পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
তর্কের আসরে প্রবীণ থেকে সদ্য ভোটাধিকার পাওয়া যুবক, সবাই নিজের অবস্থান স্পষ্ট করছেন। সেখানে চপ শিল্প নিয়ে কটাক্ষ করে বেজায় চাপে পড়ে গেলেন বামপন্থী এক যুবক। পাল্টা জবাব না দিয়ে, আর এক যুবক দোকান মালিককে ডেকে শুনিয়ে দিলেন, দাদু আপনার প্রতিদিন বিক্রি কত? বেসনে গুলিয়ে ফুটন্ত তেলে ছাড়তে ছাড়তে উত্তর এল, শখানেক চপ তো উঠেই যায়। অঙ্ক কষে ছেলেটি বলে দিল, মানে ৫০০টাকা মিনিমাম। তার সঙ্গে মুড়ি পাঁচ টাকা করে। দিদি একেবারে ভুল কিছু বলেননি। দাদু চপের দোকান করে দিব্যি আছেন। পাল্টা একজন বললেন, এতদিন বিএসএনএলে চাকরি করলাম। শেষ বয়সে তাড়াতাড়ি অবসর নিতে হল। প্রচুর লোক ছাঁটাই করল। এখন রেল বেসরকারিকরণ করছে। জানি না ছেলেমেয়েরা কী করে জীবন কাটাবে। অন্তত চপের দোকান দিলেও তো নিশ্চিন্ত হতাম। আর একজন বলে উঠলেন, ভোটের সময় তো মোদি কত চাকরির কথা বলল, হল কোথায়? এলাকায় তো একটাও কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরি পেল না। বরং পাড়ার দু’-একটা ছেলেমেয়ে স্কুলে চাকরি পেল। যেটুকু সঞ্চয় তাতেও দিনের পর দিন সুদ কমাচ্ছে। জিনিসপত্রের এত দাম, কী করে চলবে সংসার?
মানুষের হা-হুতাশ শুনেই একটা ধারণা করা যায়, প্রবল বিজেপি হাওয়ার মধ্যেও মানুষের মন অন্যদিকে। ভাতার বিধানসভায় মোট ভোটার ২লক্ষ ৪৬হাজার ৪৫১। কিছু মানুষের কথা যদি সার্বিক চিত্রের অংশ হয় তাহলে বিজেপির যথেষ্ট চিন্তার কারণ আছে। পাশাপশি প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া বরাবর পছন্দ এখানকার মানুষের। সেটাও এবার ভাবার বিষয় তৃণমূলের জন্য। বাম আমলেও ডানপন্থীদের প্রভাব ছিল। আবার গত লোকসভায় ব্যাপক মোদি হাওয়া এবং শাসকদলের গোষ্ঠী সমস্যা থাকা সত্ত্বেও তৃণমূল এই কেন্দ্রে ২৬হাজার ৪৬৪ভোটে লিড পায়। এবারও গেরুয়া শিবির সুবিধা করতে পারবে না বলে দাবি রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের।
নগরায়নের ছোঁয়া লেগে ভাতার ব্লকের বেশ কয়েকটি এলাকার উন্নতি হয়েছে। ভাতার বাজার সংলগ্ন এলাকা পুরসভাকেও টেক্কা দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েই গত বিধানসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে ৪৬.৮৬শতাংশ ভোট পেয়ে তৃণমূলের সুভাষ মণ্ডল জিতে বিধায়ক হন। স্থানীয় না হওয়ায় তিনি এলাকায় খুব একটা সক্রিয় ছিলেন না বলেই কান পাতলেই শোনা যায়। তাই নির্বাচনের আগে ভূমিপুত্র প্রার্থীর দাবি উঠেছিল। এবার তিনটি দলই ভূমিপুত্রকে প্রার্থী করেছে। দক্ষ সংগঠক মানগোবিন্দ অধিকারীর উপর ভরসা রেখেছে ঘাসফুল শিবির। অন্যদিকে এই কেন্দ্র থেকে দু’বার দাঁড়ানো প্রয়াত বিজেপি নেতা ধাত্রীপদ কোনারের নাতি মহেন্দ্র কোনারকে প্রার্থী করেছে পদ্ম শিবির। সংযুক্ত মোর্চা সমর্থিত সিপিএমের নজরুল হকও এই কেন্দ্রের ভূমিপুত্র।
ভাতারের একটা বড় অংশের মানুষ এসসি ও এসটি। মোট নাগরিকের যা ৩২.৪৪ শতাংশ এসসি ও ৯.৭৪ এসটি। এই বিশাল অংশের ভোটাররা যেদিকে ঝুঁকবেন সেদিকেই যাবে নির্বাচনের ফল। এখানেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষিত সুনিশ্চিত আয় প্রকল্প মাস্টারস্ট্রোক হিসেবে কাজ করবে। যেখানে সাধারণ পরিবারের মহিলাদের মাসে দেওয়া হবে ৫০০টাকা। এবং তফসিলি জাতি-উপজাতি পরিবারকে দেওয়া হবে এক হাজার টাকার ভাতা। বছরে ১২হাজার টাকার নিশ্চিত আয় ভাতারের ভোটে প্রভাব ফেলবে বলেই মনে করা হচ্ছে। তৃণমূল প্রার্থী মানগোবিন্দবাবু বলেন, দলের যে গোষ্ঠী সমস্যা ছিল তা সকলে বসে মিটিয়ে নিয়েছি। পুরনো এবং নতুন সবাইকে ভোটের দায়িত্ব দিয়েছি। এখানে আমাদের জয় নিশ্চিত। মানুষ উন্নয়ন এবং আগামী একাধিক প্রকল্পের যে পরিকল্পনা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করেছেন তাতে আস্থা রাখবেন।
বিজেপি প্রচারে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল ও ভাতার বাজার চত্বরে পাওয়ার হাউস তৈরির প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। মহেন্দ্রবাবু বলেন, প্রচারে মানুষের খুব উৎসাহ। আমরাই জিতব। সিপিএম প্রার্থী নজরুল হক বলেন, মানুষের কর্মসংস্থান দরকার। তৃণমূল ও বিজেপির দুই সরকার সেব্যাপারে উদাসীন। বিকল্প সরকার গড়ার জন্য মানুষের ভালো সাড়া মিলছে।