বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
পাতাল-ভ্রমণে অন্যতম শর্ত ছিল আঁটসাঁট স্বাস্থ্যবিধি। তাতে যে যাত্রী সংখ্যা কমবে, এটা প্রত্যাশিতই ছিল। তা বলে এত কম যাত্রী? আশাই করেনি মেট্রো কর্তৃপক্ষ! সোমবার সকাল আটটা। নোয়াপাড়া স্টেশনে চাকা গড়াল মেট্রোর। গন্তব্য কবি সুভাষ। নির্দিষ্ট সময় অন্তর একটি করে ট্রেন। রাত ৮টা পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন আপ-ডাউন
পরিষেবা। যাত্রী সংখ্যা মাত্র ২০ হাজার! আর ইস্ট-ওয়েস্ট
মেট্রোয় চড়লেন মাত্র ৮৩ জন! অথচ তথ্য বলছে, করোনা পূর্ববর্তী সময়ে দৈনিক যাত্রী সংখ্যা ছিল সাড়ে সাত লক্ষ। প্রতিটি ট্রেনেই
যাত্রী উঠতেন দু’ হাজারেরও বেশি। করোনা আবহে সেই সংখ্যা ৪০০’তে বেঁধে দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সোমবার অধিকাংশ সময়ই টার্গেট ছুঁতে পারেনি কলকাতার গর্ব। ই-পাস বুকিং করেও
আসেননি বহু যাত্রী। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, যাত্রী সংখ্যা ৪০০ ছুঁলেই অনলাইনে বুকিং বন্ধ হয়ে যাবে। মেট্রো সূত্রের খবর, এদিন বেশির ভাগ সময়ই অ্যাপে পূর্ণ যাত্রী সংখ্যা দেখিয়ে গিয়েছে। অথচ, বাস্তবে যাত্রীদের দেখা মেলেনি স্টেশনে। অগত্যা খালি আসন নিয়েই ছুটতে হয়েছে পাতালযানকে।
কিন্তু কেন এই ই-পাস বুকিং ও যাত্রীর এই ফারাক? কর্তৃপক্ষের যুক্তি, স্রেফ কৌতুহলবশত অসংখ্য মানুষ ই-পাস বুক করেছিলেন। ভয়-ভীতিতে হোক কিংবা অন্য কোনও কারণে হোক, নির্দিষ্ট সময়ে নির্ধারিত স্টেশনেই আসেননি তাঁরা। তাই ফলস বুকিংয়ের গেরোয় বোকা বনে গিয়েছেন মেট্রো কর্তারা। বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন মেট্রো রেলের জেনারেল ম্যানেজার মনোজ যোশিও। তাঁর দাবি, প্রথম দিন বলে হয়তো বহু মানুষ কৌতূহল মেটাতে ই-পাস বুক করেছিলেন। কিন্তু তাঁদের বেশিরভাগ যাত্রীই মেট্রো চড়েননি। তাঁর কথায়, ‘নয়া নিয়মে অভ্যস্ত হতে কিছুদিন সময় লাগবে। ধীরে ধীরে এই সমস্যা কেটেও যাবে।’ আশাবাদী তিনি। তবে একটা আশঙ্কার কথাও শুনিয়েছেন জিএম। ই-পাস বুক করেও ইচ্ছাকৃত ভাবে কোনও যাত্রী পরিষেবা না নিলে, কিছু করার নেই কর্তৃপক্ষের। আবার ওই সময়ে জরুরি প্রয়োজনে কোনও যাত্রী মেট্রোয় চড়তে চাইলেও, প্রযুক্তির গেরোয় সেই সুযোগ তিনি পাবেন না। ই-পাসের এই নেতিবাচক দিকগুলি ভাবাচ্ছে মেট্রো কর্তাদের।
সোমবার সকাল ১০টা ৫৮ মিনিট। গীতাঞ্জলি স্টেশনে ১০ টা থেকে ১১টার স্লটে বুক করা ই-পাস দেখাতে ট্রেনে ওঠার ছাড়পত্র মিলল। স্যানিটাইজারে হাত ভিজিয়ে চলমান সিঁড়িতে সোজা প্ল্যার্টফর্মে। খাঁ খাঁ করছে প্ল্যাটফর্ম। ট্রেন ঢুকল। যাত্রী সংখ্যা সাকুল্যে ৫০ জন। সেটাই কপালে ভাঁজ ফেলেছে মেট্রো কর্তৃপক্ষের। কলকাতার মেট্রো এমনিতেই লোকসানে চলে। সংস্থার ১০০ টাকা আয় করতে ২৫০ টাকা খরচ হয়। গত আর্থিক বছরে টিকিট বিক্রি করে মেট্রোর আয় হয়েছিল ২২০ কোটি টাকা। সেখানে খরচ ছুঁয়েছিল সাড়ে ৫০০ কোটি টাকার বেশি। যাত্রী সংখ্যার এই করুণ দশা চলতে থাকলে চরম লোকসান করে পরিষেবা কতদিন চালু রাখা যাবে, তা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। যোশি অবশ্য বলেছেন, ‘এটা ঠিক, আমরা লোকসানে চলছি। করোনার জেরে সেই বহর আরও বাড়বে। কিন্তু মেট্রো একটি জরুরি পরিষেবা। তাই আনুষঙ্গিক খরচ যতটা কমিয়ে কাজ চালানো যায় তার চেষ্টা করছি।’