বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
দলীয় প্রার্থী তালিকার ‘খোলনলচে’ এবার পাল্টে দিয়েছেন মমতা। দুঁদে রাজনীতিবিদ প্রবীণদের সঙ্গেই ঝকঝকে মুখের নবীনদের প্রার্থী তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে ‘ভারসাম্য’ বজায় রেখেছেন। বাদ পড়েছেন গত নির্বাচনে জিতে আসা এক ঝাঁক বিধায়ক। তৃণমূল আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, ৮০ বছরের বেশি কাউকে টিকিট দেওয়া হবে না। সেই সূত্রে বাদ গিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য, ব্রজমোহন মজুমদার, জটু লাহিড়ী প্রমুখ। অসুস্থতার কারণে রাখা হয়নি সোনালি গুহ এবং মালা সাহাকে। মোট পাঁচ মন্ত্রী এবং ২৯ বিধায়কের নাম এবার প্রার্থী তালিকায় নেই।
বলাগড়ে অসীম মাঝির পরিবর্তে মমতা এবার প্রার্থী করেছেন মনোরঞ্জন ব্যাপারীকে। স্কুলের চৌকাঠ পার না করা এই দলিত সাহিত্যিক এখনও পর্যন্ত লিখে ফেলেছেন ২১টি গ্রন্থ। এহেন ব্যক্তিকে প্রার্থী হিসেবে পরিচয় করাতে গিয়ে সাংবাদিকদের তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, ‘জানেন, উনি রিকশ চালাতেন। সেখান থেকেই তো মহাশ্বেতাদির (সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবী) সংস্পর্শে এসে লেখালেখি শুরু করেন।’ যাঁদের টিকিট দিতে পারলেন না, তাঁদের জন্য আশ্বাসও দিয়েছেন ক্ষমতায় ফেরার বিষয়ে ১০০ ভাগ নিশ্চিত মমতা। জানিয়েছেন, দীর্ঘদিনের বহু সহকর্মীকে এবার টিকিট দিতে পারিনি। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে দলের হয়ে কাজ করেছেন। আমরা তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ। প্রবীণদের প্রণাম। এবার আমরা বিধান পরিষদ করব বলে ঠিক করেছি। সেখানে তাঁদের নিয়ে আসব। বাকিদের দলের কাজে ভালোভাবে ব্যবহার করা হবে।’ সেই সঙ্গে রাজ্যবাসীকে আশ্বস্ত করে তৃণমূলনেত্রী আরও বলেন, ‘বিনা পয়সায় রেশন, স্বাস্থ্য পরিষেবা ছাড়াও কন্যাশ্রী, সবুজসাথী, শিক্ষাশ্রী, কৃষক ভাতা, দুয়ারে সরকার, দ্বাদশ শ্রেণীর পড়ুয়াদের স্মার্ট ফোন দেওয়ার মতো সব প্রকল্প চালু থাকবে।’
এদিন বেলা সাড়ে ১২টায় দলের নির্বাচন কমিটির সঙ্গে কালীঘাটের বাড়িতে বৈঠকে বসেন মমতা। এরপর পৌনে দুটো নাগাদ প্রবীণ নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সি এবং ফিরহাদ হাকিমকে সঙ্গে নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে আসেন। তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, ‘সমাজের সর্বস্তরের মানুষের প্রতিনিধিত্ব রাখার চেষ্টা করা হয়েছে প্রার্থী তালিকায়। তালিকায় এবার রয়েছেন ৫১ জন মহিলা, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ৪২ জন প্রতিনিধি, ৭৯ জন তফসিলি জাতি এবং ১৭ জন তফসিলি উপজাতিভুক্ত প্রার্থী। বেশ কয়েকজন ডাক্তারও রয়েছেন আমাদের তালিকায়।’
পাহাড়ের তিনটি (দার্জিলিং, কালিম্পং, কার্শিয়াং) আসন বাদ রেখে মোট ২৯১টি আসনের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে তৃণমূল। এই প্রসঙ্গে মমতা বলেন, পাহাড়ের তিনটি আসনে আমরা লড়ছি না। ‘বন্ধুরা’ লড়বেন। নির্বাচনে জিতে তাঁরা আমাদের সঙ্গেই আসবেন। এবার গোটা দেশের বিরোধী শিবির মমতার পাশে। সেই লিস্টে এদিন সংযোজিত হয়েছেন ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সরেন। মমতা বলেন,‘হেমন্ত ফোন করেছিলেন! বললেন, দিদি, আপনাকে পূর্ণ সমর্থন দেবে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা।’ এদিনই আবার চিঠি লিখে মমতাকে সহমর্মিতা জানিয়েছেন গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের নেতা বংশীবদন বর্মন। ‘বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়’, তৃণমূলের ক্যাচওয়ার্ড ইতিমধ্যেই জনপ্রিয়। প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করতে এদিন সেই ‘বাংলার মেয়ে’ এসেছিলেন আটপৌরে শাড়ি পরে। তালিকা পর্ব সাঙ্গ করে আন্তরিকভাবে বললেন, ‘প্রতিপক্ষের সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। তাঁদের পরিবার পরিজনরাও যেন ভালো থাকেন।’