কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
নেতাজির জন্মজয়ন্তী অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিল পর্যটন ও তথ্য মন্ত্রক। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী বক্তৃতা দিতে যাওয়ার সময় ‘ভক্তকুল’ জয় হিন্দ বা জয়তু নেতাজি স্লোগানের পরিবর্তে নাগাড়ে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দেয়। অনুষ্ঠানের গরিমা উপলব্ধি না করে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে শুধুমাত্র রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতেই যে গেরুয়া বাহিনী ‘হল্লা’ পাকিয়েছিল, তা এখন স্পষ্ট। সেদিন প্রতিবাদ জানিয়েও শুধুমাত্র অনুষ্ঠানের গুরুত্বের কথা ভেবে নীরব ছিলেন মমতা। কিন্তু কী হবে তাঁর পাল্টা জবাব, তা জানতে মুখিয়ে ছিল গোটা বাংলা।
পুরশুড়ার সভায় সেই প্রতীক্ষার অবসান হয়েছে। মমতা বলেছেন, ‘বাড়িতে খাওয়ার নেমন্তন্ন করে কেউ যদি আপনাকে থাপ্পড় মারে, কেমন লাগে বলুন তো!’ মনের কষ্টকে জনতার সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার পরে এবার গলার স্বর চড়ালেন—‘কত বড় সাহস! গর্দভ-গদ্দার কয়েকটা। উগ্র-ধর্মান্ধ। প্রধানমন্ত্রীর সামনেই আমাকে ক্রমাগত টিজ করছিল। কিন্তু ওরা (বিজেপি) আমাকে চেনে না। আমাকে বাসন মাজাতে বললে মেজে দেব। কিন্তু চোখ রাঙালে, ছোবল আমি মারবই।’ এবার ফের শান্ত মমতা—আমি রাজনীতিতে বিশ্বাস করি। সেই ছোবল হবে রাজনৈতিকভাবেই । রাজনীতি দিয়েই বদলা হবে। তৃণমূল সুপ্রিমোর কথায়, এটা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর অপমান, বাংলার অপমান। এ অপমান সহ্য করব না, কিছুতেই না। তাঁর অভিযোগ, ওরা (বিজেপি) বারবার বাংলার মনীষীদের অপমান করছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মস্থান নিয়ে বিকৃত তথ্য পরিবেশন করেছে। বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙেছে। বীরসা মুণ্ডার মূর্তির বদলে অন্যকে মালা পরিয়েছে। মমতার কথায়, ‘স্পষ্ট করে বলছি, ওরা ভারতীয় জনতা পার্টি নয়, ভারত জ্বালাও পার্টি। সবকিছু জ্বালিয়ে শেষ করছে। কিন্তু এটা বাংলা! বাংলা কারও কাছে মাথানত করে না। বাংলার সঙ্গে অন্য কারও তুলনা হয় না।’
লোকসভা নির্বাচনে পুরশুড়া বিধানসভায় প্রায় ২৬ হাজার ভোটে পিছিয়ে ছিল জোড়াফুল শিবির। রাজনৈতিক মহলের মতে, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে দীর্ণ সেই পুরশুড়াকে সভাস্থল হিসেবে বেছে নেওয়ার মধ্য দিয়ে বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন মমতা। আবেগ, উচ্ছ্বাস আর বাঁধভাঙা উন্মাদনায় পুরশুড়ার সভাস্থল সেই বিচক্ষণতার তারিফও করেছে। কত ভিড় হয়েছিল সভায়? জবাব একটাই, পৌষের দুপুরে বৃষ্টি হওয়ার কথা নয়। হলে, কালো মাথার জমাট বুনন পার করে বৃষ্টির ফোঁটাকে মাটিতে পড়তে কসরত করতে হতো। সেই জনলহরকে মমতা শুনিয়েছেন—‘হিন্দু, মুসলিম, শিখ, বৌদ্ধ সব মিলিয়ে এই বাংলা। সবাই বাংলার মানুষ। তাদের কথাই শুনে চলব। কিন্তু বহিরাগত, হানাদারদের কোনওভাবেই এখানে অ্যালাও করব না।’
‘নিও নর্মালে’ বাঁকুড়া থেকে শুরু করে সোমবার পর্যন্ত যতগুলি রাজনৈতিক সভা মমতা করেছেন, তাতে মহিলাদের উপস্থিতি উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে। জমায়েত স্থলে মহিলাদের সেই ঢল দেখে আপ্লুত মমতার গলায় আবেগ—‘মা-বোনেদের প্রণাম, সেলাম জানাচ্ছি। কত দূর দূর থেকে আপনারা আপনাদের ঘরের মেয়ের কথা শুনতে এসেছেন। আমার মা নেই, আপনারাই আমার মা। এই মেয়েটাকে দেখে রাখবেন তো?’ বামা কণ্ঠের উত্তাল গর্জন জানান দিল—আমারা সবাই আছি, তোমার সঙ্গে। শান্ত কণ্ঠে মমতার প্রত্যুত্তর—‘আমি আপনাদের পাহারাদার। আমি নেত্রী নই, জনগণের সেবক। বিপদে-আপদে আমাকে পাবেন।’ শাঁখ বাজিয়ে আর উলুধ্বনি দিয়ে ‘ঘরের মেয়েকে’ বরণ করল সেকেন্দারপুরের জমায়েত।