গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
বুধবার বিকেলে বিস্ফোরণ কাণ্ডের তদন্তের জন্য নিমমিতা স্টেশনে আসে এনআইএর টিম। ওই টিমের প্রতিনিধিরা স্টেশনের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেন। বিস্ফোরণের তদন্তে আট সদস্যের টিম তৈরি করা হয়েছে। এদিন কলকাতার নগর দায়রা আদালতে এনআইএর তরফে আবেদন করে বলা হয় কেস ডায়েরি, গ্রেপ্তার হওয়া দুই অভিযুক্তসহ মামলার সঙ্গে জড়িত তথ্যপ্রমাণ তাদের হাতে তুলে দেওয়া হোক। আদালত সিআইডিকে নির্দেশ দিয়েছে দ্রুত তা তুলে দিতে। এদিকে তদন্ত শুরু করার পর এনআইএর অফিসাররা জানতে পারছে, বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ সইদুলকে বোমা তৈরি শেখায় স্থানীয় এক দুষ্কৃতী। এরপর তার সঙ্গে বাংলাদেশের বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞদের যোগাযোগ গড়ে ওঠে। সীমান্তের ওপারের এক আইইডি বিশেষজ্ঞ তাকে এসে এই বিস্ফোরক তৈরি শিখিয়ে যায়। সইদুল পরে অন্যদের প্রশিক্ষণ নেয়। তার মোবাইলের কল ডিটেলস ইতিমধ্যেই জোগাড় করেছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার কর্তারা। দেখা যাচ্ছে নিয়মিত তার সঙ্গে বাংলাদেশে কল যেত। সন্দেহজনক এই কল কাদের কাছে করা হত তার তথ্য জোগাড় করা হচ্ছে। তার মোবাইল হাতে পেলে অফিসাররা দেখতে চাইছেন বিস্ফোরক তৈরির ফমুলা রাখার জন্য সে আলাদা কোনও ফোল্ডার তৈরি করেছিল কিনা।
ঘটনার কয়েক দিনের মধ্যেই সিআইডি অত্যন্ত তৎপরতার সঙ্গে সইদুলকে গ্রেপ্তার করে। সিআইডির আধিকারিকরা তাকে গ্রেপ্তার করার জন্য টেকনোলজির সাহায্য নিয়েছে। তাকে জেরায় সময় সে নানান ভুল তথ্য দিয়ে তদন্তকারী অফিসারদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সে দাবি করেছে, বিস্ফোরক তৈরির জন্য তাকে দু’লক্ষ টাকা ‘ইনাম’ দেওয়া হয়েছে। তবে কে টাকা দিয়েছে, সেটা জানতে চাইলে বিভিন্ন নাম বলছে। গোয়েন্দারা মনে করছেন, মাস্টারমাইন্ডকে আড়াল করতেই সইদুল অত্যন্ত পাকা মাথায় এটা করে যাচ্ছে।
গোয়েন্দা সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, সইদুল বিস্ফোরক তৈরির পাশাপাশি পিস্তল চালাতেও অত্যন্ত দক্ষ। কয়েক বছর আগে জয়বাংলা এলাকায় রেললাইনের পাশে বসে থাকা কয়েকজন যুবককে লক্ষ্য করে সে এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়েছিল। সামান্য বচসার পরই সে গুলি চালাতে থাকে। সেই যাত্রায় যুবকরা রক্ষা পেয়ে যায়। ২০১১সালে সে ফের মাদ্রাসার মাঠে বোমা ছুড়ে এক ব্যক্তিকে খুন করে বলে অভিযোগ। ওই ঘটনার পর থেকেই সে এলাকা থেকে পালিয়ে যায়। দ্বিতীয়বার বিয়ে করে ঝাড়খণ্ডে থাকতে শুরু করে। তবে মাঝেমধ্যেই সে এখানে এসে বিস্ফোরক তৈরি করত।
গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, নিমতিতা বিস্ফোরণের একমাস আগে সে ওরঙ্গাবাদে এসেছিল। সেখানে সে এক ঘনিষ্ঠের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল। এলাকায় ফিরে আসার পরই সে পরিচিত কয়েকজনের মাধ্যমে বারুদ জোগাড় করে। আবু সামাদকেও সে বারুদ দিতে বলেছিল। কিন্তু সে রাজি না হওয়ায় অন্য জায়গা থেকে সইদুল বারুদ নিয়ে আসে। প্রথমে তার পরিকল্পনা ছিল কোনও অনুষ্ঠানের মধ্যে মন্ত্রী জাকির হোসেনের উপর হামলা চালাবে। কিন্তু সেরকম সুযোগ না আসেনি। পরে এক ঘনিষ্ঠের মাধ্যমে সে জানতে পারে, মন্ত্রী ট্রেনে কলকাতায় যাবেন। তারপরই সে বাইকের ডিকিতে বিস্ফোরক সামগ্রী নিয়ে নিমতিতা স্টেশনের উদ্দেশে রওনা দেয়।
প্রসঙ্গত, ১৭ফেব্রুয়ারি মন্ত্রী নিমতিতা স্টেশনে ট্রেন ধরতে যাওয়ার সময় বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল। সেই ঘটনায় মোট ২৩জন জখম হন। সিআইডি ঘটনার তদন্তে নেমে সইদুলকে ঝাড়খণ্ড থেকে গ্রেপ্তার করে। এনআইএ মঙ্গলবার ঘটনার তদন্তভার নিয়েছে।
মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যে এমন শক্তিশালী বিস্ফোরক তৈরির বিষয়টি জানার পর গোয়েন্দাদের উদ্বেগ বেড়েছে। অফিসারদের ধারনা, তার সঙ্গে জেএমবি জঙ্গিগোষ্ঠীর যোগাযোগ থাকতে পারে। এনআইএর আধিকারিকরা সেই দিকটা খতিয়ে দেখতে চাইছেন। কারণ এত দ্রুত এমন বিস্ফোরক সাধারণত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জঙ্গিরাই তৈরি করে থাকে।