নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: দিন কয়েক আগেই ঝাড়গ্রাম সফরে গিয়ে প্রশাসনিক বৈঠকেই প্রতিশ্রুতিপূর্ণ ইঙ্গিতটি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তাঁর দেওয়া সেই কথা অনুযায়ী তৃণমূল জমানায় রাজ্যে বুনো হাতির হানায় মৃত নিরীহ মানুষের পরিবারের একজন করে সদস্যকে নবান্ন বিশেষ হোমগার্ডের অস্থায়ী চাকরির সুযোগ করে দিচ্ছে। গত প্রায় দশ বছরে এমন হতভাগ্য পরিবারের সংখ্যা নয়-নয় করে প্রায় ৮০০-র কাছাকাছি হবে বলে বনদপ্তর সূত্রের হিসেব। পুজোর ছুটির পরই পরিবারগুলি থেকে কর্মপ্রার্থীদের নামের তালিকা চেয়ে পাঠানো হবে। তারপর দ্রুত হাতে নিয়োগপত্র তুলে দিয়ে তাঁদের কাজে যোগ দিতে বলার পরিকল্পনা রয়েছে দপ্তরের। দীর্ঘ দিনের দাবি মিটিয়ে এতগুলি পরিবারের মুখে হাসি ফোটানোর পিছনে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগই প্রধান কাজ করেছে বলে দপ্তরের অফিসাররা জানিয়েছেন। বনদপ্তর সূত্রের খবর, ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজ্যে বুনো হাতির হানায় উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গ মিলিয়ে মোট ৭৪৯ জন নিহত হয়েছে। এই তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, এর মধ্যে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গে মৃতের সংখ্যা যথাক্রমে ৪২৪ ও ৩২৫। এক গোরুমারা অভয়ারণেই মারা গিয়েছে ১০৫জন। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের বিধি মোতাবেক হাতির হানায় মৃত্যু হলে সংশ্লিষ্ট পরিবার এককালীন মোট ৪ লক্ষ টাকা অনুদান পেয়ে থাকে। কিন্তু দরিদ্র পরিবারগুলির তরফে দীর্ঘ দিন ধরেই নিয়মিত রোজগারের কোনও ব্যবস্থা করার দাবি রয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও এই দাবিতে বারবার সরব হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও এই দাবির কথা পৌঁছে দেয় তারা।
শেষ পর্যন্ত পরিবারগুলির সমস্যার গুরুত্ব বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে আর দেরি করেননি মমতা। পুজোর আগে ঝাড়গ্রামে প্রশাসনিক বৈঠকে তিনি নিজেই জানিয়ে দিয়েছিলেন সরকারের সিদ্ধান্তের কথা। এককালীন আর্থিক সাহায্য ছাড়াও সংশ্লিষ্ট পরিবারের একজন করে সদস্যকে বিশেষ হোমগার্ডের অস্থায়ী চাকরি দেওয়ার ইঙ্গিত দেন তিনি তখন। বনদপ্তর এব্যাপারে অবশ্য তার কয়েকদিন আগে থেকেই কাজে নেমে পড়েছিল। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত পাক্কা ন’বছরে মোট ৭৪৯ জন নিহতের নামের তালিকা তারা তৈরি করেছে এখনও পর্যন্ত। চলতি বছরে কোথায় কতজন হাতির হানায় মারা গিয়েছে তার তালিকা বিভিন্ন রেঞ্জ অফিসের কাছে চাওয়া হয়েছে। তবে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত দেখে এ বছরের সম্পূর্ণ তালিকা তৈরি করা হতে পারে বলে খবর। তবে সব মিলিয়ে চূড়ান্ত তালিকায় আরও অন্তত জনা পঞ্চাশ নিরীহের নাম যুক্ত হতে পারে বলে দপ্তরের আধিকারিকদের ধারণা।