বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
সরকার নয়, ভোটের প্রতিযোগিতার চালিকাশক্তি থাকবে নির্বাচন কমিশনের হাতে। এটাই নিয়ম। ওই বিশেষ সময়টুকু পুলিস, প্রশাসন, বাহিনী—সব তাদের নিয়ন্ত্রণে। তাদের হুকুমই শিরোধার্য। প্রত্যেক ভোটার এবং প্রত্যেক প্রার্থী ভরসা রাখবেন কমিশনের উপর। বাংলার এই ভোটপর্বে এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হচ্ছে। নিরপেক্ষ বলে কি আর আদৌ কিছু আছে? নিরপেক্ষ ভোট করানোর নামে চার দফার বাঁদরনাচ দেখার পর এটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন। কারণ, আইন সবার জন্য এক কথা বলছে না। দোষ যাই হোক না কেন... সেই অনুযায়ী সাজা হচ্ছে না। এই ‘অভ্যেস’ আজকের নয়। কয়েক বছর ধরেই সুয়োরানি-দুয়োরানি ভাগাভাগিটা কমিশনের অন্দরে চলছে। সুয়োরানি একটিই পার্টি। আর দুয়োরানি বাকি সবাই। অসমে হিমন্ত বিশ্বশর্মা হুমকি দেন, বিজেপি ক্ষমতায় ফিরলে বোরোল্যান্ড পিপলস ফ্রন্টের প্রধানকে এনআইএ কেস দিয়ে জেলে পুরবেন। কমিশন তাঁর প্রচার ৪৮ ঘণ্টার জন্য নিষিদ্ধ করে। কিন্তু বিশ্বশর্মা ‘নিঃশর্ত ক্ষমা’ চাওয়া মাত্র তাঁর সাজার মেয়াদ কমিয়ে ২৪ ঘণ্টা করে দেওয়া হয়। কেন? তিনি বিজেপির প্রার্থী। তামিলনাড়ুর এ রাজার পার্টির নাম ডিএমকে। তাই ‘ক্ষমা’ চাইলেও তাঁর সাজায় হেরফের হয় না। কেন? গণতন্ত্রে তো দু’জনের ক্ষেত্রে একই নিয়ম হওয়া উচিত ছিল! তা হয়নি।
শীতলকুচির ১২৬ নম্বর বুথটা আজ অভিশপ্ত। কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে মৃত্যু হয়েছে চার ‘ভোট লুটেরা’র। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছে, তারা ছিল নিরীহ ভোটার। তবু মরতে হয়েছে। আর দায় চেপেছে মমতার উপর। তাঁকে ২৪ ঘণ্টার জন্য নিষিদ্ধও করা হয়েছে। দিলীপ ঘোষ বলেছেন, ‘আরও শীতলকুচি হবে।’ তাঁর জন্য নোটিস। শুভেন্দু অধিকারী লাগাতার সাম্প্রদায়িক বিভাজনমূলক মন্তব্য করে যাচ্ছেন, তাঁর জন্য ‘সতর্কবার্তা।’ আর প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দোষীরা শাস্তি পাবে। কারা দোষী? গ্রামবাসীরা? সেই জওয়ানরা নয়, যারা গুলি চালিয়েছে? দিলীপ ঘোষ দোষী নন? শুভেন্দুবাবু নন? শুধুই মমতা? কেন? তিনি বিরোধী বলে? এটাই তাহলে গণতন্ত্র?
মাসের পর মাস কেন্দ্রীয় এজেন্সির মাধ্যমে নাজেহাল হতে হয়েছিল অশোক লাভাসাকে। কেন? ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য একের পর এক অভিযোগ দায়ের হয়েছিল নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহের বিরুদ্ধে। মোদি-শাহকে ক্লিনচিট দিয়েছিলেন মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক সুনীল অরোরা। প্রতিবাদ ছিল নির্বাচন কমিশনার অশোক লাভাসার। জানিয়েছিলেন, এই ক্লিনচিটে তাঁর মত নেই। ফল? আছড়ে পড়েছিল ইডি এবং আয়কর দপ্তরের হানা।
স্বাধীনতার মুহূর্তে জওহরলাল নেহরু বলেছিলেন, ‘আমরা আজ স্বাধীন, স্বার্বভৌম। আর আমি দেশের মানুষের প্রথম ভৃত্য।’ সেই অর্থে নরেন্দ্র মোদি ভারতের চতুর্দশ ভৃত্য। মালিক নন, রাজাও নন। কিন্তু সেবকের মতো ভূমিকা কি তাঁর দেখা যাচ্ছে? না। বরং, দাম-দণ্ড-ভেদ... যার জন্য যে ওষুধ, তাকে সেটাই দিতে জানেন গেরুয়া পার্টির দণ্ডমুণ্ডের কর্তারা। অশোক লাভাসা... পদত্যাগ করেছিলেন তিনি। সব মেনে চললে আজ সুশীল চন্দ্রা নন, লাভাসাই হতেন মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক। আর সবকিছু মেনে নিয়ে শাসকের কথামতো ডুগডুগি বাজালে? রঞ্জন গগৈ এক্ষেত্রে মোক্ষম উদাহরণ হতে পারেন বলে নিন্দুকে বলছে। অযোধ্যা মামলার রায়ের পর অবসর। আর তার পরপরই রাজ্যসভার সদস্য। সুনীল অরোরা হয়তো রঞ্জন গগৈয়ের পথের পথিক হবেন! জানা নেই। স্লোগান এখন একটাই, ‘জয় নরেন রাজার জয়...।’