অনেক যুবক ওই সংগঠনে রয়েছে। পিন্টু তাদের সাথে যোগাযোগ করে মূলস্রোতে ফিরতে চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন।