বিতর্ক-বিবাদ এড়িয়ে চলা প্রয়োজন। প্রেম-পরিণয়ে মানসিক স্থিরতা নষ্ট। নানা উপায়ে অর্থোপার্জনের সুযোগ।প্রতিকার: অন্ধ ব্যক্তিকে সাদা ... বিশদ
বিদ্যাসাগর সেতুতে সেই ‘ল্যান্ড’-ই খুঁজে পেয়েছিলেন প্রেমিক-প্রেমিকা, পর্যটক থেকে শুরু করে ফটোগ্রাফাররা। গাড়ি-বাইক থামিয়ে তাঁদের সেলফি তোলার হিড়িক। আকাশ-গঙ্গার সঙ্গে দুই প্রাচীন শহরকে লেন্সে সংযুক্ত করার আপ্রাণ চেষ্টা। স্মার্টফোনে কিংবা ক্যামেরায় ক্লিকের পর ক্লিক। সবই চলত মানা না মানার ঔদ্ধত্যে। আঠাশ বছরের ইতিহাসে কঠোর শাসন তেমন ছিল না। খুব বড়জোড় হলে ছবি তোলার ছবি চোখে পড়লে একটু ধমক দিয়ে সরে পড়তেন নিরাপত্তারক্ষীরা! ফলে সেতুর বেশ কয়েকটি স্থানই হয়ে উঠেছিল ‘সেলফি জোন’। এবং তা অবশ্যই অলিখিত। এবার ভিভিআইপিদের নিরাপত্তার খাতিরে ‘ইমোশন অব দ্য ল্যান্ড’-এ ঝুলছে নিষেধাজ্ঞার কড়া বুলি। লাল প্ল্যাকার্ডে সাদা অক্ষরে সাফ নির্দেশ, ‘এখানে কোনও ফটোগ্রাফি নয়’। কোথাও আবার জ্বলজ্বল করছে ‘নো স্টপিং’, ‘নো স্ট্যান্ডিং’-এর বোর্ড।
হাওড়া ব্রিজে এমন নিষেধাজ্ঞার একটা ঐতিহাসিক ভিত্তি ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে। সালটা ১৯৪৩। জাপানের বোমারু বিমানের টার্গেট তখন কলকাতা। প্রায়দিনই বোমা পড়ছে। তাদের প্রযুক্তি-কৌশলে অভিনব সৃষ্টি বোমার আঘাতে ধ্বংস হয়ে যাক, তা চাননি ব্রিটিশরা। ফলে ওই বছরই হাওড়া ব্রিজ (রবীন্দ্র সেতু)-এর দুই প্রান্তে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় ছবি তোলার নিষেধাজ্ঞা বোর্ড। এবং নির্দেশ মানাতে কঠোর পদক্ষেপও গ্রহণ করে ব্রিটিশ সরকার। ইতিহাসের উঠোনে এমন তথ্যও উঁকি মারছে, বোমারু বিমানের লক্ষ্য আড়াল করতে হাওড়া ব্রিজের উপর রাতে আলো জ্বালানো বন্ধ রেখেছিলেন ব্রিটিশরা। সেই থেকেই হাওড়া ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে সাধারণের ছবি তোলায় নিষেধাজ্ঞা বলবৎ ছিল। বিশেষ অনুমতি নিয়ে ছবি তুলতে হতো। ২০১৮ সালে সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ভাবনাচিন্তা করেছিল কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু দ্বিতীয় হুগলি সেতুতে ছবি তোলার ক্ষেত্রে নতুন করে কেন এত কড়াকড়ি? হুগলি রিভার ব্রিজ কমিশনের তরফে কস্তুরী সেনগুপ্ত অবশ্য বলেছেন, ‘নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত কোনও বোর্ডই আমাদের নয়।’ সূত্রের খবর, ভিভিআইপিদের নিরাপত্তার কারণেই এমন বোর্ড ঝুলিয়েছে পুলিস। হুগলি ব্রিজের পরই নবান্ন। রাজ্যের মন্ত্রী-আমলারা প্রতিনিয়ত যাতায়াত করেন এই সেতুর উপর দিয়ে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরাও নবান্নে আসেন একই রুটে। তাঁদের নিরাপত্তা আঁটসাঁট করতেই ছবি তোলায় মানা।
হাওড়া ব্রিজের উপর চাপ কমাতে গড়ে তোলা হয় দ্বিতীয় হুগলি সেতু। ১৯৭২ সালে নির্মাণ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। তারও সাত বছর পর শুরু হয় নির্মাণকাজ। ১৯৯২ সালের ১০ অক্টোবর। যানবাহন চলাচলে খুলে দেওয়া হয় পূর্ব ভারতের এই বৃহত্তম সেতু। ‘থ্রি লেন’ বিশিষ্ট এই সেতুর দু’দিকেই রয়েছে ১.২ মিটার চওড়া ফুটপাত। সেখানে দাঁড়িয়ে গঙ্গাবক্ষের ‘সিনিক বিউটি’ উপভোগ করতেন বাইক কিংবা গাড়ির আরোহীরা। রোমান্টিক মুহূর্তের সেলফিও তুলতেন অনেকেই। সেতুতে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় অথবা সূর্যাস্তের ছবি তোলাও নেশা ছিল দেশ-বিদেশের পর্যটকদের। ছবি তোলার এই আবেগ-অনুভূতি বাধাপ্রাপ্ত হওয়ায় স্বভাবতই খুশি নন সেলফি-প্রেমিক কিংবা পর্যটকরা। বৃহস্পতিবার সেতুতে ওঠার মুখে এমনই এক বাইক আরোহী বলছিলেন, ‘বিদ্যাসাগর সেতুতে দাঁড়িয়ে গঙ্গাবঙ্গে গোধূলি লগ্নের দৃশ্য দেখার লোভ সামলানো খুব কঠিন। এত বেশি কড়াকাড়ি না হলেই ভালো হত।’
দ্বিতীয় হুগলি সেতুতে ছবি তোলা নিষেধের বোর্ড। -নিজস্ব চিত্র