পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
ঝাড়খণ্ড থেকে ‘ওরা’ বেলপাহাড়ীতে আসছে। এই ইনপুট এসেছিল জুলাই মাসের গোড়ার দিকে। কিন্তু সেটা শুধুমাত্র ইনপুটই ছিল। প্রমাণ মিলল ১৯ জুলাই। সেদিন জামবনী ব্লকের পড়িহাটি এলাকায় বেশকিছু যুবককে মোটর বাইকে করে ঘুরতে দেখা গেল। পরনে জলপাই রঙের পোশাক। হাতে একে-৪৭ রাইফেল। প্রাথমিকভাবে পুলিস কর্তারা ভেবেছিলেন, স্ট্র্যাকোর জওয়ানরা টহল দিচ্ছেন। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেল, বাহিনীর কেউ ছিলেন না সেদিন। শুরু হল দ্বিতীয় বিকল্প ‘কনফার্ম’ করার কাজ। কী সেই বিকল্প? ঝাড়খণ্ড পুলিসের কোনও টিম হয়তো মাওবাদীদের তাড়া করতে গিয়ে এই রাজ্যে ঢুকে পড়েছে। কিন্তু তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও উত্তর আসে—নেগেটিভ। দু’টো উত্তরই নেতিবাচক হওয়ায় কপালে ভাঁজ চওড়া হয় গোয়েন্দাদের। তাহলে কি মাসের প্রথমে পাওয়া ইনপুটই সত্যি হতে চলেছে!
শুরু হয় বিস্তারিত তথ্য জোগাড়। বিনপুর, জামবনী, বেলপাহাড়ী এলাকায় মাওবাদীদের গতিবিধির উপর নজরদারি চালিয়ে উদ্বেগজনক কিছু তথ্য হাতে এল। জানা গেল, বেলপাহাড়ীতে মাস দু’য়েকের মধ্যে চার থেকে পাঁচবার নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেছে মাওবাদীরা। উপস্থিত ছিল শীর্ষ নেতা আকাশ সহ অন্যরা। বাকি ৩০-৩৫ জনের প্রত্যেকের কাছেই ছিল স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র।
ঝাড়খণ্ড সীমানা পেরিয়ে বাংলায় আসার দু’টি লক্ষ্য মাওবাদীদের। এক, জঙ্গলমহলে নতুন করে সংগঠন বিস্তার। আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষকে ভয় দেখিয়ে নিজেদের দলে টানার চেষ্টা করছে তারা। পাশাপাশি চলছে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের অপপ্রচার, সরকারের পদক্ষেপ নিয়ে ভুল বোঝানো। উদ্দেশ্য, সরকার বিরোধী মনোভাব তৈরি করে মানুষেকে আন্দোলনে নামানো। এর জন্য স্থানীয়দের দিয়ে একটি রাজনৈতিক দলও তৈরি করেছে মাওবাদীরা। পিছন থেকে পুরো বিষয়টির কলকাঠি নাড়ছে শীর্ষ নেতৃত্ব। দুই, অস্তিত্ব জানান দিতে নাশকতা ঘটানো। সেই লক্ষ্যে তারা বড়সড় প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই দলের মাথা দান্তেওয়াড়ার এক মাওবাদী শীর্ষ নেতা বিরাট ও ভারতী গান্ধী নামে ঝাড়খণ্ডের এক নেত্রী। সংগঠনে সে শুধুই ‘গান্ধী’ নামে পরিচিত। তাদের সঙ্গে রয়েছে এই রাজ্যের শীর্ষ নেতা আকাশ, মদন ও জবা। সীমান্ত পেরিয়ে এই টিম বেলপাহাড়ী, বিনপুর ও জামবনীর বিভিন্ন জায়গা ঘুরে ‘রেইকি’ করে গিয়েছে। বনপার্টির নেতাদের আশ্রয় দিচ্ছেন গুটিকয়েক গ্রামবাসী। তাঁদের নিয়ে বৈঠক করে মাওবাদীরা ফিরে গিয়েছে ঝুমরাতে। ঘটনাচক্রে আকাশ এখন ঝাড়খণ্ডে বসেই সংগঠন চালাচ্ছে। তাদের মূল ঘাঁটি ঝুমরা। সেখানেই বেশ কয়েকটি বৈঠক হয়েছে। শুধু বৈঠক নয়, সেখানে অপেক্ষা করছে ৯০ থেকে ১০০ জনের একটি সশস্ত্র দল। আশঙ্কা, রাজ্যে ঢুকে থানা, ফাঁড়ি বা সরকারি সম্পত্তিতে হামলা চালানোর টার্গেট রয়েছে তাদের।
স্বাধীনতা দিবসের মুখে আর ঝুঁকি নিতে চায়নি রাজ্য পুলিস। জঙ্গলমহলের সমস্ত থানাগুলিকে সতর্ক করে দেওয়ার পাশাপাশি শুরু হয়েছে কড়া তল্লাশি। বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে পুলিস পেট্রলিং পার্টিকে। কারণ, ইনপুট বলছে হামলা হতে পারে চলতি মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে আগস্টের প্রথম সপ্তাহে। ওই সময়ই যে মাওবাদীদের ‘শহিদ সপ্তাহ’!