গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
আর পুজোর চারটে দিন ব্যাজ জোগাড় করতাম। স্বেচ্ছাসেবকের। উল্টোদিকে কুমোরটুলি সর্বজনীনের দুর্গাপুজো। তার স্বেচ্ছাসেবক হয়ে দিন-রাত দড়ি ধরতাম। শুধু রাতে একটা প্যাকেট পাব বলে। চারটে লুচি, একটু আলুর দম আর নবমীর দিন এক টুকরো মাংসর লোভে। কারণ, ওই খাওয়াটা বাড়িতে জুটত না।
পুতুল তৈরিতে হাতেখড়ি। সেখান থেকে কখন ভিতরে ঢুকে গিয়েছে এই মূর্তি শিল্প, পুজো, উৎসব। আমার প্রথম গুরু বাদলচন্দ্র পাল। আমাদের বাড়িওয়ালা, পেশায় পটুয়া। উনি কৃষ্ণনগরের ছাঁচের পুতুল তৈরি করতেন। ওঁর পাশে বসে বসে রং গোলা থেকে শুরু করে মাটি মাখা এবং ছাঁচ থেকে পুতুল তুলে দেওয়া —সবই করতাম। ওঁকে দেখে দেখেই আমার শেখা। বাড়ির পাশে শীতলা মন্দিরে সমীর চক্রবর্তী মানে খোকাদা খুব ছোট করে দুর্গাঠাকুর তৈরি করতেন। সেখানেও সাহায্য করতাম। আরেকটু বড় হলে হাফপ্যান্ট পরা অবস্থাতেই যেতাম জগৎ মুখার্জি পার্কের পাশের গলিটাতে। ষড়ঙ্গের পুজোয়। অশোক গুপ্তের ঠাকুরটা দেখতে। হাঁ করে মন্ত্রমুগ্ধের মতো চেয়ে থাকতাম। শুধু মনে হতো, অশোক গুপ্ত কখন বলবে—ওই ছোঁড়া! আয় একটু কাজে হাত দে।
সেই ডাক অবশ্য আসেনি। কিন্তু অশোক গুপ্তের সেই একটা ঠাকুর আমায় ভয়ঙ্করভাবে নাড়া দিয়ে গিয়েছিল। উনি অন্যরকমভাবে ভাবতে পারতেন। আমি ওঁর একলব্য। আমি শুধু বসে ভাবি, কবে গুরুর প্রতিমা কপি করব? উনি এতটাই চণ্ডীর ভাবধারা নিয়ে কাজ করেছিলেন, যে আমার পক্ষে কপি করাও সম্ভব হয়নি। সবথেকে বড় হল, কপিটা করতে পারিনি। অশোক গুপ্ত থিমাটিক্যালি কখনও চণ্ডীর বর্ণনা করছেন, কখনও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার লাইন লিখে দিচ্ছেন আর সেই ভাবধারা নিয়ে কাজ করছেন। কিন্তু ওঁর ভাঙনটা ছিল একদম ঝড়। সম্ভবত সেটার প্রভাবেই ক্ল্যাসিক্যাল কুমোরটুলির ধারা থেকে বেরিয়ে অন্যভাবে ভাবতে পেরেছি। আমি কখনই দুর্গাপ্রতিমার আত্মিক বিবরণ নিয়ে নাড়াচাড়া করিনি। পরিবর্তন করেছি বহিরাবরণে। সেটাও কিছু ভাবধারা থেকেই। নারীশক্তি নিয়েই কাজ করতে চেয়েছি। দীর্ঘ ২৪ বছর ধরে।