বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
ঘটনা ২: মেদিনীপুরের রোগী। নেজোফ্যারিঙ্গাল ক্যান্সার। হু হু করে বাড়তে থাকে। এনআরএস-এ এসেছিলেন তিন মাস আগে। তখন অত্যাধুনিক লিনিয়ার অ্যাক্সিলারেটর যন্ত্রের মাধ্যমে রেডিয়েশন দেওয়ার সমস্ত পরিকল্পনা হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু চিকিৎসার ধারাবাহিকতা রাখতে পারেননি রোগী। আর্থিক কারণে বাড়ি ছেড়ে বেরতেও পারেননি। এলেন এই সেপ্টেম্বরে। এখন ফের শূন্য থেকে শুরু করতে হবে রেডিয়েশনের পরিকল্পনা। এর মধ্যে ক্যান্সার কতটা বাড়তে পারে—ভাবতেই শিউরে উঠছেন ডাক্তারবাবুরা।
ঘটনা ৩: মধ্যবয়স্ক যুবক। ঠাকুরপুকুরের একটি ক্যান্সার চিকিৎসাকেন্দ্রে মলদ্বারের ক্যান্সার ধরা পড়েছিল মার্চে। অনবরত রক্তপাত হত তখন। তখন ক্যান্সার ছিল দ্বিতীয় পর্যায়ের—স্টেজ ২। তারপর থেকে আর আসেননি। ফের এলেন এই ক’দিন আগে। পরীক্ষা করে দেখা গেল, ক্যান্সার এখন বেড়ে স্টেজ ৪ পর্যায়ের। এখন অপারেশনও করা যাবে। শুরু করতে হবে কেমোথেরাপি। তাতেও ফল খুব ভালো হওয়ার আশা কম। কলকাতায় প্রথম করোনা সংক্রমণের ঘটনা ঘটে ১৭ মার্চ। লকডাউন শুরু হয়েছিল ২৪ মার্চ থেকে। তারপর ছ’মাস কাটতে চলেছে। এই ছ’মাসে কী অবস্থায় পড়তে হয়েছে সুগার-প্রেসার-ক্যান্সার রোগীদের, এই হাল হকিকত জানার চেষ্টা করতেই উঠে আসছে এমনই সব চাঞ্চল্যকর তথ্য।
এন আর এস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রেডিওথেরাপি বিভাগের প্রধান ডাঃ শ্রীকৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, লকডাউন পর্বে রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে কম ছিল এপ্রিলে। তারপর থেকে ধীরে ধীরে বেড়ে এখন প্রায় আগের ৭০-৮০ শতাংশ রোগীই আসা শুরু করেছেন। কিন্তু, এঁদের অনেকেই কয়েক মাস পর আসছেন। আমরাও দেখে বুঝতে পারছি, করোনা পরিস্থিতির জন্য কী মারাত্মক ক্ষতি হয়ে গিয়েছে ভিতরে ভিতরে। রোগীদের অনুরোধ, ক্যান্সার ফেলে রাখবেন না। কষ্ট করে হলেও আসার চেষ্টা করুন। চিকিৎসায় ধারাবাহিকতা না থাকলে কিন্তু অল্পদিনেই স্বমূর্তি দেখাতে শুরু করে এই রোগ। বিশিষ্ট ক্যান্সার চিকিৎসক ডাঃ অর্ণব গুপ্ত বলেন, অন্তত ২০ থেকে ৩০ শতাংশ রোগী চার-পাঁচমাস বা তারও পর এলেন। ফলে কারও ক্ষেত্রে রোগ স্টেজ ২ থেকে তিনে চলে গিয়েছে, আবার কারও ক্ষেত্রে চারের একেবারে অ্যাডভান্স অবস্থায়। রোগীদের অনুরোধ, নিরাপত্তাবিধি মেনে আসার চেষ্টা করুন। ক্যান্সার-এর সময়ে চিকিৎসা না হলে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যায়।
চিকিৎসকরা জানালেন, বিনা চিকিৎসায় বা চিকিৎসায় অবহেলা করলে যে ক’টি ক্যান্সার ব্যাপক ছড়াতে থাকে এবং অন্যান্য অঙ্গকে আক্রান্ত করে, তার মধ্যে সর্বাগ্রে আসে ফুসফুসের ক্যান্সার। প্রায় এরই মতো মারাত্মক হল লিম্ফনোডের ক্যান্সার। অন্যদিকে নাকের পিছনদিকের নেজোফ্যারিঙ্গিয়াল ক্যান্সার যেমনই দ্রুত চিকিৎসায় সাড়া দেয়, তেমনই চিকিৎসা না করিয়ে ফেলে রাখলে ছড়াতে থাকে। সামগ্রিকভাবে যে কোনও ক্যান্সারই ফেলে রাখলে সে মোটেই আগ্রাসী আকার থেকে বিরত থাকে না।