পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
গত বিধানসভা ভোটে কৃষ্ণগঞ্জ তৃণমূলের দখলে ছিল। উপনির্বাচনে তা হাতছাড়া হয়ে যায়। জয়ী হন বিজেপি’র আশিস বিশ্বাস। এবারও তিন পদ্ম প্রতীকে প্রার্থী। গত দু’বছরে কী করেছেন তিনি?
বড় করে বলার মতো সেরকম কাজ যে হয়নি, তা জানালেন এলাকার অনেকেই। বগুলা থেকে যে রাস্তাটি কৃষ্ণগঞ্জের দিকে চলে গিয়েছে, সেটির অবস্থা মোটেই ভালো নয়। খানাখন্দে ভরা। তারকনগর, কেষ্টপুর, গৌড়নগর প্রভৃতি এলাকা দিয়ে যতদূর যাওয়া গেল, কোথাও একেবারে মসৃণ রাস্তা নেই। মাঝেমাঝেই বড় বড় গর্ত। অথচ এই পথ দিয়েই শিবনিবাসে যাওয়া যায়, যা রীতিমতো পর্যটন কেন্দ্র। এখানে বিশালাকার ও সুদৃশ্য একাধিক মন্দির রয়েছে। সেখানে প্রতিদিন বহু মানুষ আসেন। কিন্তু এই চত্বরের যে খুব একটা উন্নতি হয়েছে, তা একেবারেই বলা যায় না।
কথা হচ্ছিল শিবনিবাস এলাকার এক মুদি দোকানের মালিকের সঙ্গে। মন্দির লাগোয়া তাঁর দোকান। বললেন, জানেন তো, এত বড় শিবলিঙ্গ এশিয়ায় আর কোথাও নেই। এটা যেমন সবাই জানেন, তেমন এটাও সবাই জানেন যে, এখানে পঞ্চায়েতের ভোটে কী হয়েছিল। ১০২ নম্বর বুথে সেদিনের বোমাবাজি, সন্ত্রাস মানুষ ভোলেনি। মানুষ ভয়ে ভোট দিতে পারেনি। এমনিতেই এলাকায় বিজেপি’প পক্ষে একটা চোরা-হাওয়া আছে। তার উপর পঞ্চায়েত ভোটের রাগ এবার পুষিয়ে নেবে মানুষ, বলছিলেন ভদ্রলোক। কিন্তু বিজেপি থাকার পরেও তো রাস্তাঘাটের তেমন উন্নতি হয়নি। তাহলে? কিছুটা রেগেই তিনি বললেন, কী করে রাস্তা ভালো হবে? হাঁসখালি ব্রিজ তৈরি হওয়ার সময় যেভাবে বড় বড় লরি ঢুকেছিল, তাতে ওই রাস্তা ভালো রাখা যায়?
ভোটে কী হবে, কে জানে! সবাই তো বলছে বিজেপি আসবে। সত্যিই আসবে কি? প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন মধুসূদন সিংহ। চূর্ণী নদীর একধারে একটা ছোট্ট গুমটিতে বসেন তিনি। নদী পারাপারের জন্য বাঁশের সাঁকো। সেই পথে পথচারী বা সাইকেল-বাইক গেলে পারানি দিতে হয় তাঁকে। বললেন গরিব মানুষকে তো এতদিন দিদিই দেখেছেন, বলুন? লকডাউন বা তারপরে যে চাল-ডাল পেয়েছি, তা খেয়েই বেঁচে ছিলাম। লোকে বলে দিদি যে চাল দিচ্ছেন, তা আসলে মোদির। তা হোক না। আমাদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা তো মমতাদিদিই করেছেন। সেটা ভুললে চলবে কেন?
তৃণমূল হঠাৎ এনআরসি নিয়ে প্রচার বন্ধ করে দিল কেন? পানের গায়ে চুন মাখাতে মাখাতে বললেন তারকনগরের কেশব মণ্ডল। বলছিলেন, এই এলাকায় তো ৯০ শতাংশের বেশি নমঃশূদ্র মানুষের বাস। তাহলে কি ওরা ভুল বোঝাচ্ছিল? বিজেপি তো এবার লোকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেটাই বলে আসছে। আসলে এবার সবাই কাজ চাইছে। আর বিজেপি সেই ইস্যুটাকেই খুঁচিয়ে যাচ্ছে বারবার। এর ফল কী হবে, সে তো ২ মে বুঝতে পারব, বলছিলেন কেশববাবু। তবে তাঁর কথায়, এবারের তৃণমূল প্রার্থী তাপস মণ্ডল এলাকায় অত্যন্ত জনপ্রিয় ও ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত। গত বিধানসভা উপনির্বাচনে যে জমি তৃণমূল হারিয়েছিল, তাপসবাবুকে প্রার্থী করায়, তাতে অনেকটাই মুখরক্ষা হবে বলে ধারণা কেশববাবুদের। তাপস মণ্ডলকে শ্রদ্ধা করেন বিজেপি প্রার্থী আশিস বিশ্বাসও। তাঁর কথায়, তাপসবাবু অত্যন্ত শিক্ষিত ও ভদ্র মানুষ, এ নিয়ে সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই। কিন্তু তৃণমূল দলটাকে তো কেউ সাপোর্ট করছে না। ওদের প্রতি ঘৃণা জন্মেছে মানুষের। আমি মানুষের মনের অনেক কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছি। ফলে জয়ের ব্যাপারে আমি শুধু আশাবাদী নই, আমি নিশ্চিত।
এদিকে, সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী হিসেবে একইসঙ্গে দাঁড়িয়েছেন আইএসএফের অনুপকুমার মণ্ডল ও সিপিএমের ঝুনু বৈদ্য। ভোটের লড়াইয়ে মন দেওয়ার বদলে এই দু’পক্ষ নিজেদের মধ্যে ঝগড়াঝাঁটিতে ব্যস্ত। ভোটাররাও তাই তাঁদের নিয়ে বেশি মাথা ঘামাতে রাজি নন।