বিমাসূত্রে ধনাগম হতে পারে। প্রেম-প্রণয়ে আনন্দ। কাজকর্মে অগ্রগতি ও সুনাম। ... বিশদ
আসানসোলের দিক থেকে পাণ্ডবেশ্বর বিধানসভার অন্তর্গত প্রথম জনপদ হরিপুর। মূল রাস্তার উপর হোর্ডিং ছাড়া বিজেপির পার্টি অফিস থেকে ফ্লেক্স, পতাকা নিয়ে যাওয়ার জন্য এসেছেন একদল কর্মী। টোটোতে ফ্লেক্স তুলতে তুলতে এক বিজেপি যুব নেতার দাবি, সবই তো করছি। কিন্তু মানুষের প্রশ্নে অস্থির হয়ে যাচ্ছি। দাদা যখন প্রার্থী হলেন, তখন গ্রামের লোকজন তাঁর এক অনুগামী তৃণমূল নেতার নাম নিয়ে বলল দেখিস ও যেন তোদের দলে ঢুকে না পড়ে। বড় মুখ করে কথা দিয়েছিলাম কোনওমতেই ঢুকতে দেব না। সেই এখন ঢুকে দলের হয়ে প্রচার করছে। আমাদের দেখে এখন মুখ টিপে হাসছে মানুষ।
অফিসে বসে এক বড় নেতা প্রথমে খুব জয়গান গাইলেন দলের। কিন্তু কিছু প্রশ্ন করতেই বেরিয়ে এল ক্ষোভ। তিনি বলেন, ১৯৯১ সাল থেকে দলটা করছি। আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে উনি প্রার্থী হওয়ায় সুবিধা হয়েছে। কিন্তু মানুষের মনে অবিশ্বাস জন্ম নিয়েছে। জানি না আমাদের কর্মীরাই কী করবে। পাশেই বসেছিলেন বাউরি সমাজের দুই কম বয়সি বিজেপি কর্মী। তাঁরা বলেন, এখানে প্রায় ৫০হাজার বাউরি ভোট আছে। কিন্তু আমরাই বেশি বঞ্চিত হই। এখানে আমাদের সমাজেরই তো একজন সিপিএমের প্রার্থী হয়েছেন। দেখুন আবার কী হয়।
ছোড়া গ্রামে দুপুরে গিয়ে দেখা যায় প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ির ছবিতে মালা দিয়ে দলীয় অফিসে বসে রয়েছেন কয়েকজন বিজেপি নেতাকর্মী। ভোটের হাওয়া জানতে চাওয়ায়, কম বয়সিরা দলের সিদ্ধান্ত নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিতে শুরু করেন। তাঁদের থামিয়ে দিয়ে এক নেতা বলেন, যা বলব ভোটের পর। ২মে তো দেরি নেই।
বিজেপি শিবিরে যখন এই অবস্থা চলছে, তখন খুব একটা হাওয়া আলাদা নয় তৃণমূল শিবিরেও। মাঝে মধ্যেই দলের জনপ্রতিনিধিরা শিবির বদলাচ্ছেন। যদিও নেতা গেলেও কর্মী যোগদান দেখা যায়নি। কিন্তু নেতাদের এই দোদুল্যমান অবস্থায় রণকৌশলে ‘টপ সিক্রেট’ কার সঙ্গে আলোচনা করা যায় ভাবতে হচ্ছে তৃণমূল প্রার্থীকেও। কারণ বিজেপি অভ্যন্তরের অবিশ্বাসের চোরাস্রোত বুঝে তৃণমূলের ঘরে সিঁদ কাটতে মরিয়া দলবদলু শিবির।
দলবদলু বিজেপি প্রার্থী বলেন, তৃণমূল আদর্শ বদলেছে বলেই আমাকে দল বদল করতে হয়েছে। তৃণমূল প্রার্থীকে দেখেই ওদের নেতা কর্মীরা ক্ষোভে দল ছাড়ছেন। জানবেন দলের ভিতরে থেকেও অনেকে কাজ করবে না।
তৃণমূল প্রার্থী নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেন, উনি নিজের ঘর ঠিক রাখতে পারছেন তো? যারা দল ছাড়ছে নিজের স্বার্থের জন্য ছাড়ছে। ভোটের দিন মানুষ দলবদলুকে শিক্ষা দেবে।
ছোড়া গ্রামে নিজের বাড়ির দাওয়ায় বসে সদ্য অবসর নেওয়া ইসিএল কর্মী বলেন, তৃণমূল বিধায়ক থাকাকালীনই জিতেন্দ্র তেওয়ারির ভাবমূর্তি আর ভালো নেই। তিনিই আবার বিজেপি প্রার্থী। তৃণমূল যে প্রার্থী করেছে তিনিও স্বচ্ছ নয়। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী তো করেছেন। মানুষ তাঁকে দেখে এবার ভোট দেবে। পাশেই বসে একই কথা বললেন এক রেলকর্মী। পাণ্ডবেশ্বরের এক প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী বলেন, কয়লা লুটেই সবার নজর। কাকে বিশ্বাস করব বলুন তো।
তফসিলি জাতি উপজাতির ভোট বড় ভূমিকা নেয় পাণ্ডবেশ্বরে। বিশেষ করে বাউরি সমাজ। সুভাষ বাউরি এবার সিপিএম প্রার্থী। স্বচ্ছতার প্রশ্নে তিনি অন্যদের থেকে এগিয়ে। তাই বিক্ষুব্ধ ভোটের আশা করছেন তিনিও।
হরিপুর ঢুকতেই এক বড় রাম মন্দিরের দেখা মিলল। সেখানে বোর্ডে লেখা বিধায়ক সহযোগিতায় গড়ে উঠেছে। তাঁর দল পরিবর্তনের সময়েই ষাঁড়ে ভেঙেছে মন্দিরের সামনে থাকা সিমেন্টের গোরু। বিষয়টি কাকতালীয় হলেও ইঙ্গিতবহ।