নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: রাজ্যের উৎপাদনের নিরিখে এখান থেকে অন্তত ১ কোটি ৪ লক্ষ টন ধান কেন্দ্রীয় সরকারের কেনা উচিত। বিভিন্ন রাজ্য থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের ধান কেনার পরিসংখ্যান খতিয়ে দেখে এটাই মনে করছে রাজ্য সরকার। কৃষি ও খাদ্য দপ্তর সম্প্রতি বিভিন্ন রাজ্য থেকে ধান ক্রয় সংক্রান্ত তথ্য ও পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের পোর্টালে বিভিন্ন রাজ্যে কত পরিমাণ ধান উৎপাদন হয় ও তার কতটা এফসিআই কিনেছে তা উল্লেখ করা আছে। এই ভিত্তিতে তাঁরা ১ কোটি ৪ লক্ষ টনের হিসেবে পৌঁছেছেন বলে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানান। ২০২০-২১ খরিফ মরশুমে এখনও এফসিআই রাজ্য থেকে ধান কেনা শুরু করেনি বলে খাদ্যমন্ত্রী জানান। যেখানে রাজ্যের উদ্যোগে দু’মাসের মধ্যে ২০ লক্ষ টন ধান কেনা হয়েছে। খাদ্যদপ্তরের হিসেবে, ২০১৯-২০ খরিফ মরশুমে এফসিআই ধান কিনেছে প্রায় ৭৬ হাজার টন। পরিসংখ্যান মন্ত্রকের পোর্টাল বলছে, এফসিআই ২০১৯-২০ খরিফ মরশুমে জুলাইতে রাজ্যে ধান কিনেছে ১৬ লক্ষ টন। রাজ্য খাদ্যদপ্তর অবশ্য এই দাবি মানছে না। খাদ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, সেন্ট্রাল পুলের জন্য কেনা ধানের হিসেব কেন্দ্রীয় সরকার দেখাচ্ছে। কিন্তু এরাজ্যে সেন্ট্রাল পুলের জন্য ধান রাজ্য সরকারই চাষিদের কাছ থেকে কিনে থাকে। সেন্ট্রাল পুলের ধান থেকে যে চাল উৎপাদিত হয়, তা জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পের অধীনে রাজ্যের প্রায় ৬ কোটি রেশন গ্রাহককে সরবরাহ করা হয়। কেন্দ্রীয় পোর্টালে রাজ্যের উদ্যোগে গত খরিফ মরশুমে ৪৯ লক্ষ টন ধান কেনার উল্লেখ রয়েছে। খাদ্যদপ্তরের বক্তব্য, তারা রাজ্য ও সেন্ট্রাল পুলের জন্য সব মিলিয়ে গত মরশুমে প্রায় ৪৯ লক্ষ টন ধান কিনেছে। ওই ধান থেকে উৎপাদিত চাল রেশন গ্রাহক ছাড়াও অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র ও মিড ডে মিলের জন্য সরবরাহ করা হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় পোর্টালের তথ্য অনুযায়ী, গত খরিফ মরশুমে পাঞ্জাবে সারা বছরে উৎপাদিত ১ কোটি ৯২ লক্ষ টনের মধ্যে ১ কোটি ৬২ লক্ষ টন ধান এফসিআই কিনেছে। উত্তরপ্রদেশে ২ কোটি ৩২ লক্ষ টনের মধ্যে ৭১ লক্ষ টন, ওড়িশায় ১ কোটি ১৫ লক্ষ টনের মধ্যে ৭০ লক্ষ টন, অন্ধ্রপ্রদেশে ১ কোটি ২৩ লক্ষ টনের মধ্যে ৮২ লক্ষ টন এফসিআই কিনেছে বলে দেখানো হয়েছে। তেলেঙ্গানায় উৎপাদন ৯৯ লক্ষ টন হলেও এফসিআই তার থেকে বেশি ১ কোটি ১১ লক্ষ টন ধান কিনেছে। যেখানে এফসিআই পোর্টালে পশ্চিমবঙ্গে বছরে ধানের উৎপাদন দেখানো হয়েছে ২ কোটি ৪৩ লক্ষ টন। খাদ্যদপ্তরের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় পোর্টালের তথ্য অনুযায়ী এরাজ্য থেকে এফসিআইয়ের ধান কেনার পরিমাণ যদি ১৬ লক্ষ টন বলে মেনে নেওয়া হয়, তাহলে এটা পরিষ্কার যে অন্য প্রধান উৎপাদক রাজ্যগুলির তুলনায় এখান থেকে অনেক কম ধান কেনা হয়।
পশ্চিমবঙ্গে সরকারি উদ্যোগে ধান কেনার মূল দায়িত্ব রাজ্য সরকারের বলে এফসিআইয়ের পক্ষ থেকে যুক্তি দেওয়া হয়। কিন্তু দেশের সব থেকে বেশি ধান উৎপাদক রাজ্য থেকে এত কম ধান কেন কেনা হবে সেই প্রশ্ন রাজ্য তুলছে। খাদ্যমন্ত্রী বলছেন, রাজ্যের প্রতি কেন্দ্রীয় বৈষম্যর এটি জ্বলন্ত উদাহরণ। এফসিআইকে প্রতি বছর ৬ লক্ষ টন ধান কিনতে বলা হয়। কিন্তু তারা খুবই কম কেনে। এফসিআই বাংলা থেকে বেশি পরিমাণে ধান কিনলে রাজ্যের আরও অনেক চাষি এমএসপির সুরক্ষা পেতেন।