সাগর দাস, মধ্যমগ্রাম: মিডিয়ায় মুখ দেখানো নয়। বেফাঁস মন্তব্যও নয়। প্রচারেও নেই বড় মুখ। সম্বল বলতে মানুষের ভালোবাসা। গ্রীষ্মের প্রখর রোদ উপেক্ষা করে মধ্যমগ্রামের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে চলেছেন তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী রথীন ঘোষ। হাতজোড় করে নিচ্ছেন ভোটারদের আশীর্বাদ। কাজের মানুষ, কাছের মানুষকে পেয়ে কাছে টেনে নিচ্ছেন ভোটাররাও। হাসিমুখে প্রার্থীর জিজ্ঞাসা, আপনারা কেমন আছেন? পরিবার কেমন আছে? শনিবার সকালে মধ্যমগ্রাম বিধানসভার পশ্চিম খিলকাপুর এবং বিকেলে রোহন্ডা-চণ্ডীগড় পঞ্চায়েত এলাকায় প্রচার করেন তিনি। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে স্নান সেরে প্রথমে মা কালীকে পুজো দেন। এরপর সামান্য জলখাবার খেয়ে সাড়ে ৯টা নাগাদ প্রচারে বেড়িয়ে পড়েন। মধ্যমগ্রামের বাড়ি থেকে রওনা দিয়ে তাঁর গাড়ি গিয়ে থামল বারাসত-কৃষ্ণনগর রোডের উপর পশ্চিম খিলকাপুর মোড়ে। সেখানে আগে থেকেই অপেক্ষা করেছিলেন দলীয় সমর্থকরা। গাড়ি থেকে নামতেই তৃণমূল কংগ্রেস ও রথীনবাবুর নামে স্লোগান দিয়ে উঠলেন দলীয় কর্মীরা। তাঁদের সামান্য আলাপচারিতা সেরে এক কাপ চা খাওয়া। এরপর গ্রামের পথ ধরে হেঁটে প্রচার শুরু। প্রার্থীরা পিছনে তখন কয়েকশো দলীয় কর্মী। প্রচারে থাকা মাইকে চলছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একের পর প্রকল্পের প্রচার। প্রতিটি পাড়ায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার করতে শুরু করলেন রথীনবাবু। গ্রামের মানুষ তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীকে দেখতে চলে এলেন রাস্তায়। কথা বললেন তাঁর সঙ্গে। প্রচার তখন পৌঁছে গিয়েছে দুগগেড়িয়া গ্রামে। ওই গ্রামের বাসিন্দা সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধ রেজাউল রহমানকে দেখে এগিয়ে যান রথীনবাবু। ওই বৃদ্ধ তখন প্রার্থীর মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ করলেন। বললেন, বাবা, তুমি এবারও জিতবে। আশীর্বাদ পেয়ে তখন আপ্লুত প্রার্থী। আবার কেউ সমস্যার কথা জানালেন। প্রার্থী দিলেন তাঁদের দাবি পূরণের আশ্বাস। এদিনের প্রচারে সঙ্গী ছিল ১০ বছরের এক শিশুও। ছোট সাইকেলে তৃণমূলের পতাকা লাগিয়ে সে এগিয়ে যায় রথীনবাবুর সঙ্গে। গ্রামের রাস্তা হলে হবে কী, প্রায় সব রাস্তাই ঢালাই। নেই জল ও বিদ্যুতের সমস্যাও। পাইপ দিয়ে প্রতিটি গ্রামে চলে গিয়ে পরিস্রুত পানীয় জল। আর হেন কোনও বাড়ি নেই যে, বিদ্যুৎ পৌঁছয়নি। পুরসভার মতো সুবিধা পান এখানকার মানুষ। গ্রামের প্রায় ১০ কিলোমিটার পথ দুপুর একটা নাগাদ শেষ প্রথম পর্বের প্রচার। এরপর ক্ষণিকের বিশ্রাম নিয়ে চারটে নাগাদ বেরিয়ে পড়লেন রোহন্ডা-চণ্ডীগড় পঞ্চায়েত এলাকায় প্রচার করতে। এই গ্রাম পঞ্চায়েতের জোজড়া মতিরপোল থেকে এই মিছিল শুরু হয়। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে মিছিল ঈশ্বরীগাছা এলাকায় শেষ হয়। রথীনবাবুর কথায়, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, যুবশ্রী, কৃষকবন্ধু থেকে স্বাস্থ্যসাথীর মতো প্রকল্প মানুষের মধ্যে আমূল পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। এই প্রকল্পের সুবিধা যাতে আরও মানুষ পান, তারজন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
মধ্যমগ্রাম পুরসভার ২৮টি ওয়ার্ড। এরই মধ্যে বেশকিছু ওয়ার্ডে সংখ্যালঘু ভোটার একটা ফ্যাক্টর। ইছাপুর-নীলগঞ্জ বাদ দিয়ে রোহন্ডা চণ্ডীগড়, কেমিয়া-খামারপাড়া, পূর্ব এবং পশ্চিম খিলকাপুর পঞ্চায়েতে সংখ্যালঘু মানুষের একটা বড় অংশের বসবাস। মধ্যমগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটার সংখ্যা দু’লক্ষ ৭১ হাজার ৬৩৪। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লক্ষ ৩৭ হাজার ৭৫। মহিলা ভোটার এক লক্ষ ৩৪ হাজার ৫৫৬। রয়েছেন কয়েক হাজার নতুন ভোটারও। বারাসত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ২০১১ সালে আলাদা বিধানসভা হয়েছিল মধ্যমগ্রাম। ১০ বছর ধরে মধ্যমগ্রামের বিধায়ক রথীন ঘোষ। এবারও তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী। তিনি পুরসভার চেয়ারম্যানও ছিলেন।
মধ্যমগ্রাম বরাবরই তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি। তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব মনে করছে, সেই শক্ত ঘাঁটি এখন দুর্গে পরিণত হয়েছে। মধ্যমগ্রামে দমকল কেন্দ্র, বাদু রোড, যশোহর রোড, সোদপুর রোডের সম্প্রসারণ, রাস্তায় আলো, ঘরে ঘরে পরিশোধিত পানীয় জল সরবরাহ, নিকাশি ব্যবস্থা ও রাস্তাঘাটের উন্নতি তৃণমূলকে সহজেই জেতাবে বলে আশাবাদী ঘাসফুল শিবির। মধ্যমগ্রাম চৌমাথায় আন্ডারপাসের কথাও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। পঞ্চায়েতেও ঢেলে কাজ হয়েছে বলে দাবি শাসক দলের। তাই পুরসভা এবং পঞ্চায়েতের উন্নয়নকে হাতিয়ার করেই তৃতীয় বারের জন্য রথীন ঘোষ জিতে আসবেন বলে মনে করছে তৃণমূল। আগামী ১৭ এপ্রিল ভোট হবে এই কেন্দ্রে। রথীনবাবুর দাবি, ‘সংখ্যালঘু ভোট তৃণমূলের সঙ্গেই আছে। উন্নয়নের নিরিখে তাঁরা তৃণমূলকেই ভোট দেবেন। সেখানে বিজেপি এবং সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী হলেও কোনও হেরফের হবে না।’