কর্মপ্রার্থীদের কোনও সুখবর আসতে পারে। কর্মক্ষেত্রে পদোন্নতির সূচনা। গুপ্ত শত্রু থেকে সাবধান। নতুন কোনও প্রকল্পের ... বিশদ
এ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন আগামী বছর। কিন্তু বাংলার মন জয়ে ততদিন অপেক্ষা করলেন না মোদি। দেশের ইতিহাসে এই প্রথম কোনও প্রধানমন্ত্রী দুর্গাপুজোর উদ্বোধন এবং আপামর বাঙালির উদ্দেশে শুভেচ্ছা ভাষণ দিলেন। সল্টলেকের পূর্বাঞ্চলীয় সংস্কৃতি কেন্দ্রে (ইজেডসিসি) বিজেপি আয়োজিত দুর্গাপুজোর উদ্বোধন হল রীতিমতো হাই প্রোফাইল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। নদীয়া, উত্তর ২৪ পরগনা, দার্জিলিং, উত্তর দিনাজপুরের মতো রাজ্যের বিভিন্ন জেলার ১০টি পুজো কমিটিকেও ভিডিও মাধ্যমে যুক্ত করা হয়। সকাল থেকে আকাশের মুখ ছিল ভার। ছিটেফোঁটা বৃষ্টির জন্য অনুষ্ঠানে সামান্য বিঘ্ন ঘটছিল। কিন্তু ধুতি-পাঞ্জাবিতে পুরোদস্তুর বাঙালি সাজা বিজেপির দিল্লির নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়, শিবপ্রকাশ, অরবিন্দ মেননদের উৎসাহে ভাটা পড়েনি। ইজেডসিসি প্রেক্ষাগৃহে জায়ান্ট স্ক্রিনে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ শোনেন নেতা-কর্মীরা। তার আগে রাজনৈতিক জল্পনা ও কৌতূহল বেড়ে যায় বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের স্ত্রী ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়ের দলের নৃত্য পরিবেশনায়। অনুষ্ঠান শেষে বাঙালির প্রিয় লুচি আলুর দম সহযোগে ব্যবস্থা ছিল পেট পুজোরও। সংস্কৃতি এবং শিক্ষামনীষাই যে বঙ্গসংস্কৃতির উজ্জ্বল ঐতিহ্য, সেই হোমওয়ার্ক করেই স্ক্রিনের সামনে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। যা তাঁর ভাষণেও স্পষ্ট। নিজের সাম্প্রতিকতম স্লোগান, আত্মনির্ভর ভারতের শিকড় যে বাংলার কাব্যসাহিত্যে বহু আগেই প্রতিষ্ঠিত, সেই স্বীকারোক্তি নিজেই উচ্চারণ করলেন। কখনও ‘মায়ের দেওয়া মোটা কাপড়’, কখনও ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’—বঙ্গসাহিত্যের ধ্রুবপদগুলি শোনা গেল হিন্দি ভাষণের ফাঁকে। বোধনের আবহে সর্বোত্তম মানানসই অনুষঙ্গ, চণ্ডীশ্লোকের বিশ্লেষণ করলেন নারীশক্তির জাগরণ-ব্যাখ্যায়। আর সেই ব্যাখ্যা ধরেই শরৎচন্দ্র অথবা সুভাষচন্দ্র বন্দনার মধ্যেও ভাষণে স্থান করে নিল উজ্জ্বলা গ্যাস যোজনায় বাংলার প্রাপ্তি... ৯০ লক্ষ গ্যাস সংযোগের পরিসংখ্যান। ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে’ কাব্যপংক্তির পরবর্তী পর্বে শোনা গেল, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বাংলা পেয়েছে ৩০ লক্ষ বাড়ির পরিসংখ্যান। দুর্গাপুজো নারীশক্তির প্রকাশ। এই ব্যাখ্যায় তাঁর সরকার বাংলার নারীদের কতটা উপকার করেছে, সেই তথ্যও দিলেন প্রধানমন্ত্রী। আগামী বছর বাংলা দখল যে বিজেপির কাছে কত বড় চ্যালেঞ্জ, তার প্রমাণ মোদির এই শুভেচ্ছা পরিকল্পনা। ৬ বছর হয়ে গিয়েছে তিনি ক্ষমতায় এসেছেন। কিন্তু এই প্রথম তাঁর পক্ষ থেকে এল বাংলার মানুষের জন্য পৃথকভাবে দুর্গাপুজোর শুভেচ্ছাবার্তা। রামমন্দিরের শিল্যান্যাস অনুষ্ঠানের মতোই তসরের পাঞ্জাবি, বাংলায় উচ্চারণ, ঋত্বিক ঘটক অথবা উত্তম-সুচিত্রা—বাঙালির প্রতিটি প্যাশনকে মরিয়া হয়ে ছুঁতে চাইলেন... অবিরত। আর তার মধ্যেই মিশিয়ে দিলেন ভোটের প্রতিশ্রুতি। জানালেন, আগামী দিনে পূর্ব ভারতের হেড কোয়ার্টার হবে কলকাতা। বাংলাই দিশা দেখাবে ভারতকে। আভাস দিলেন, যোগাযোগ ও পরিকাঠামো উন্নয়নে বিশেষ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বাংলার জন্য। তুলনামূলকভাবে এদিন মোদির বাংলা উচ্চারণ কিন্তু ছিল অনেকটাই নিখুঁত। এটা যে দীর্ঘ অনুশীলনের ফল, তা স্পষ্ট। বক্তৃতা শেষে হিন্দি ছেড়ে ফিরলেন বাংলাতেই। বললেন, বাংলা ভাষার মিষ্টত্ব এতটাই যে, উচ্চারণে ঘাটতি থাকলেও বলার মোহ ত্যাগ করতে পারি না। ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। মহাষষ্ঠীর সূচনায় উৎসব রাজ্যে পাওয়া গেল নতুন ইমেজ। বাঙালি-মোদি!