উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে সাফল্য আসবে। হিসেব করে চললে তেমন আর্থিক সমস্যায় পড়তে হবে না। ব্যবসায় উন্নতি ... বিশদ
অর্থাৎ, বাড়তি খরচের বোঝা কমিয়েই জোর দেওয়া হচ্ছে উন্নয়নে। সে ক্ষেত্রে ব্যয় সংকোচনের দীর্ঘমেয়াদি রাস্তায় হাঁটছে সরকার। যেমন, নতুন কোনও প্রকল্প গ্রহণ নয়। মন্ত্রী-আমলাদের অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ নয়। সরকারি বৈঠকে বিশাল আয়োজন নয়। নিতান্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া হাত দেওয়া যাবে না কোষাগারে। বেঁধে দেওয়া হয়েছে প্রতিটি দপ্তরের নির্দিষ্ট খরচের পরিমাণও। একমাত্র নির্মাণকাজের সঙ্গে যুক্ত ছাড়া ১০ লক্ষ টাকার বেশি খরচ করতে পারবে না কোনও দপ্তর। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে এই কৃচ্ছসাধন। তারপর অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা। প্রয়োজনে দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে ব্যয় সংকোচনের আরও একাধিক পদক্ষেপ গৃহীত হতে পারে। এমনটাই নবান্ন সূত্রে খবর। তবে কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, খাদ্যসাথী, স্বাস্থ্যসাথীর মতো জনস্বার্থমুখী প্রকল্পগুলি যেমন চলছে, তেমনই চলবে। সীমিত ক্ষমতার মধ্যে থেকে কলকাতা ও পুরসভাগুলিকে পানীয় জল সরবরাহ, বনসৃজন, জল সংরক্ষণ, কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সহ বেশ কিছু জরুরি পরিষেবামূলক কাজ সচল রাখতে নির্দেশ দিয়েছে পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তর।
কোভিড নিয়ন্ত্রণে দেশজুড়ে লকডাউন চলেছে প্রায় আড়াই মাস। তাতেই পুরোপুরি থমকে যায় অর্থনীতির চাকা। টান পড়ে রাজ্যের কোষাগারে। এর মধ্যেই কফিনে শেষ পেরেকটি পুঁতে দেয় উম-পুনের তাণ্ডব। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দূরদর্শী চিন্তাভাবনায় কোষাগারের হাল কিছুটা ফিরলেও ব্যয়ের সঙ্গে সঙ্গতি রাখতে পারছে না অর্থদপ্তর। মুখ্যমন্ত্রী নিজেও বারবার বলছেন, ‘নো আর্নিং, ওনলি বার্নিং।’ অর্থাৎ, আয় নেই, খরচ বাড়ছেই।
এখন এই খরচে যতটা সম্ভব লাগাম পরিয়ে বেসামাল অর্থনীতিকে স্বাভাবিক ছন্দে ফেরাতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে নবান্ন। সমান্তরালভাবে উন্নয়নের গতিকেও ধরে রাখতে চায় রাজ্য। এর আগে ব্যয় সংকোচনের একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে নির্দেশিকা জারি করেছিল রাজ্য। সেই নির্দেশিকার মেয়াদ বাড়িয়ে করা হল ৩০ সেপ্টেম্বর। তাতে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে—এক, নতুন কোনও প্রকল্প গ্রহণ করা হবে না। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া পুনর্গঠন কিংবা মেরামতের কাজ নয়। জনস্বার্থে নিতান্ত কোনও প্রকল্প গ্রহণ করতে হলে অথবা চালু প্রকল্পে কাজ করতে হলে অর্থদপ্তরের আগাম অনুমোদন নিতে হবে। দুই, অফিসের গাড়ি, কম্পিউটার, আসবাবপত্র, ওয়াটারকুলার, টিভি, এসি কিংবা অফিসের বাড়তি সরঞ্জাম কেনা যাবে না। অতিরিক্ত গাড়িও ভাড়া করা যাবে না। তবে অর্থদপ্তরের অনুমতি সাপেক্ষ সরিকারি প্রতিষ্ঠান (স্কুল, কলেজ, লাইব্রেরি, হাসপাতাল)-এ জরুরি প্রয়োজনে মেরামত করা যেতে পারে। তিন, সরকারি ভবন, কার্যালয়ের সংস্কার বা সৌন্দর্যায়ন করা যাবে না। চার, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় কোনও বৈঠক হলে সেখানে খাবার-দাবার ও টিফিনের খরচ একেবারে কমিয়ে আনতে হবে। পাঁচ, মন্ত্রী-আমলাদের বিমানে যাতায়াতে রাশ টানতে হবে। বিশেষ প্রয়োজনে বিমান চড়তে হলে ইকনমি ক্লাসেই ভ্রমণ করতে হবে। এগজিকিউটিভ বা বিজনেস ক্লাসে যাওয়া যাবে না। ছয়, আইএএস, আইপিএস এবং আইএফএস’দের হাউস বিল্ডিং অ্যাডভান্স. দেওয়া হবে না। সাত, চিকিৎসা, শিক্ষা এবং বিয়ে ছাড়া জিপিএফ থেকে টাকা তোলা যাবে না। আট, গাড়ি-বাইক, কম্পিউটার কেনার ক্ষেত্রে সরকারি কর্মীরা অগ্রিম টাকা পাবেন না।
তবে, জনস্বার্থ সম্পর্কিত প্রকল্পগুলিতে কোনও প্রকার কাটছাঁট করছে না নবান্ন। কোভিড মহামারীর মোকবিলায় প্রয়োজনীয় সমস্ত কাজই চলবে। খরচের ক্ষেত্রে সেভাবে লাগাম পড়ছে না। ছেদ পড়ছে না কেন্দ্র-রাজ্য যৌথ প্রকল্পের কাজে। ব্যয় সংকোচের নির্দেশিকার বাইরে থাকছে সরকারি কর্মীদের মাস মাইনে এবং পেনশন, সামাজিক সুরক্ষা, বাংলা ফসল বিমা যোজনার মতো প্রকল্পগুলি।