নিজস্ব প্রতিনিধি, বহরমপুর: কংগ্রেসে থেকে মানুষের কাজ করা যাবে না। এই দলে লড়াই করার মতো জায়গাই নেই। এমনই দাবি করে তৃণমূলে যোগদান করতে চলেছেন ফরাক্কা বিধানসভা কেন্দ্রের ২৫ বছরের কংগ্রেস বিধায়ক মইনুল হক। এবারের নির্বাচনে অবশ্য তিনি হেরে গিয়েছেন। ১৯৯৬সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত তিনি টানা বিধায়ক ছিলেন। সর্বভারতীয় কংগ্রেসের সম্পাদকও তিনি। অতীতে কাশ্মীর ও ঝাড়খণ্ডে সংগঠনের কাজ দেখভাল করেছেন। তাঁর মতো হেভিওয়েট নেতা দলবদল করতে চলায় কংগ্রেস জোর ধাক্কা খেয়েছে। সামশেরগঞ্জ এবং জঙ্গিপুর বিধানসভা কেন্দ্রের নির্বাচনের আগে তাঁকে দলে টেনে তৃণমূল হাত শিবিরের কর্মী এবং সমর্থকদের মনোবলেও চিড় ধরাতে চলেছে। ২৩সেপ্টেম্বর জঙ্গিপুরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা রয়েছে। ওই সভাতেই তাঁর তৃণমূলের ঝান্ডা ধরার কথা রয়েছে। তাঁর সঙ্গে আরও কয়েকজন কংগ্রেস নেতা ওই দিন শিবির বদল করবেন। ফরাক্কার প্রাক্তন বিধায়ক বলেন, মানুষের পাশে থাকার জন্য রাজনীতি করতে এসেছিলাম। কংগ্রেস আমাকে অনেক দিয়েছে। কিন্তু এখন এই দল করলে মানুষের জন্য কাজ করতে পারব না। সেই কারণেই তৃণমূলে যোগ দিতে চলেছি। বৃহস্পতিবার তৃণমূলের ঝান্ডা ধরব। ওদের নেতাদের সঙ্গে চূড়ান্ত কথা হয়ে গিয়েছে। তবে কংগ্রেসের প্রতি আমার কোনও অভিযোগ নেই। ফরাক্কার বিধায়ক তথা তৃণমূল নেতা মণিরুল ইসলাম বলেন, শুনছি উনি আসবেন। এলে কতটা কী লাভ হবে তা রাজ্য নেতৃত্ব বলতে পারবেন। আমার কাছে নির্দিষ্ট খবর নেই। দলের আর এক নেতা বলেন, নির্বাচনের ফল বেরনোর পর থেকেই কংগ্রেসের ওই প্রাক্তন বিধায়কের সঙ্গে কথা চলছিল। তাঁর বাড়িতেও দলের একটি প্রতিনিধি দল গিয়েছিল। কয়েকটি কারণে তিনি এতদিন দলে যোগদান করেননি। অবশেষে ২৩ তারিখে তিনি যোগদান করতে চলেছেন।
রাজনৈতিক মহলের মতে, কংগ্রেসের প্রাক্তন বিধায়ককে দলে টেনে তৃণমূল মাস্টারস্ট্রোক দিয়েছে। দীর্ঘদিন বিধায়ক থাকার সুবাদে এলাকায় তাঁর প্রভাব রয়েছে। কংগ্রেসের সংগঠন তাঁর উপরেই নির্ভরশীল ছিল। তিনি শিবির বদল করায় ওই এলাকায় কংগ্রেসের অধিকাংশ অফিসে তালা খোলার লোক থাকবে না। তবে তৃণমূলের একাংশ অবশ্য বিষয়টিকে ভালোভাবে নিচ্ছে না। তাদের দাবি, ফরাক্কায় মইনুল সাহেবের সঙ্গে লড়াই করেই সংগঠন করতে হয়েছে। তাঁর দাপটে এক সময় অনেকে দলের ঝান্ডা তুলতেও ভয় পেতে। কর্মীদের মারধরও করা হয়েছে। তাই তাঁর অধীনে কাজ করা অনেক কর্মীর কাছে সমস্যা হয়ে উঠবে। তাছাড়া এবারের নির্বাচনে তিনি পরাজিত হয়েছেন। হেরে যাওয়া সৈনিককে নিয়ে সংগঠনে কতটা লাভ হবে তা নিয়ে তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন। অন্য পক্ষের অবশ্য দাবি, ওই প্রাক্তন বিধায়ক দলে চলে আসায় আগামী দিনে পথের কাঁটা পরিষ্কার হয়ে গেলে। এই কেন্দ্রে বিজেপি লড়াই দিতে পারলেও জেতার ক্ষমতা তাদের নেই। এদিকে একের পর এক প্রথম সারির নেতারা দল বদল করায় মুর্শিদাবাদে কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে গিয়েছেন অধীর চৌধুরী। আগামী দিনে এই জেলায় সংগঠন আদৌ ধরে রাখা যাবে কিনা তা নিয়ে অনেকেই সংশয়ে রয়েছে। আগামী দিনে আরও কয়েকজন তৃণমূল শিবিরে আসার জন্য পা বাড়িয়ে রয়েছেন। কিন্তু তৃণমূলের একাংশ তাদের নিতে নারাজ। সেই কারণে ওই কংগ্রেস নেতাদের এখনও ইচ্ছেপূরণ হয়নি।