নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: চিকিৎসা শাস্ত্রে বিরল ঘটনার পৃথিবীব্যাপী প্রতিযোগিতায় সেরা ‘কেস’ বা ঘটনার তালিকায় প্রথম হল বাংলা। ইউরোপের বিশ্বখ্যাত ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত ওই অনলাইন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিল ২৪টি দেশ। বিরল থেকে বিরলতম অসুখের প্রায় ৪০০টি ঘটনা নথিভুক্ত হয়। ফাইনাল রাউন্ডে ওঠে ২১টি ‘কেস’। তার মধ্যে দু’টিই ছিল ভারতের। দুটিরই প্রতিনিধিত্ব করেছিল বাংলা। একটি ছিল আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের, অন্যটি পিজি হাসপাতালের। দু’টির জন্য নির্বাচিত হন দুই মেধাবী বাঙালি চিকিৎসক। তাঁরা হলেন আর জি কর-এর সিনিয়র রেসিডেন্ট ডাঃ তনুকা মণ্ডল এবং পিজি হাসপাতালের পিজিটি ডাঃ করিমুল্লা মণ্ডল। ১৭ জুন ছিল ফাইনাল। বাংলার মুখ উজ্জ্বল করে ওই প্রতিযোগিতায় প্রথম হলেন আর জি কর-এর তনুকা। সম্মানজনক ওই প্রতিযোগিতায় বাংলা প্রথম হওয়ায় সারা রাজ্য ও দেশ থেকে প্রশংসাবার্তায় ভাসছে তাঁর ইনবক্স। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডাঃ অজয় চক্রবর্তী, স্বাস্থ্য অধিকর্তা (শিক্ষা) ডাঃ দেবাশিস ভট্টাচার্য, আইএমএ’র প্রাক্তন সর্বভারতীয় সভাপতি ডাঃ শান্তনু সেন প্রমুখ উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করছেন ওই তরুণীর। স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয়বাবু নিজে ফোন করেছেন। সর্বভারতীয় আইএমএ এবং এপিআই-এর একাধিক শীর্ষকর্তা দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ফোন করে এই বিরল কৃতিত্বের জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন ওই চিকিৎসককে। তনুকা বলেন, ভীষণ গর্বিত লাগছে।
তনুকার পেশ করা কেসটি ছিল বিরল ধরনের স্ক্রাব টাইফাসের। সেক্ষেত্রে রোগীর জটিল স্নায়বিক সমস্যা হয়েছিল। পাশাপাশি অতি বিরল উপসর্গ দেখা যায় তাঁর চোখে। চোখের মণি দু’টি অস্বাভাবিকভাবে ঘুরতে থাকত। সমস্যাটি নাম ‘অপসোক্লোনাস’। সামগ্রিক চিকিৎসার পর উনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে বাড়ি যান।
প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে ওঠা দেশগুলির তালিকায় বাংলা তথা ভারত ছাড়াও ছিল দক্ষিণ কোরিয়া, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ, ফ্রান্স, হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড, আর্জেন্টিনা, আয়ারল্যান্ড, বেলজিয়াম, চেক রিপাবলিক, লাটভিয়া, এস্তোনিয়া ইত্যাদি দেশ। স্ক্রাব টাইফাসের দু’টি বিরল ঘটনা ছাড়া অনলাইনে পাঠানো কেসগুলির তালিকায় ছিল ৪৬ বছর ধরে অপচিকিৎসার শিকার হওয়া এক রোগীকে নতুনভাবে দেখা, ফ্যাব্রি রোগ, লি ফ্রাউমেনি সিনড্রোম, প্রসূতির ঘন ঘন প্যানক্রিয়াটাইটিস, প্রচণ্ড ব্যথা কমানোর ওষুধের নেশা ও এনসেফেলোপ্যাথি, করোনা এবং অটো ইমিউন অ্যানিমিয়া, রোজাই ডর্ফম্যান ডিজিজের বিরল কেস, এর্দহেম চেষ্টার রোগ ইত্যাদি।