কর্মে অগ্রগতি ও নতুন কাজের বরাত প্রাপ্তি। আইটি কর্মীদের শুভ। মানসিক চঞ্চলতার জন্য বিদ্যাচর্চায় বাধা। ... বিশদ
ছায়া নস্কর, ঢাকুরিয়া ব্রিজ সংলগ্ন একটি বস্তিতে থাকতেন। পরিচারিকা হিসেবে কাজের জন্য তাঁকে বাড়িতে নিয়ে আসেন প্রণব মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রী। সেটা কত সালে, তা মনে করতে পারছেন না সত্তরোর্ধ্ব ছায়াদেবী। মুখোপাধ্যায় পরিবারে এখন তিনিও একজন সদস্য হয়ে উঠেছেন। সঙ্গে তাঁর ছেলে-মেয়েও এই পরিবারের বন্ধনে আবদ্ধ। প্রণববাবুর মাথায় অস্ত্রোপচার হওয়ার পর থেকে তাঁদের দুশ্চিন্তা কাটছে না। দিনে একাধিকবার দিল্লিতে ফোন করে খবর নিচ্ছেন। প্রণববাবুর কথা উঠতেই শাড়ির আঁচল টেনে চোখের জল মুছলেন ছায়াদেবী। বললেন, আমি দাদা বলে ডাকি। আমার ছেলে-মেয়েদের কাছে উনি মামাবাবু। আমাদের অভিভাবক উনি। আমরা মনেপ্রাণে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছি, তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন। তারপর এই বাড়িতে এসে বিশ্রাম নিন। ঢাকুরিয়ায় প্রণববাবুর ফ্ল্যাটে শোওয়ার ঘরে রয়েছে ঠাকুরের সিংহাসন। এই বাড়িতে এলে সেখানেই নিষ্ঠার সঙ্গে পূজার্চনা করেন দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি। দুধ, গঙ্গাজল, চন্দন বাটা, তুলসি পাতা, বাতাসা, নৈবেদ্য থাকে পুজোর উপকরণে। বুধবার দুপুরে ঢাকুরিয়ার সেই ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখা গেল, ঠাকুর ঘরে বসেই প্রণববাবুর মঙ্গল কামনায় প্রার্থনা করছেন ছায়াদেবী এবং তাঁর মেয়ে শ্যামলী ও ছেলে শিবু। তাঁরা জানালেন, গত বছরের শেষদিকে প্রণববাবু এই বাড়িতে এসেছিলেন। করোনা পরিস্থিতি না থাকলে কিছুদিনের মধ্যেই হয়ত আসতেন, এমন আশা ছিল। এরমধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়লেন। আর বাড়িতে এলেই গল্প-আড্ডায় মেতে উঠতেন। লোকজনের সঙ্গে দেখা করার পাশাপাশি সময় পেলেই বইয়ের পাতায় চোখ বোলাতেন। সেসব করতেই পেরিয়ে যেত রাত প্রায় ১টা। এর সঙ্গে প্রণববাবুর খাওয়ার মুহূর্তগুলির কথাও উঠে এসেছে ছায়াদেবীর বক্তব্যে। বললেন, কাঁটা থাকায় মাছ খুব একটা পছন্দ করেন না দাদা। সব্জিটাই বেশি ভালোবাসেন। নারকেল দিয়ে মোচার ঘন্ট, রসুন-কালোজিরে দিয়ে কলমি শাক ভাজা, নিরামিষ স্যুপ, পাঁঠার মাংস দাদার পছন্দের তালিকায় রয়েছে। আর মাছ খেলে কাতলা ভাজা। দিনে রুটি, আর রাতের মেনুতে ভাতই তাঁর পছন্দ।
বাড়ির সদস্যদের মতো প্রণববাবুর ঢাকুরিয়ার বাড়ির আশপাশের মানুষজন মঙ্গল কামনায় প্রার্থনা করছেন। একটা বাড়ি পরেই রয়েছে শিবমন্দির। বাড়িতে এলেই ওই মন্দিরে গিয়ে পুজো দেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি। প্রতিবেশী বৃহস্পতি হালদারের কথায়, মামাবাবুর মঙ্গলকামনায় ওই মন্দিরে প্রতিদিন পুজো দিচ্ছি। বস্তিবাসীদের জন্য তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। এত মানুষের প্রার্থনাই তাঁকে সুস্থ করে তুলবে বলে তাঁর বিশ্বাস। -নিজস্ব চিত্র