গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
প্রতি বছর এই সময় থেকেই আকাশ-বাতাস মনে করিয়ে দেয় পুজো আসছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। রাস্তার দু’পাশ জুড়ে কাশফুল। কুমোরটুলিতে তৈরি হচ্ছে প্রতিমা। বৃহস্পতিবার মহালয়া। কিন্তু পুজোর এখনও ঢের দেরি। আশ্বিনে মহালয়া, তারপর ৩৫ দিনের অপেক্ষা। কার্তিকে মর্ত্যে আসবেন উমা। ২২ অক্টোবর ষষ্ঠী।
মূলত এক মাসে দু’টি অমাবস্যা পড়লে সেই মাসটিকে মলমাস ধরা হয়। সেই কারণে এবার পুজো একমাস পিছিয়ে আশ্বিনের বদলে কার্তিকে। ১৮-১৯ বছর পর পর আশ্বিন মলমাসের কবলে পড়ে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন পঞ্জিকার জ্যোতিষশাস্ত্রবিদরা। এর আগে ২০০১ সালে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকার মনোজকুমার লাহিড়ি ও সুপর্ণ লাহিড়ি জানিয়েছেন, দুই বছর তিন মাস থেকে দুই বছর নয় মাসের মধ্যে মলমাস হয়। এই পর্যায়ে বছরের যে কোনও মাস মলমাস হতে পারে। ষষ্ঠ মাস হল আশ্বিন। সেই কারণে পর্যায়ক্রমে সেই মাসটিও মল মাসের মধ্যে পড়ে যায়। তা ছাড়া তিথির হ্রাস, বৃদ্ধি রয়েছে।
মলমাসে কোনওরকম পূজাপার্বণ হয় না। সেই কারণে আশ্বিনে দুর্গাপুজো হচ্ছে না। যে সমস্ত কাজকর্ম পরবর্তীতে করার সুযোগ পাওয়া যাবে না, সেগুলিই শুধুমাত্র মলমাসে হয়। পুজো, বিবাহ, গৃহপ্রবেশ মলমাসের পরেও করার সুযোগ রয়েছে। গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা কর্ণধার অরিজিৎ রায়চৌধুরী বলেন, মলমাসে পারোলৌকিক কাজকর্ম, অন্নপ্রাশন হয়ে থাকে। এ বছর মলমাস শেষ হলে শুদ্ধ হিসেবে কার্তিক মাসে মাতৃপক্ষের সূচনা হবে।
তবে জ্যোতিষবিদদের মত, পুজো কার্তিক মাসে হলেও মহালয়ার দিনই তর্পণ করতে হবে। এ বার দেবী দুর্গা দোলায় চড়ে আসছেন। জ্যোতিষবিদরা বলছেন, এর ফল মড়ক। দুর্গার গমন হবে গজে। যার ফল হবে শস্য-শ্যামলা বসুন্ধরা। গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকার প্রধান রাজগণক অচিন্ত্য ভট্টাচার্য বলেন, বর্তমান বছরে শনি, বৃহস্পতি, মঙ্গল ও কেতুর দৃষ্টি এবং যোগ থাকায় ভয়াবহ পরিস্থিতির উদ্রেক ঘটেছে। যেটা ২০০১ সালে হয়নি। বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকার ব্যবস্থাপকমণ্ডলীর রাশিগত ফল বিচারক জয়ন্ত চক্রবর্তী বলেন, বাংলা সালের ১৪২৭-এর শুরু থেকেই পশ্চিমবঙ্গে করোনার প্রাদুর্ভাব মারাত্মক আকার নিয়েছে। উত্তরোত্তর তা বৃদ্ধি পেয়েছে। উম-পুনেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
সাধারণত মহালয়া থেকেই পুজোর আনন্দ-উন্মাদনার ছবিটা ধরা পড়ে। একাধিক পুজো মণ্ডপে মহালয়ার দিনই কুমোরটুলি থেকে প্রতিমা যায়। তবে এবারের পরিস্থিতি আলাদা। কুমোরটুলি মৃৎশিল্পী সংস্কৃতি সমিতির বাবু পালের বক্তব্য, ‘একাধিক পুজা কমিটি এখনও বাজেট নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। ফলে মহালয়ার পর বায়না আসবে বলে আমরা আশাবাদী।’
বিগত বছরের ছবি বলছে, দ্বিতীয়া-তৃতীয়া থেকেই উদ্বোধনের পালা শুরু হয়ে যায়। চতুর্থী থেকে রাস্তায় মানুষের ঢল নামে। কিন্তু এ বার মহালয়ার পর একমাসের ব্যবধান। তা ছাড়া নিউ নর্মালে এবার সবকিছুই কেমন বেসুরো। গা ঘেঁষে মণ্ডপের লাইনে দাঁড়ানো, ভিড়ে ঠেলাঠেলি করে একটিবার মায়ের দর্শন, সবেতেই বাধ সাধছে করোনার বিধি-নিষেধ। মুখে মাস্ক, দূরত্ব বজায় রাখাটাই এখন প্রধান শর্ত।